মোঃ মামুন রশীদ ॥ কোন বোলারই তাকে থামাতে পারছেন না নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগে। তার গন্তব্য হয়ে গেছে সেঞ্চুরি হাঁকানো! তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছানো যেন ছেলেখেলায় পরিণত করেছেন। এই বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন যার মধ্যে সর্বশেষ তিন ম্যাচেই আছে টানা শতক। রোহিত শর্মা এখন নিশ্চিতভাবেই যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য অন্যতম মাথাব্যথা। আজ সেমিফাইনালে তাই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের জন্য দুরন্ত, দুর্বার রোহিতের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে। ক্যারিয়ারে ফর্মের সবচেয়ে তুঙ্গে থাকা এ ডানহাতি ওপেনারের সামনে অনেক রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে। তাই আজও তিনি জ্বলে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক। এদিক থেকে ভারতীয় বোলারদের জন্য শুধু পরিকল্পনা কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে ঘিরেই। এ বিশ্বকাপে গত আসরের রানার্সআপদের হয়ে ব্যাট হাতে শুধু উইলিয়ামসনই ধারাবাহিকভাবে বড় রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন। তাই ভারত-নিউজিল্যান্ড সেমিতে আজ মূলত সবার দৃষ্টি থাকবে রোহিত-উইলিয়ামসনের ব্যাটের দিকে। একটি ক্ষেত্রে উভয়ের মিল হচ্ছে, বিশ্বকাপ মঞ্চে এই প্রথম পরস্পরের বিপক্ষে নামবেন দুই ব্যাটসম্যান।
ইতোমধ্যেই রোহিত চলতি বিশ্বকাপে অনেক রেকর্ড গড়েছেন। বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৬ সেঞ্চুরির রেকর্ডে এখন রোহিত-শচীন এক কাতারে। গতবার নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ১টি আর এ বিশ্বকাপে ৫টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। এবার এক আসরে সর্বাধিক রানের দিক থেকেও ভারতীয় কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলার সুযোগ তার। শচীন ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করেছিলেন ১১ ম্যাচ খেলে। এবার রোহিত ৫ সেঞ্চুরিতে ৮ ম্যাচেই করেছেন ৬৪৭ রান। আজ কিউইদের বিপক্ষে মাত্র ২৭ রান করতে পারলেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরা হওয়ার সুযোগ তার। এক বিশ্বকাপে এর আগে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার ৪টি সেঞ্চুরি ছিল। ৫ শতকে তাকে পেছনে ফেলেছেন ৩২ বছর বয়সী রোহিত। এবার সর্বকালের সেরা হওয়ার সুযোগ এক আসরে সর্বাধিক রান করে। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন শুরু থেকে, তাতে করে এই ইতিহাসগুলো গড়ে ফেলা খুবই সম্ভব রোহিতের জন্য। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডও (৭টি) হয়ে যেতে পারে আজ শতক হাঁকাতে পারলে, সেক্ষেত্রে টানা চার সেঞ্চুরি হাঁকানোর সাঙ্গাকারার রেকর্ডকে ছুয়ে ফেলবেন তিনি। ভারতের এবার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেই ম্যাচেই অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস উপহার দেন রোহিত। ভারতীয় দলের টপঅর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তাটা শেষ হয়ে যায় তখনই। পরের ম্যাচে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তার উপযুক্ত সঙ্গী ছিলেন শিখর ধাওয়ান। কিন্তু ইনজুরিতে এ বাঁহাতি ওপেনার ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের টপঅর্ডারে একমাত্র আশা-ভরসা হয়ে দাঁড়ান রোহিত। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে লোকেশ রাহুলের ফর্মটা তেমন সুবিধাজনক ছিল না। এ কারণে লোকেশ এমনকি চার নম্বরেও ব্যাট করতে নেমেছিলেন।
ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে লোকেশই সঙ্গী হয়ে যান রোহিতের। সেই লোকেশ একপ্রান্তে থেকে ভালভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন। তিনি রোহিতকে দেখেছেন একে একে বড় কিছু ইনিংস খেলতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে স্নায়ুচাপের ম্যাচে রোহিত ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আগেই নিজের দলকে ভারমুক্ত করে দিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপের দুই তলানির দল আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারাই শুধু সফল হয়েছে রোহিতকে আগেভাগে সাজঘরে ফেরাতে। আফগানদের বিপক্ষে ১ আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাত্র ১৮ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন রোহিত। এ দুটি ম্যাচের পর আর রোহিত হতাশ করেননি। টানা তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৪ এবং সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। আজ আরেকটি শতক কি হাঁকাতে পারবেন তিনি? কিউইদের বিপক্ষে এর আগে ২৩ ওয়ানডে খেলে মাত্র একটি শতক হাঁকিয়ে মাত্র ৩৫.১০ গড়ে ৭০২ রান করতে পেরেছেন। অথচ ২৭টি ওয়ানডে শতকের মালিক ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম সর্বাধিক শতকের মালিক। দুই বছর আগে কানপুরে ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কিউইদের বিপক্ষে। এছাড়া কোন সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি তাদের বিপক্ষে। এবার তাই অনেক কারণেই আরেকটি সেঞ্চুরি করতে উন্মুখ হয়ে থাকবেন রোহিত। তবে বিশ্বকাপ মঞ্চে এই প্রথম কিউই বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে নামবেন তিনি। তবে ফর্মের তুঙ্গে থাকায় তাকে ঠেকানোই বড় পরীক্ষা হবে কিউই বোলারদের জন্য।
ভারতের শক্তিশালী টপঅর্ডার দ্রুত ভেঙ্গে ফেলা যেমন কিউইদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, ভারতীয় বোলারদের জন্য তেমনটি নয়। টপঅর্ডারে নিউজিল্যান্ডের শুধুমাত্র ২৮ বছর বয়সী উইলিয়ামসনই যা একটু ফর্মে আছেন। ৮ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিসহ ৪৮১ রান করেছেন ব্ল্যাক ক্যাপস অধিনায়ক। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক ৫৪৭ রানের রেকর্ড গতবার গড়েছিলেন ওপেনার মার্টিন গাপটিল। তিনি দলে থাকলেও এবার পুরোপুরি নিষ্প্রভ। গাপটিলের রেকর্ড ভেঙ্গে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সেরা বিশ্বকাপ ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার সুযোগ উইলিয়ামসনের। সেজন্য তার ব্যাট থেকে আজ অন্তত বের হতে হবে ৬৭ রানের ইনিংস। গাপটিল ছাড়া নিউজিল্যান্ডের আর কোন ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপে ৫০০ রান করতে পারেননি। সে তালিকায় দ্বিতীয় হতে উইলিয়ামসনের প্রয়োজন মাত্র ১৯ রানের। এ বিশ্বকাপে কিউই ব্যাটসম্যানদের যে অবস্থা, তাতে করে উইলিয়ামসনই ভরসা। কারণ তিনিই কিছুটা ফর্মে আছেন। বিশেষ করে তার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬* ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৮ রানের দুটি ইনিংস দলকে বাঁচিয়েছিল। টানা দুই ম্যাচে এ দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। এবার যদি শতক হাঁকাতে পারেন তবে বিশ্বকাপে কিউইদের পক্ষে সর্বাধিক ৩ সেঞ্চুরির মালিক হবেন তিনি। দলের অধিনায়ক এবং অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হওয়ার কারণে আজ বড় ইনিংস খেলতে মুখিয়েই থাকবেন উইলিয়ামসন। আর তাই ভারতীয় বোলারদেরও মূল পরিকল্পনা তাকেই দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার দিকেই থাকবে। ভারতের বিপক্ষে এর আগে ২৩ ওয়ানডে খেলে ৩৮.৯১ গড়ে ১ সেঞ্চুরিতে করেছিলেন ৮৯৫ রান। ভারতের মাটিতেই ২০১৬ সালের অক্টোবরে দিল্লীতে ১১৮ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। তবে বিশ্বকাপে এই প্রথম উইলিয়ামসনও ভারতের বিপক্ষে নামবেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: