ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পেল ভারত

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৮ জুলাই ২০১৯

সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পেল ভারত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপে জমে ওঠা লীগপর্বের শেষদিকে টানা দুই জয়ে ১৯৯২ সালের পর সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় ইংল্যান্ড। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, ভারত আর নিউজিল্যান্ডের টিকেটও নিশ্চিত হয়ে যায়। তবু শেষদিনের দুটি ম্যাচ ঘিরে ছিল আগ্রহ, সেমিতে কে কার প্রতিপক্ষ হচ্ছে, সেটি নির্ধারণের জন্য। যেখানে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে ৭ জয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে আসে ভারত। আর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে যায় অস্ট্রেলিয়া। তিনে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ১২। আর ১১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে নিউজিল্যান্ড। সেরা চারে উঠে আসার পথে সবচেয়ে দুর্বল পারফর্মেন্স করায় ভারত আর অস্ট্রেলিয়া দু’দলই হয়তো প্রতিপক্ষ হিসেবে কিউদেরকেই চেয়েছিল। কিন্তু তাদের পেল বিরাট কোহলির দল। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারত-নিউজিল্যান্ড। বৃহস্পতিবার বার্মিংহ্যামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আয়োজক ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসে ফাইনাল ১৪ জুলাই। ইংল্যান্ডে চলমান ১২তম বিশ্বকাপের লীগপর্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা, উন্মাদনা-উত্তেজনা সবই ছিল। তবে অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই সেরা চারটি দল শেষ চারে উঠে এসেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড ছিল এবারের আসরে হট ফেবারিট। গত চার বছরে পাওয়ার ক্রিকেটের পসরা সাজিয়ে একের পর এক সাফল্য তুলে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠে এসেছিল ইয়ন মরগানের দল। উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে তাদের শুরুটাও ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো হিসেবের বাইরে থাকা দুটি দলের কাছে হারের পর লীগপর্বের মধ্য পর্যায়ে বদলে গিয়েছিল সমীকরণ। সেমির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। কিন্তু শেষদিকে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দুটি দলকে হারিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় মরগানবাহিনী। দীর্ঘ ২৭ বছর পর সেমিফাইনালে উঠে আসে ইংলিশরা। মজার বিষয়, ১৯৯২ সালে সর্বশেষ যখন তারা ফাইনাল খেলেছিল সেবারও এবারের ফরমেটে সব দল সব দলের মুখোমুখি হয়েছিল। যদিও কুলিন দেশটির এখনও একবারও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। সেবার ফাইনালে হারতে হয়েছিল ইমরান খানের পাকিস্তানের কাছে। এবার তাদের জন্য কাজটা আরও বেশি কঠিন। সেমিতেই ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে প্রত্যাশিত ক্রিকেটশৈলী উপহার দিয়ে সবার আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা দলটি অবশ্য লীগপর্বে আনুষ্ঠানিকতার শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মাত্র ১০ রানে হেরে বসে। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে পরশু ভেস্তে যায় ডেভিড ওয়ার্নারের (১২২) দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। প্রেটিয়াদের ৫ উইকেটে ৩২৫ রানের জবাবে ১ বল আগে ৩১৫ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। নইলে টেবিলের শীর্ষে থেকে সেমিতে দুর্বল নিউজিল্যান্ডকেই পেতে পারত ফিঞ্চের দল। যারা ঘরের মাটিতে গতবার কিউদের উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা উৎসব করেছিল। একে তো প্রতিপক্ষ আয়োজক ইংল্যান্ড, তার ওপর পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওই হারের পর সেমিফাইনাল নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তায় থাকবে অস্ট্রেলিয়া। কারণ শেষদিকে ভারত আর নিউজিল্যান্ডের মতো সেরা চারে থাকা দুটি দলকে হারিয়ে সেমিতে উঠে এসেছে ইংলিশরা। এটি হতে পারে এবারের বিশ্বকাপে আগুনে উত্তাপ ছড়ানো দ্বৈরথ। অন্যদিকে ভাল ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি বিরাট কোহলিদের ভাগ্যবানও বলতে হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়া যদি দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে না হারত তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় সত্ত্বেও তাদের পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে ইংল্যান্ডকে মোকাবেলা করতে হতো। এ জন্য প্রোটিয়াদের ধন্যবাদ দিতেই পারে তারা। তবে শিরোপা টার্গেট করে অনেক আগে থেকেই গুছিয়ে আনা দল নিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ফেবারিটের মতো খেলেই সেমিতে উঠে এসেছে কোহলিবাহিনী। ৯ ম্যাচে তারা একটিমাত্র ম্যাচ হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। পরিত্যক্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি। এছাড়া একের পর এক প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে। অবশ্য পুঁচকে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে কোহলিদের ঘাম ঝরে গিয়েছিল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরাট কোহলি। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে আলোচনায় রোহিত শর্মা। অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে পাঁচ সেঞ্চুরির নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় ওপেনার। বল হাতে দুর্দান্ত যাসপ্রিত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামি। অন্যদিকে কিউইদের ভাগ্যবানই বলতে হবে। কেন উইলিয়ামসনের দল মোটেই ভাল ক্রিকেট খেলেনি। ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও ৩ হার এবং পরিত্যক্ত এক ম্যাচ মিলিয়ে তাদের পয়েন্ট ১১। নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারানোর পর পাকিস্তানেরও পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ১১। কিন্তু নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে নিউজিল্যান্ডের। গতবার অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তা পায়নি ব্রেন্ডন ম্যাককুলামরা। এবার কেন উইলিয়ামসনের দল সেই তুলনায় মোটেই ভাল ক্রিকেট খেলছে না। বিশেষ করে তাদের টপঅর্ডার ব্যাটিং পুরোপুরি অধিনায়কের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে প্রথম সেমিতে বিরাট কোহলির ভারতই এগিয়ে থাকবে।
×