ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শচীনকে পেছনে ফেলার সুযোগ রোহিতের

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৮ জুলাই ২০১৯

 শচীনকে পেছনে ফেলার সুযোগ রোহিতের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সাত বছর পেরিয়ে গেছে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকর। অনেকগুলো রেকর্ড গড়ে অবসরে যাওয়ার পর তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার রেকর্ডগুলো ভেঙ্গে ফেলার সামর্থ্য আছে বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার। জহুরী জহর চেনে, শচীন ঠিকই চিনেছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের ভবিষ্যত রত্নদের। এতদিন ধাপে ধাপে কোহলি অনেক রেকর্ডেই শচীনকে পেছনে ফেলেছেন। এবার রোহিত ছুঁয়ে ফেললেন ‘লিটল মাস্টার’ শচীনকে। বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৬ সেঞ্চুরির রেকর্ডে এখন রোহিত-শচীন এক কাতারে। এবার এক আসরে সর্বাধিক রানের দিক থেকেও ভারতীয় কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলার সুযোগ তার। শচীন ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করেছিলেন ১১ ম্যাচ খেলে। এবার রোহিত ৫ সেঞ্চুরিতে ৮ ম্যাচেই করেছেন ৬৪৭ রান। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২৭ রান করতে পারলেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরা হওয়ার সুযোগ তার। এক বিশ্বকাপে এর আগে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার ৪টি সেঞ্চুরি ছিল। ৫ শতকে তাকে পেছনে ফেলেছেন ৩২ বছর বয়সী রোহিত। ২০১১ বিশ্বকাপে ২৮ বছর পর দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতেছিল ভারতীয় দল। কিন্তু ঘরের মাটিতে সেই বিশ্বকাপে দর্শক হিসেবেই থাকতে হয়েছিল রোহিতকে। কারণ তখন বীরেন্দর শেবাগ, গৌতম গাম্ভীর ও শচীনদের নিয়ে যে দলটি গড়া হয়েছিল সেখানে কম্বিনেশনের জন্য জায়গা হয়নি রোহিতের। ওই আসরে অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং হয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। অথচ বিশ্বকাপের আগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) তেমন কোন ফর্মই ছিল না যুবরাজের। এবার বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে আইপিএলে রোহিতের ফর্ম ছিল যাচ্ছে তাই রকমের, অনেকেই ভেবেছিলেন মর্যাদার এই মঞ্চে হয়তো রোহিত তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। কিন্তু সেই রোহিতই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে নেমে নতুন ইতিহাস গড়লেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবার ক্রিকেটের এই সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার মঞ্চে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি খেলার। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ১টি শতক ও ২টি অর্ধশতকসহ রোহিত করেছিলেন ৩৩০ রান। আইপিএল বাজে কাটলেও রোহিতের ওপর আস্থা রেখেছিল ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। তাছাড়া রোহিতের বিকল্প আসলে ছিলই না ভারতের কাছে। বড় মঞ্চে তিনি যে কতটা কার্যকর ব্যাটসম্যান তা আগের বিশ্বকাপেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আর আইপিএল খারাপ গেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফর্মেই ছিলেন রোহিত। সেটি এবার বিশ্বকাপে বজায় রাখতে শুরু করেন প্রথম ম্যাচ থেকেই। ভারতের এবার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেই ম্যাচেই অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস উপহার দেন রোহিত। ভারতীয় দলের টপঅর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তাটা শেষ হয়ে যায় তখনই। পরের ম্যাচে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তার উপযুক্ত সঙ্গী ছিলেন শিখর ধাওয়ান। কিন্তু ইনজুরিতে এ বাঁহাতি ওপেনার ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের টপঅর্ডারে একমাত্র আশা-ভরসা হয়ে দাঁড়ান রোহিত। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে লোকেশ রাহুলের ফর্মটা তেমন সুবিধাজনক ছিল না। এ কারণে লোকেশ এমনকি চার নম্বরেও ব্যাট করতে নেমেছিলেন। তবে ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে তিনিই সঙ্গী হয়ে যান রোহিতের। সেই লোকেশ একপ্রান্তে থেকে ভালভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন। তিনি রোহিতকে দেখেছেন একে একে বড় কিছু ইনিংস খেলতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ¯œায়ুচাপের ম্যাচে রোহিত ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আগেই নিজের দলকে ভারমুক্ত করে দিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপের দুই তলানির দল আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারাই শুধু সফল হয়েছে রোহিতকে আগেভাগে সাজঘরে ফেরাতে। আফগানদের বিপক্ষে ১ আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাত্র ১৮ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন রোহিত। এ দুটি ম্যাচের পর আর রোহিত হতাশ করেননি। টানা তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৪ এবং সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। সেমিতে আরেকটি সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারলেই বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারার টানা চারটি শতক হাঁকানোর রেকর্ডকে ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। ইতোমধ্যেই অবশ্য সাঙ্গাকারা পেছনে পড়ে গেছেন একটি ক্ষেত্রে। গত বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারা টানা চারটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল সেটি। আগের ম্যাচেই লঙ্কান এ কিংবদন্তিকে ছুঁয়েছিলেন রোহিত। সেই লঙ্কানদের বিপক্ষেই সাঙ্গাকারাকে পেছনে ফেলেন চলতি আসরে নিজের পঞ্চম শতক হাঁকিয়ে। দুই বিশ্বকাপেই ৬ সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেছেন তিনি। আর শচীন ৬ বিশ্বকাপ খেলে সর্বাধিক ৬ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। দুই বিশ্বকাপেই নিজ দেশের গ্রেটকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। দুই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ ম্যাচ খেলেই ৯৭৭ রান করেছেন রোহিত। আর মাত্র ২৩ রান করতে পারলেই বিশ্বকাপে ২১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রানের মালিক হয়ে যাবেন তিনি। ভারতের পক্ষে হবেন তৃতীয়। ১০০০ রান আছে এমন তালিকায় শচীন সবার ওপরে ২২৭৮ রান করে আর সৌরভ গাঙ্গুলী তলানির দিকে ১৯ নম্বরে ১০০৬ রান করে। এ বিশ্বকাপে ৯২.৪২ গড়ে ৬৪৭ রান তুলেছেন রোহিত এবং বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বাধিক রান করার তালিকায় আছেন তিন নম্বরে। তার ওপরে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন ১১ ম্যাচে ৬৫৯ (২০০৭) ও শচীন ১১ ম্যাচে ৬৭৩ (২০০৩) রান করে। আর মাত্র ২৭ রান করতে পারলেই সবাইকে ছাড়িয়ে সর্বকালের সেরা হয়ে যাবেন রোহিত। তবে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বাধিক রান করার তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রোহিতের গড় (৯২.৪২) সবচেয়ে বেশি। আর স্ট্রাইকরেট (৯৮.৭৭) দ্বিতীয় সেরা (হেইডেন ১০১.০৭)।
×