ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা ॥ গতি নেই মামলার কার্যক্রমে

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৮ জুলাই ২০১৯

 শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা ॥ গতি নেই মামলার কার্যক্রমে

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের পাশে জঙ্গী হামলার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও গতি নেই চাঞ্চল্যকর এ মামলার কার্যক্রমে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা থাকায় তাদের সময় মতো আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ভয়াবহ এ হামলা মামলায় আদালতে চার্জশীট দিতেই সময় লেগেছে দুই বছর। চার্জশীট দেয়ার পর মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুরু হলেও এরপর আর তেমন কোন অগ্রগতি নেই। এদিকে এ ঘটনার তিন বছর কেটে গেলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি শোলাকিয়া ঈদগাহের আশপাশের এলাকাবাসীর। শোক কাটেনি নিহত ও আহতদের পরিবারে। ভয়াবহ এ জঙ্গী হামলা মামলার বিচার কার্যক্রমও চলছে ধীর গতিতে। শোলাকিয়া হামলা মামলার আসামিরা হলি আর্টিজানসহ দেশের অসংখ্য জঙ্গী হামলা মামলার আসামি। এ জন্য মামলায় হাজির করতে তাদের নিতে হয় বিভিন্ন আদালতে। নিরাপত্তা ইস্যুসহ একই সময় বিভিন্ন স্থানে মামলার হাজিরার তারিখ থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে শোলাকিয়া হামলা মামলার আসামিদের নিয়মিত আদালতে হাজির করা। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে তারা কাজ করছে। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকাল পৌনে নয়টার দিকে ঈদগাহের পাশে সবুজবাগ মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গীরা। ঈদের নামাজ শুরুর কিছু আগে খুশির এইদিনে জঙ্গীদের বোমা আর গুলির শব্দে তখন কেপে ওঠে শোলাকিয়া ময়দানের আশপাশ। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে জঙ্গীদের বন্দুকযুদ্ধ। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। হামলায় পুলিশের দুই কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে স্থানীয় এক গৃহবধূ নিহত হয়। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গী। আহত অবস্থায় আটক করা হয় শফিউল ইসলাম ডন নামে এক জঙ্গীকে। পরে সেও মারা যায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে। হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। আজও সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে এলাকার মানুষকে। জঙ্গী হামলার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক জানান, শোকে কাতর স্বজনরা এখনও রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। কেবলই সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে পড়ে। ছোট ছেলে শুভদেব মায়ের ছবি নিয়ে এখনও কাঁদে। বাইরে কোন কিছুর শব্দ হলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে সে। রাতে ‘মা’ ‘মা’ করে চিৎকার করে প্রায়ই ঘুম থেকে জেগে ওঠে। ঘুমানোর আগে দরজা জানালা ভাল করে বন্ধ করতে বলে আমাকে। আর কোন পরিবারে যেন এমন দুর্যোগ নেমে না আসে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ করাসহ জঙ্গীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে জঙ্গীমুক্ত দেশ গঠন করা গেলেই নিহত ঝর্ণার আত্মা শান্তি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ঘটনাস্থল মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের ইমাম মসজিদের দ্বিতীয় তলা থেকে হামলার পুরো ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি জানান, এমন বর্বরোচিত হামলার পর স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন সময় লেগেছিল। ইসলাম কখনও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। জঙ্গীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে। জানা গেছে, তদন্ত চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শোলাকিয়া হামলায় জড়িত ৫ জঙ্গী নিহত হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সময় আবির রহমান নামে এক জঙ্গী মারা যায়। আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার অপর জঙ্গী শফিউল ইসলাম ওরফে ডনও পরবর্তীতে র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুই বছর পর গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর ৫ আসামির নামে আদালতে চার্জশীট দেয় পুলিশ। এরই মধ্যে চার্জ গঠনের পর জঙ্গী হামলা মামলায় শুরু হয়েছে বিচার কার্যক্রম। তবে জঙ্গীদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হলি আর্টিজানসহ অন্যান্য মামলা থাকায় তাদের নিয়মিত আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, যত দ্রুত সম্ভব মামলাটি নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী ২২ জুলাই কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এ আসামিদের আদালতে হাজির করাসহ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। আসামিরা বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে।
×