ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইট নয় ॥ সিমেন্টের ব্লক

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ৯ জুলাই ২০১৯

 ইট নয় ॥ সিমেন্টের ব্লক

অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রার নিয়ামক। বহুতল ভবন, শিল্পায়নের অবধারিত গতিপ্রবাহে নতুন কলকারখানা নির্মাণে অবকাঠামোর যে সম্প্রসারিত কর্মযোগ সেখানে প্রধান এবং নির্ণায়কের ভূমিকায় থাকে ইট। ভবনের কাঠামোগত ভিত তৈরি করা হয় ইটের ওপর ভর করে। তবে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরির যে বিশেষ কার্যক্রম তা যেমন কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করছে, একইভাবে পরিবেশকেও দূষণের আবর্তে ঠেলে দিচ্ছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিচ্ছেন ইটের পরিবর্তে সিমেন্টের ব্লক ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সাশ্রয়ী এই সিমেন্টের ব্লক ভবনকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সবচেয়ে বেশি উপকার হবে পরিবেশ বিশুদ্ধকরণে। ইটের তুলনায় ৩০ ভাগ কম খরচে সিমেন্টের ব্লক ভবনকে হাল্কা এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকিও কমাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ভবনের গাঁথুনি মজবুতকরণে সিমেন্টের ব্লক যুগান্তকারী কাজ করবে এমন আশাও বিজ্ঞজনদের। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেই বিভিন্ন বহুতল ভবন তৈরিতে ইটের ব্যবহার না করে সিমেন্টের ব্লককে কাজে লাগানো হচ্ছে। সিমেন্ট এবং নুড়ি পাথর দিয়ে কংক্রিটের ব্লক তৈরি করা হয়। ইট তৈরি করতে লাগে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি, যা ইটভাঁটাতে পুড়িয়ে ইট বানানো হয়। ধ্বংস হচ্ছে গাছপালা ও বনজসম্পদ। এতে প্রতিবছর প্রায় ১ শতাংশ কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর এই পোড়া ইটের জন্য প্রস্তুত করতে হয় ইটভাঁটি, যা পরিবেশ বিপর্যয়কে ডেকে আনে। হাউজিং এবং বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শামীম আকতারের মতে, পোড়ানো ইটের বিপরীত প্রতিক্রিয়াগুলো মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে যে পরিমাণ দূষণ ছড়ায় তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থেকে সংশ্লিষ্ট জনগণ রেহাই পায় না। সঙ্গত কারণে সরকারও এ ব্যাপারে সচেতন এবং সাবধান হয়ে ২০২০ সালের মধ্যেই পোড়া ইটের ব্যবহারকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে নির্দেশ দিয়েছে। সরকারের এমন সতর্কবাণী আমলে নিয়ে ইটের বিকল্প হিসেবে সিমেন্টের ব্লক তৈরির ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভবন নির্মাণে এসব ব্লক ব্যবহার করলে খরচও অনেক কমে আসবে। সরকারী বিভিন্ন ভবন নির্মাণে ইটের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য উপাদান সিমেন্টের ব্লককে অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে, যা গণমানুষের মধ্যে ও প্রচার-প্রচারণায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে। আধুনিক বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এখন আর পোড়া ইটের ব্যবহার একদম হচ্ছে না। যেখানে ভবন নির্মাণের উপকরণ হিসেবে কংক্রিট, এ্যালুমিনিয়াম শিট, প্লাস্টিক, কাঁচ ফাইবার, স্টিল ও ধাতব পদার্থ ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র বিপরীত হলেও এর থেকে ভবন নির্মাতাদের বের হয়ে আসতে হবে। অন্য সব দেশের মতো আমাদের দেশেও সিমেন্টের ব্লক তৈরির মেশিন পর্যাপ্ত হারে বাড়িয়ে নতুন এই উপকরণকে কাজে লাগাতে হবে। দূষণমুক্ত বাতাস, মাটি, গাছপালা ও কৃষি জমি সুরক্ষায় ইটের বিকল্প উপাদান হিসেবে সিমেন্টের তৈরি ব্লককেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সাশ্রয়ী ভবন এবং দূষণমুক্ত জীবনকে বেছে নিতে আর ইট নয়, সিমেন্টের তৈরি ব্লকই জনগণকে স্বস্তি এবং নিশ্চিত জীবন উপহার দেবে।
×