ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৯ জুলাই ২০১৯

 শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা সমকালীন আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের এক অবধারিত পরিণতি। স্মরণ করা যেতে পারে উনিশ শতকীয় নব জাগরণের ভাব সম্পদ কি প্রবল বেগে আধুনিক শিক্ষাসহ সাংস্কৃতিক বলয়ে যুগান্তকারী প্রভাব রাখে। বিশেষ করে প্রাচীনকালের ধর্মীয় শিক্ষার বাতাবরণে জ্ঞানার্জনের সামগ্রিক ভিত্তি তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থাপনার এক আবশ্যিক পালাক্রম। আধ্যাত্মবাদের দেশ বলে খ্যাত ভারতবর্ষের সামাজিক অবয়বই ছিল এক দুর্ভেদ্য শৃঙ্খলের অধীন। শিক্ষা বলতে প্রাচীনকালে গুরুগৃহে বিদ্যালক্ষ্মীর আরাধনাই ছিল এক সার্বজনীন জ্ঞানচর্চার পাদপীঠ। জ্ঞানীগুণী, পন্ডিত থেকে শুরু করে ধর্মীয় আচার্যরাও শিক্ষক হিসেবে তাদের যোগ্যতম প্রমাণ করতেন। সেভাবেই গড়েও ওঠে প্রাচীনকালের অবিভক্ত ভারতের তক্ষশীলা ও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যার এমন সুউচ্চ পাদপীঠে দেশ-বিদেশের শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষার্থীরাও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উচ্চশিক্ষার যথার্থ মর্যাদায় নিজেকে তৈরি করেছে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যম এবং বিষয় গত মান যেভাবেই সংহত হোক না কেন বিদ্যার্জনের ক্রম বিবর্তনের ধারা প্রাচীন থেকে মধ্য যুগ পেরিয়ে সাবলীল গতিতে আধুনিকতার বিস্তৃত বলয়কে স্বাগত জানায়। প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগে পদার্পণ করতে এদেশের মানুষকে বহুকাল অপেক্ষা করতে হয়েছে। পাশাপাশি ১২০০ খ্রিঃ মধ্যযুগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর নতুন সময় কিভাবে সামাজিক অবয়বের গতি নির্ণয় করে সেখানেও শিক্ষার সময়োপযোগী অভিযাত্রা ইতিহাসের বিশিষ্ট মাইলফলক। শিক্ষা আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের এক অনবচ্ছেদ প্রক্রিয়া। ফলে এর অবধারিত ধারাও সমাজ সংস্কারের অনুষঙ্গ। সঙ্গত কারণে উনিশ শতকের আধুনিকতার সম্প্রসারিত নবযুগের সঙ্গে ভারত উপমহাদেশের ঐতিহ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থার মহাসম্মিলন যে নতুন দিগন্তের ধারা সূচনা করে, সেটাই ব্রিটিশ শাসিত বলয়ের এক সমৃদ্ধ সংযোজন। ফলে শিক্ষার মতো একটি শক্তিশালী মাধ্যম ইউরোপীয় সংস্কৃতির নব ধারায় যে আলোকিত জগতকে স্বাগত জানায়, সেটাও দেশীয় ঐতিহ্যিক শিক্ষার সঙ্গে এক অনন্য অভিযোজন। নতুন সময়ের জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতির নবদ্যুতি ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার পথ নির্দেশ করতে কখনও আর পেছন ফিরে তাকায়নি। ক্রমান্বয়ে শুধু সামনের দিকে এগিয়েই চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও সেই ক্রমবিবর্তনের ধারার এক বলিষ্ঠ জ্ঞান সাধনার অভাবনীয় আয়োজন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা ব্যবস্থার নবযাত্রার শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যার সর্বোচ্চ পাদপীঠ তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়নি। এর জন্যও আরও অপেক্ষমাণ সময় ধরে বাংলাদেশের মানুষকে ধৈর্য ধরতে হয়েছে। তারও আগে অবিভক্ত ভারতে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনেক স্কুল-কলেজের গোড়া পত্তন এদেশের উচ্চ শিক্ষায় যুগান্তকারী প্রভাব রাখে। যা অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্ব পরিসরে নিয়ে যেতে বিশেষ অবদানও রেখেছে। ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশরা শুধু যে অনেক আধুনিকতার বীজ বপন করেছিল বস্তুগত এবং মননগত উভয় দিক থেকেই, সেভাবে নিজেদের টিকিয়ে রাখতেও হরেক রকম অপকৌশলকে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দিতেও দ্বিধা করেনি। ফলে ১৮৩৫ সালে উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত শিক্ষানীতিতে লর্ড মেকলে ঘোষণা দিলেন, আমরা এমন এক ভারতীয় শিক্ষিত শ্রেণী তৈরি করব যারা রক্তে মাংসে স্বদেশের হলেও চিন্তায়, চেতনায়, বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজ হতেও সময় নেবে না। তেমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় গতি সঞ্চার হলে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ যা কিনা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, তেমন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভযাত্রা অবিভক্ত ভারতের এক নব অধ্যায়ও বটে। ১৮৫৭ সালে একই সঙ্গে কলকাতা, মাদ্রাজ এবং মুম্বাইÑ এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছিল মূলত উচ্চ শিক্ষার মান নির্ণয় এবং ডিগ্রী দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে। পঠন-পাঠনের জন্য নয়। পরবর্তীতে সময়ের যৌক্তিক চাহিদায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়গত সমস্ত সূচকে তার অংশীদারিত্বকে ব্যাপক এবং গ্রহণীয় করে তুলতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। ক্রমে তা সফলতারও মুখ দেখতে থাকে। ইতোমধ্যে সর্বভারতে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার এক অন্য মাত্রার সংযোজন, যা পুরো সামাজিক অঙ্গনকে উত্তাল করে তোলে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গই তৈরি করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তনের মূল উপাদান। এ কথা মনে রাখা বাঞ্ছনীয় উনিশ শতকের নবজাগরণ ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক এবং যৎসামান্য এলিট শ্রেণীর মধ্যে। তেমন নতুন সময়ের দ্যুতি ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানে তেমন ছড়িয়ে পড়েনি। বাংলাদেশের ঢাকা শিক্ষার আলোকিত ভুবনে এগিয়ে যেতে থাকলেও সর্বক্ষেত্রে তার রেশ পৌঁছাতে আরও সময় লাগে। ১৯০৫ সালে অবিভক্ত ঔপনিবেশিক ভারতের যতই আর্থ-সামাজিক টানাপোড়েনের আবর্তে পড়ুক এ কথা বলতেই ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ব্রিটিশ রাজশক্তি তার প্রশাসনিক এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হয়। অনেক আন্দোলন আর সামাজিক পরিবেশের বৈপরীত্যে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গকে রদ করতে নতুনভাবে উদ্যোগ নেয়। ঐতিহাসিকের ধারণা অনুযায়ী বাংলা ভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম নতুনভাবে আবারও যুক্ত হলে ব্রিটিশ রাজশক্তিকে কিছু কর্মযোগে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হয়েছিল। আর এরই প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা পর্ব তৈরি হয়ে যায়, যা ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের পরবর্তী বছর ১৯১২ সাল থেকে প্রশাসনিক ও আইনী ভিত্তি প্রস্তুত করার আনুষঙ্গিক কর্মপরিকল্পনাকে হাতে নেয়া হয়। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্মপ্রক্রিয়া শুরুর পদক্ষেপ নেন। আর বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে এমন ঐতিহাসিক শিক্ষাঙ্গন তৈরির কাজে যারা সামনের সারিতে ছিলেন তারা আজও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্নের পথিকৃৎ, সুহৃদ এবং শুভাকাক্সক্ষী। যাদের নাম আজও ইতিহাসে স্মরণীয়। তারা হলেন ঢাকার স্যার নবাব সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অনেকে। অনেক জ্ঞানী-গুণীর সঙ্গে তৎকালীন ঐতিহ্যিক শিক্ষাঙ্গন ঢাকা ও জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাদের প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী ভূমিকা রাখতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এর আইনগত কার্যক্রম শুরু করতে অভিজ্ঞ আইনবিদেরও ভূমিকা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তেমন ঐতিহাসিক ভূমিকায় ব্যারিস্টার নাথানের নেতৃত্বে তৎকালীন বিশিষ্টজনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় আইনী কার্যক্ষেত্রে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯১৩ সালেই নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলে তা অনুমোদন পেতেও বেশি সময় লাগেনি। অনুমোদনের পর পর অর্থাৎ ১৯১৪ সালে ছড়িয়ে পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রলয়ঙ্করী দামামা। সেই বিশ্বযুদ্ধের সশস্ত্র হামলার রেশ চলতে থাকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত। এরই মধ্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি যুদ্ধের উন্মত্ততায় জড়িয়ে পড়লে তাদের করাল গ্রাসে থাকা পরাধীন ভারতও হরেক রকম বাধাও প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। ফলে এই প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ আইনী বিধি আরোপ করা হয় ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ। তৎকালীন গবর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি দিলে যাত্রা শুরু করার আর কোন বিধিনিষেধ আর থাকল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হলে এমন আইনী কার্যক্রমে ১৯২১ সালে ১ জুলাই তার প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬ দশক পরে তৈরি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আর যুগোপযোগী সময়ের গতিপ্রবাহে অনবচ্ছেদ হয়ে আন্তর্জাতিক সীমানাকেও গৌরবের সঙ্গে আয়ত্তে এনেছে। আর মাত্র ২ বছর পরে শতবার্ষিকীর স্বর্ণ অধ্যায়ে এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সাবলীলভাবে এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্যিক সম্ভার কালের সাক্ষী হয়ে জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারিত ভুবনে প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান হচ্ছে। এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত এই জ্ঞান সাধনার মিলনকুঞ্জটি দেশী-বিদেশী বহু অভিজ্ঞ ও খ্যাতিমান শিক্ষকের গৌরবময় পর্বের অংশীদার হয়েছে। এখনও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতম বিবেচনায় নিজেদের প্রমাণ করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ডিগ্রী অর্জন করা সফল শিক্ষার্থীরা। এখনও বাংলাদেশের মেধা ও মনন বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মান বিশ্ব পরিসীমায় স্বীকৃত ও পরিচিত। উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলো এখনও উন্নত বিশ্বের মানসম্মত অবস্থানে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পরিবেষ্টিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি আজ অবধি বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীর মিলনসৈৗধ। তবে বিশ্বসভায় এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নজরকাড়া হলেও আজ তা অনেকটাই বিস্মৃতির জালে। সমাজ সভ্যতার যখন অবক্ষয় হয় তখন চারপাশের সমৃদ্ধ বলয়ও তার তৈরি করা ঐতিহ্য থেকে সরে পড়ে। ২১ বছরের দুঃশাসন আর দুঃসময় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যে নেতিবাচক ও বৈপরীত্যের আবহের কবলে পড়ে, সেখান থেকে বের হতে হয়ত বা আরও সময় লাগতে পারে। তবে এশিয়ার ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ৬৪তম। দীর্ঘদিন ধরে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ঐতিহাসিক ভূমিকায় নিজের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করেছে, তা জাতির জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। এ ছাড়া ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগান্তকারী অবদান এক অনন্য ঐতিহ্য। জাতির সময়ের চাহিদায় যখন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তার গতিপ্রবাহকে অবারিত করে সেও যেন এক সমৃদ্ধ বৈভব। এমন সম্পদ দেশ ও জাতির অহঙ্কার ও গৌরব। বলা হয় কোন দেশকে বিপর্যস্ত করতে গেলে তার গ্রন্থাগারকে নষ্ট করাই যথার্থ কাজ। শিক্ষার্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠই জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সময়ের যৌক্তিক আন্দোলন, ঐতিহাসিক ভাবসম্ভার সবই চর্চা এবং সংরক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের পথ দেখায়, সামনে চলতে মূল শক্তির কাজ করে। আন্দোলন-লড়াইয়েরও অনুবর্তী হয়ে ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ পথযাত্রার সংগ্রামী ইতিহাসও সে ধারারই অনন্য সংযোজন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান নির্ধারিত হয়। আর এটাই ছিল স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই জঘন্যতম দিনটিও ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। মর্মান্তিক এমন হত্যাযজ্ঞে শুধু সমাবর্তনই যে হতে পারেনি তা নয়, পুরো দেশটাও পিছিয়ে যায় এক অমানিশার অন্ধকারে। সেই তমাচ্ছন্ন প্রলয় দেশের ওপর যে দুর্যোগের ঘনঘটার অবতারণা করে, সেখান থেকে বের হওয়ার এক অনধিগম্য পথযাত্রায় নতুন আলোর সন্ধান পেতে প্রায়ই ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৯৯ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ৪০তম সমাবর্তন করতে পেরেছিল। এর চেয়ে দুঃখজনক ইতিহাস আর কিইবা হতে পারে। সাময়িকভাবে পথ হারানো সর্বোচ্চ বিদ্যার এই পীঠস্থানটি আবারও সময়ের গতিপ্রবাহে নিজের অবস্থানকে বিশ্বসীমায় নিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। লেখক : সাংবাদিক
×