ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাতেগোনা দুর্নীতিবাজ পুলিশের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৮ জুলাই ২০১৯

 হাতেগোনা দুর্নীতিবাজ পুলিশের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা

শংকর কুমার দে ॥ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে হাতেগোনা কয়েক পুলিশের দুর্নীতিবাজ দুষ্টচক্রের কেলেঙ্কারি। দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মাদকসেবী, অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত এসব পুলিশ কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে শুরু করা হয়েছে নজরদারি। পুলিশ বাহিনীর ইমেজ নষ্টের জন্য যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিতর্কিত ডিআইজি মিজান, সোনাগাজীর ওসি মোজাম্মেল, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত গাজী মোজাম্মেলসহ কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা এখন আলোচিত নাম। পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগের বিষয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ফেরত দান ইত্যাদি ঘটনা দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি। তাই পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে দুর্নীতিবাজ, অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নজরদারিসহ কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। সূত্র মতে, দুর্নীতিবাজ, দুশ্চরিত্রের বিতর্কিত ডিআইজি মিজান কা-ের ঘটনার প্রায় একই সময়ে ফেনীর সোনাগাজি থানার ওসি মোজাম্মেলের ঘটনা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য নেতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার কেলেঙ্কারির রেশ না কাটতেই অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি জোরপূর্বক এক বয়োবৃদ্ধের জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে কয়েকটি জেলায় নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ঘুষ, দুর্নীতির টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বিতর্কিত ডিআইজি মিজান ও সোনাগাজীর ওসি মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মাদারীপুরে কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনা রীতিমতো পুলিশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক বার্তা নিয়ে এনেছে। পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিভাগীয় দুর্নীতি, ঘুষ, অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সফলও হন। আইজিপি বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য গত বছর থেকে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তার সক্রিয় পদক্ষেপে ’১৮ সালের কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়। এবার ’১৯ কনস্টেবল নিয়োগে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন স্বয়ং আইজিপি। গত মাসের ২২ তারিখ থেকে সারাদেশে কনস্টেবল নিয়োগ শুরু হয়। ইতোমধ্যে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী ৬৪ জেলার এসপি এ বিষয়ে সতর্ক থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও দু-একটি জেলায় কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, যা এখন তদন্তনাধীন। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, রাজধানীর ৫০ থানাসহ ঢাকা মহানগরীর পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্য কর্মকর্তার গতিবিধির ওপর নজরদারি শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১৭ জুন ডিএমপি কমিশনার এক আদেশে বলেন, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক ও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক সদস্য ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কিংবা জনতার হাতে আটক হয়েছেন। বিভিন্ন মাদক- যেমন গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ইত্যাদি সেবনের জন্য অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাদক কারবারিদের সহায়তা কিংবা প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে কয়েকজন অভিযুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া টহল পার্টির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে (বিশেষ করে রাত্রিকালীন) নিরীহ জনসাধারণকে সন্দেহভাজন হিসেবে আয়ত্তে নিয়ে টহল গাড়িতে তুলে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে থানায় না নিয়ে অর্থ আদায় করে পথিমধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠার ঘটনা ‘ওপেন সিক্রেট’। উচ্চ আদালতে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানের মামলার শুনানিকালে বলেছেন, ডিআইজি মিজান পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এমনকি উচ্চ আদালত আরেক মামলার শুনানিতে বলেছে, দুদকের চেয়েও কি ডিআইজি মিজান শক্তিশালী? উচ্চ আদালতের এমন মন্তব্যের পর পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার তাগিদ অনুভব করছে পুলিশ সদর দফতর। দুর্নীতি, ঘুষখোর, মাদকসেবী, অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরিসহ নজরদারি করা হচ্ছে। অসৎ, দুর্নীতিবাজ, অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের কারও অপকর্মের দায় পুলিশ প্রশাসন নেবে না। পুলিশ বাহিনীর হাতেগোনা যেসব কর্মকর্তার দুর্নীতি, অনৈতিক কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের ভাবমূর্তির প্রশ্নে কোন আপোস করা হবে না। অনেক সদস্যের ত্যাগ ও তিতিক্ষা ও জীবনের বিনিময়ে গড়ে ওঠা পুলিশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। যে কোন মূল্যে পুলিশের ইমেজ বিল্ডআপ করা হবে।
×