ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম সেমিফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৯ জুলাই ২০১৯

ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম সেমিফাইনাল আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। ফেবারিটের মতো খেলেই লীগপর্ব শেষ করা বিরাট কোহলির ভারত শীর্ষে থেকে সেরা চারে উঠে আসে। অন্যদিকে অনেকটা ভাগ্যগুণে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় চতুর্থ দল হিসেবে সেমিতে কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। কোনরকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে না গিয়ে তাই ভারতকে ফেবারিট ধরে নেয়া যায়। রোহিত শর্মা, কোহলি, লোকেশ রাহুল, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংলাইন, পেস-স্পিন মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় বোলিং, সঙ্গে চমৎকার ফিল্ডিং। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং অনেকটাই অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ওপর নির্ভরশীল। অবশ্য বড় তারকা মার্টিন গাপটিল আর রস টেইলর যদি বড় ম্যাচে আজ সেরা খেলাটা খেলে দিতে পারেন, তবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ভারত। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লোকি ফার্গুসনকে নিয়ে কিউইদের পেস আক্রমণ অত্যন্ত শক্তিশালী। জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের অলরাউন্ড নৈপুণ্য তাতে বাড়তি মাত্র যোগ করেছে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার পরই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকা ভারত সত্যি দারুণ একটি দল তৈরি করেছে। মাঝের এই সময়ে বিরাট কোহলির অধীনে তারা তুলে নিয়েছে একের পর এক সাফল্য। জিতেছে নিদাহাস টি২০ সিরিজ, এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এশিয়া কাপ। সিরিজ জিতেছে ঘরে-বাইরে সর্বত্র। বাদ যায়নি নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজের সাফল্যও। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আরেক তুখোড় দল ইংল্যান্ডের সঙ্গে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান নিয়ে লড়াইটাও চলেছে মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো। ইংলিশদের সমান ১২৩ রেটিং নিয়ে এখন দ্বিতীয় স্থানে থাকা কোহলির দল লীগপর্বে কেবল একটিই ম্যাচ হেরেছে, সেটি ওই ইংল্যান্ডের কাছে। এছাড়া একে একে তারা উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা অবশ্য বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। সেমিতে এসে আজ প্রথম কিউদের পাচ্ছে সুপার কোহলি-বাহিনী। মিডলঅর্ডারে ঋষভ পন্থ আর ওপেনিংয়ে রাহুল কিছুটা অনভিজ্ঞ। এছাড়া ভারতের এই দলটাতে দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইনজুরিতে শিখর ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পর ওপেনিংয়ে রোহিতের সঙ্গী হন রাহুল। শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়ার দিনে ১১১ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন তিনি। মিডলঅর্ডার পন্থ আউট হন ৪ রান করে। বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা দীনেশ কার্তিককে তো ব্যাটই করতে হয়নি। ব্যাটিংয়ে আসলে একাই সব করে দিচ্ছেন রোহিত। সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে, রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে চলেছেন তুখোড় এই ওপেনার। এক আসরে রেকর্ড ৫ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিতে ৯২ গড়ে সর্বোচ্চ ৬৪৭ রান তার নামের পাশে। রোহিতের কাছ থেকে আর দুটি মাত্র ইনিংস চাইছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, ‘আমাদের আর দুটো মাত্র ম্যাচ জিততে হবে। আশা করছি তোমার (রোহিত) কাছ থেকে আরও দুটো অসাধারণ ইনিংস আমরা দেখতে পাব।’ আর অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকার পরও রোহিত নিজে কতটা স্থিতধীর সেটি তার বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে, ‘একজন ক্রিকেটার হিসেবে বলতে পারি যে আমরা কখনও অতীত নিয়ে পড়ে থাকি না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘কয়টা সেঞ্চুরি করেছি, কয়টা রেকর্ড ভেঙ্গেছি, আমি আসলে এসব নিয়ে ভাবি না। আমার কাছে বর্তমানটাই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাট হাতে আমি যাতে দলকে ভাল অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারি, আমার একমাত্র লক্ষ্য সেটাই।’ ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৪২ রান নিয়ে সেরা ৯-এ বিরাট কোহলি। ভারত অধিনায়কের কাছ থেকেও তো একটা সেঞ্চুরি পাওনা হয়ে গেছে! ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫১ গড়ে রাহুলে রান ৩৬০। দলের প্রয়োজনে যে কোন পজিশনে নেমে অলরাউন্ডার হারদিক পান্ডিয়াও ঝড় তুলছেন। রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পেস আক্রমণে জাসপ্রিত বুমরাহ যথারীতি দুরন্ত-দুর্বার। আসরে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট তার। মধ্যপথে ভুবনেশ্বর কুমারের ইনজুরিতে পাওয়া সুযোগে অবিশ্বাস্য বোলিং করছেন মোহাম্মদ শামিও। মাত্র ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট! কুলদীপ যাদব, যুবেন্দ্র চাহালকে নিয়ে স্পিন আক্রমণ বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রয়োজনে ডাকসাইটে থাকা রবীন্দ্র জাদেজা, দীনেশ কার্তিকরাও কিন্তু কম যান না। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড যেন চিরায়াত সেমিফাইনালের এক দল। বিশ্বকাপে আগের ১১ আসরে ৭ বার সেমিতে উঠে একবারই মাত্র ফাইনাল খেলতে পেরেছে কিউইরা। সেটি গতবার ২০১৫ সালে। ব্রেন্ডন ম্যাকুকুলামের নেতৃত্বে দারুণ সেই দলটাও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছ হেরেছিল বড় ব্যবধানে। আর এবার তো বলতে গেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এই পর্যন্ত এসেছে তারা। ৯ ম্যাচে জয় ৫, হার ৩। পরিত্যক্ত ১। সমান ১১ পয়েন্ট সত্ত্বেও নেট রানরেটে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সেরা চারে উঠে এসেছে ব্ল্যাকক্যাপসরা। তার মধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারতে হারতে বেঁচে গেছে উইলিয়ামসনের দল। পেস বোলিংই নিউজিল্যান্ডের বড় শক্তি। ৭ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ শিকারি লোকি ফার্গুসন অনেকটাই ফিট। আজ খেলছেন তিনি। ৮ ম্যাচে ট্রেন্ট বোল্টের নামের পাশে ১৫ উইকেট। অভিজ্ঞ এই পেসারও নিজের দিনে দৃশ্যপট বদলে দিতে পারেন। যথাক্রমে ১১ ও ১০টি করে উইকেট নেয়া জিমি নিশাম আর ম্যাট হেনরিও প্রয়োজনে কম যান না। আছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। স্টিনে মিচেল স্যান্টনারাই ভরসা। তবে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংটা এখন পর্যন্ত একসঙ্গে ক্লিক করেনি। ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিতে ৯৬ গড়ে ৪৮১ রান করা অধিনায়ক উইলিয়ামন আছে সেরা ছয়ে। দলটির জন্য সবচেয়ে চিন্তার কারণ সেরা পনেরোতেও নেই আর কোন ব্যাটসম্যান! অথচ দলটিতে আছেন মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো, হেনরি নিকোলস, রস টেইলর, টম লাথামের মতো সব উইলোবাজ। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আজ তারা কেমন করেন, সেটির ওপর কিউদের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে। উইলিয়ামসনদের প্রেরণা যোগাবে বিশ্বকাপের প্রস্তুত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়। ১৯৭৫ থেকে এ পর্যন্ত মুখোমুখি ১০৬ ওয়ানডের ৫৫টিতে জয় ভারতের, নিউজিল্যান্ডের জয় ৪৫। টাই ১ ও পরিত্যক্ত ৫। অবশ্য বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৭ দেখায় ৪ জয়ে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। ভারতের জয় ৩টিতে। সবশেষ ২০০৩ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিয়ানে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত। ২০১১ বিশ্বকাপে ধোনির নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারে মতো শিরোপা জেতে ভারত (১৯৮৩-এর পর), কিন্তু সেবার নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলতে হয়নি, খেলতে হয়নি গতবারও (২০১৫)। সেই অর্থে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ বিশ্বকাপে মুখোমুখি হচ্ছে দুদল। তাও আবার সেমিফাইনালের মতো বড় মঞ্চে।
×