ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব বাদে দেশে ফিরলেন মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৮ জুলাই ২০১৯

 সাকিব বাদে দেশে ফিরলেন মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ তাহলে কি বাংলাদেশকে লীগপর্বই ডুবাল? টানা একের পর এক ম্যাচ খেলার যে ছন্দ সেটি ধরে রাখা যায়নি বলেই কি ডুবল বাংলাদেশ? এই শঙ্কা শুরু থেকেই ছিল। চোট জর্জর বাংলাদেশ দল হঠাৎ করেই ছন্দ হারাতে পারে, সেই সম্ভাবনা ছিল। হলোও তাই। আর তাতে করে ব্যর্থতায় বিশ্বকাপের মিশনও শেষ করল বাংলাদেশ। সেই ব্যর্থতা সঙ্গী করে রবিবার বিকেলে দেশের মাটিতেও পা রাখল টাইগাররা। তবে দলের সঙ্গে দেশে ফিরেননি এবার বিশ্বকাপ মাতানো সাকিব আল হাসান। তিনি কয়েকটা দিন পরিবার নিয়ে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই দলের সঙ্গে আসেননি। সাকিবের সঙ্গে ইংল্যান্ড রয়ে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমান রুম্মন ও লিটন কুমার দাসও। তারাও কয়েকদিন ইংল্যান্ড থাকবেন। সাকিব, সাব্বির, মিরাজ, লিটন থাকলেও বাকিরা ঠিকই দেশে ফিরে এসেছেন। মাশরাফিসহ বিশ্বকাপ দলের সবাই ফিরেছেন দেশে। ফিরেছেন প্রধান কোচ স্টিভ রোডসও। তবে দলের সঙ্গে ফিরেননি পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহন। বিশ্বকাপ পর্যন্ত ওয়ালশ ও চন্দ্রমোহনের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল। তাদের ব্যর্থতা এমন পর্যায়েই পৌঁছেছে যে বিসিবি আর তাদের দুইজনকে দলের সঙ্গে রাখতে চায় না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মিশন শেষ হওয়ার পর লন্ডনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ বিসিবির পরিচালকরা সভা করেছেন। সেখানে এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কি ঘটে সেটি এ মাসের ২০ তারিখের পর বিসিবি সভাতেই বোঝা যাবে। সামনেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ রয়েছে। এই সময় সিরিজ না থাকলে হয়তো প্রধান কোচকেও বিদায় বলে দেয়া হতো! কিন্তু এখনই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কায় যদি নরম স্বভাবের (যেটিতেই বেশি অসুবিধা দেখা হচ্ছে) এ কোচ সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাহলে হয়তো চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবেন রোডস। কিন্তু তা হওয়ার সম্ভাবনা কমই দেখা যাচ্ছে। ওয়ালশের পরিবর্তে এখন শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন বিসিবি একাডেমি কোচ চম্পকা রামানায়েকে। আর চন্দ্রমোহনের জায়গায় বাংলাদেশ দলে আগে ফিজিও থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান বিভব সিংকেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। বাকি কোচিং স্টাফের মধ্যে পারফর্মেন্স এ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনের চুক্তি দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট হওয়ায় বোর্ড তাকে রেখে দিতে চায়। বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং যতই খারাপ হোক, কোচ রায়ান কুকের চেষ্টার কমতি ছিল না। তাই কুককেও রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশীতো দিন হিসেবে বেতন নেন। এবার বিশ্বকাপে কি সুন্দর শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে টাইগাররা। স্বাভাবিকভাবেই এবার স্বপ্ন ছিল আরও বড়। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ছিল। যদি সেমিফাইনালে ওঠা যায়, তাহলেতো শিরোপা উঁচু করে ধরতে আর দুই ম্যাচ জেতা লাগতো। নকআউট খেলায় সবকিছুই সম্ভব! এমন আশাও দেখা হয়েছিল। দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়েও দেয়া গেছে। একের পর এক ক্রিকেটারের চোটে বাংলাদেশ দল শেষ পর্যন্ত ভাল করে কিনা সেই শঙ্কাও শুরু থেকেই ছিল। সঙ্গে আবার বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা ‘৩৫০’ রানের বাধাও সামনে ছিল। কিন্তু কি সুন্দরভাবেই প্রথম ম্যাচেই ৩৫০ রানের (৩৩০ রান) কাছাকাছি করে ফেলল বাংলাদেশ। তা সম্ভব হলো মুশফিকুর রহীম (৭৮) ও সাকিব আল হাসানের (৭৫) রেকর্ড গড়া ১৪২ রানের জুটিতে। ম্যাচটি আবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টাইগাররা ২১ রানেও জিতে গেল। এমন অসাধারণ শুরুর পর বাংলাদেশ দল যে আত্মবিশ্বাস আর মানসিকতায় আরও চাঙ্গা হয়ে উঠল। শুরুটা সব দল সবসময়ই ভাল করতে চায়। বাংলাদেশের শুরুটাও হলো উজ্জ্বল। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কম রান (২৪৪ রান) করে শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে হার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রানের হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি প- হওয়ায় টানা তিন ম্যাচ জয়হীন থাকে বাংলাদেশ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সামনে পেয়েই আবার জ্বলে ওঠে। ৭ উইকেটে জিতে। এই জয় বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নে ভাসাতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াকু হার হয়। এরপরও আশা থাকে। আফগানিস্তানকে ৬২ রানে উড়িয়ে দিয়ে সেই আশা আরও উজ্জ্বল হয়। তিন জয় হয়ে যায়। কোনভাবে দুই জয় বা এক জয় হলেও বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলতে পারে, এমন সম্ভাবনা জাগে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানে হার হওয়াতেই সব শেষ হয়ে যায়। এখান থেকেই হতাশারও শুরু হয়ে যায়। এমন অবস্থায় তবুও সাফল্য নিয়ে ঘরে ফেরা যেত। যদি পাকিস্তানকে হারানো যেত। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের আরও খারাপ অবস্থা হলো। বিশ্বকাপে এবার নিজেদের সর্বনিম্ন ২২১ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানে হারল বাংলাদেশ। এই এক হারে বিশ্বকাপটাও ব্যর্থতায় ভরে গেল। এবার নিয়ে ছয়বার বিশ্বকাপ খেলল বাংলাদেশ। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ ও এবারের বিশ্বকাপ। এর আগের কোন বিশ্বকাপেই তিনটি ম্যাচের বেশি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার ইতিহাসের সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলা হয়। শুরুতে অনেক সাফল্য মিলে। প্রশংসাও কুড়ায় দল। কিন্তু শেষটায় সেই তিন জয়ের গ্যাড়াকলেই আটকা থাকল। এমন দল নিয়ে যদি আগের সব বিশ্বকাপের সাফল্যকে পেরিয়ে না যাওয়া যায় তাহলে ব্যর্থতাইতো ঘাড়ে চাপার কথা! চাপলও। যে চার দল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড) উঠল, তাদের কাউকে যে হারানো যায়নি, এটিওতো ব্যর্থতার খাতাতে থাকল। জয় মিলল তাদের বিপক্ষে যারা কিনা বাংলাদেশের আগেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ল। এখানেওতো ব্যর্থতার ছবি থাকল। সাকিব একাই অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে উচ্চতায় থাকলেন। কিন্তু এমন এক ক্রিকেটারের দল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে পারল না, সেই আফসোস সবাইকে ঘিরে ধরল। বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফিতো আফসোসই করেছেন। কিন্তু সাকিব একা কী আর দলকে সেমিফাইনালে নিতে পারবেন? একা নৈপুণ্য দেখিয়ে কী আর কোন দলকে ওপরে উন্নীত করানো যায়? যায় না। তাই সাকিব একা অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে নিতে পারলেন না। দুই একজন ছাড়া বাকিরা এমনই ব্যর্থ হয়েছেন যে বিশ্বকাপে ব্যর্থতা সঙ্গী করেই দেশে ফিরতে হলো। প্রথমবার (লীগপর্ব, প্রতিটি দলের সঙ্গে ম্যাচ) এমন ফরমেটে খেলল বাংলাদেশ। আর সেই ফরমেটে শেষ পর্যন্ত ছন্দ ধরে রাখা গেল না। ছন্দ হারা হয়ে ব্যর্থতার বোঝা মাথায় করে নিয়ে ফিরল মাশরাফিবাহিনী।
×