ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোপায় ১২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ৯ জুলাই ২০১৯

 কোপায় ১২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল

জাহিদুল আলম জয় ॥ ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়াম ব্রাজিলের ফুটবলের প্রায় সব সাফল্যের সাক্ষী। এখান থেকেই জন্ম হয়েছে জগদিখ্যাত অনেক ফুটবলারের। সেই মারাকানাতেই আরেকবার জেগে উঠেছে বিখ্যাত সাম্বা ছন্দ। হারিয়ে যেতে যাওয়া নান্দনিক ফুটবলের পরশ বেশ খানিকটা পাওয়া গেছে। তাও আবার দেশটির বর্তমান সময়ের সেরা সুপারস্টার নেইমারকে ছাড়াই। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা মতোই কোপা আমেরিকার ৪৬তম আসরের শিরোপা জয় করেছে স্বাগতিক ব্রাজিল। জেসুস, কুটিনহো, আলভেজদের শৈল্পিক ছন্দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি গুয়েরেরো, গুয়েভা, আবরামরা। রবিবার রাতে রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে পেরুকে অনায়াসেই ৩-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। বিজয়ী দলের হয়ে গোলগুলো করেন এভারটন, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও রিচারলিসন। পেরুর একমাত্র সান্ত¦নার গোলদাতা অধিনায়ক পাওলো গুয়েরেরো। এর ফলে ২০০৭ সালের পর অর্থাৎ এক যুগ পর কোপা আমেরিকার শিরোপা পুনরুদ্ধার করল রেকর্ড সর্বোচ্চ পঁাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এটি আসরে ব্রাজিলের নবম শিরোপা। এর ফলে ২০১৩ সালে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জয়ের পর বড় কোন ট্রফি জিতল পেলের দেশ। ছয় বছর আগে এই মারাকানাতেই তখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বিখ্যাত হলুদ জার্সিধারীরা। ওই আসরে নেইমার চোখ ধাঁধানো পারফর্ম্যান্স প্রদর্শন করে টুর্নামেন্ট সেরা হলেও এবার ইনজুরির কারণে কোপাজয়ী দলে খেলতে পারেননি। ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও ছিল ব্রাজিলের জয়জয়কার। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে দলীয় সব পুরস্কারই জিতেছে তারা। কোপার এবারের আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ব্রাজিল অধিনায়ক দানি আলভেজ। ২০০৭ সালেও দেশের হয়ে কোপা জিতেছিলেন পিএসজির এই ডিফেন্ডার। এই ট্রফি জয়ের পথে আরেকটি কীর্তি গড়েছেন তারকা এই রাইটব্যাক। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৪০টি শিরোপা জয়ের বিরল রেকর্ড গড়েছেন। জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে অনন্য এই অর্জন আলভেজের। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় ও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন এভারটন। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে একটি গোল করার পাশাপাশি একটি পেনাল্টিও আদায় করেন তিনি। ফলে গোল্ডেন বুট এ্যাওয়ার্ড উঠেছে এভারটনের হাতে। টুর্নামেন্টে তিন গোল করায় এ পুরস্কার এসেছে তার ঝুলিতে। এভারটনের সমান তিন গোল করেন পেরুর পাওলো গুয়েররোও। কিন্তু গোলে এ্যাসিস্ট করায় এগিয়ে যান ব্রাজিলিয়ান তারকা। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস ট্রফিও জিতেছেন ব্রাজিলের এ্যালিসন বেকার। আর টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল দলের পুরস্কার ফিফা ফেয়ার প্লে এ্যাওয়ার্ডও জিতে নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দল। দীর্ঘ ছয় বছর পর বড় কোন শিরোপা জেতার পর ব্রাজিল দলের ফুটবলার ও ভক্ত-সমর্থকরা বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এই উৎসব থেকে বাদ যাননি দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। ফাইনাল ম্যাচটি তিনি মাঠে বসেই উপভোগ করেন। আর শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই তিনি সোজা মাঠে নেমে ফুটবলারদের সঙ্গে উদযাপনে মাতেন। প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো অবশ্য একা নন। ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য। পুরো ম্যাচে দাপটের সঙ্গে খেলা ব্রাজিল প্রথম গোল পায় ম্যাচের ১৫ মিনিটে। জেসুসের একক দক্ষতায় গোলটি পায় স্বাগতিকরা। দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো এভারটনের দিকে বল বাড়িয়ে দেন জেসুস। চলতি বলে জাল খুঁজে নিতে ভুল করেননি ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এভারটন। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান কুয়েভার ক্রস ডি বক্সের মধ্যে থিয়াগো সিলভার হাতে লাগলে চিলির রেফারি রবার্তো টবার ভারগাস পেনাল্টির নির্দেশ দেন। স্পট কিক থেকে পেরুর হয়ে সমতা ফেরান অধিনায়ক গুয়েরেরো। পরের মিনিটেই আরেকবার এগিয়ে যায় ব্রাজিল। আর্থারের কাছ থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে অসাধারণ দক্ষতায় গোল করেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা জেসুস। বিরতির পর ৭০ মিনিটে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ফলে শেষ ২০ মিনিট স্বাগতিকদের খেলতে হয় ১০ জন নিয়ে। এরপরও অবশ্য পেরু তেমন আতঙ্ক ছড়াতে পারেনি ব্রাজিলের রক্ষণে। উল্টো ম্যাচের শেষ মিনিটে রিচারলিসন স্পট কিক থেকে গোল করে ব্রাজিলের জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত ব্রাজিল অধিনায়ক দানি আলভেজ বলেন, এটা সত্যিই বিশেষ এক শিরোপা। কারণ একসঙ্গে আমরা সবাই মিলে কিছু একটা করে দেখাতে পেরেছি। পেরুর মিডফিল্ডার এডিনসন ফ্লোরেস বলেন, এটা এমন একটি ম্যাচ যেখানে ব্রাজিল আমাদের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নিয়েছে। তাদের অভিনন্দন।
×