ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্জন অনেক বেশি ॥ প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফর

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৭ জুলাই ২০১৯

অর্জন অনেক বেশি ॥ প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফর

উত্তম চক্রবর্তী/এম শাহজাহান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরে প্রত্যাশার চেয়েও অর্জন অনেক বেশি। চীন সফরের সবচেয়ে বড় অর্জনই হচ্ছে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সঙ্কট ‘দ্বিপক্ষীয় সমাধানে’ বিশ্বের তৃতীয় পরাশক্তি এ দেশটির পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস আদায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল কূটনৈতিক তৎপরতায় বিশ্বের বড় বড় সকল দেশ ও জোটের নিরঙ্কুশ সমর্থন আদায়ের পর এবার চীনের কাছ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহযোগিতার আশ্বাস আদায়ের পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। বিদ্যুত-পানিসম্পদ-পর্যটনসহ নয়টি খাতে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের আশ্বাস এবং সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করতেও কূটনৈতিক সফলতা দেখিয়ে শনিবার দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চীনে প্রথম পাঁচ দিনের সরকারী সফরে অর্জিত সাফল্যগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে আগামীকাল সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন সরকারপ্রধান। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের গণবাস্তুচ্যুতি ও মানবতার চরম বিপর্যয়ের পর প্রথমবারের মতো চীন সফরের সুযোগে ওই দেশটির নেতাদের কাছে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশকে আলোচনার মাধ্যমেই এ সঙ্কট সমাধান করতে বলার পাশাপাশি প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন চীনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার সময় একমত পোষণ করে স্পষ্ট করেই বলেছেন, এই সঙ্কট (রোহিঙ্গা) আর ফেলে রাখা যায় না। রোহিঙ্গারা অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে। চীনের অন্য শীর্ষ নেতারাও একমত পোষণ করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই এ সঙ্কটের সমাধান। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ সম্মেলনসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের অকুণ্ঠ সমর্থন আদায়ের পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের মিত্র দেশ বলে পরিচিত শক্তিধর দেশ চীনের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস আদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অর্জন। চীন যদি সত্যিকারেই আন্তরিক হয়, তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত প্রদানের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক অভিজ্ঞ মহল। তাদের মতে, শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু নয়, বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে লাভ-ক্ষতির বিচারে অনেকটাই সুবিধানজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বাড়তি শুল্কের হাত থেকে রক্ষা পেতে চীন থেকে শিল্প-কারখানাও এখন এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসহ আরও কিছু খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এ অবস্থায় চীন সরকারের পাশাপাশি দেশটির ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ বিনিয়োগ করলে দুদেশই যে লাভবান হবে, তা পাঁচ দিনের সফরে বিভিন্ন ফোরামের বৈঠকে অত্যন্ত সফলভাবে তা তুলে ধরতে সফল হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে শীঘ্রই বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ উল্লেখ করার মতো বাড়তে পারে বলেই কূটনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, চীনের সঙ্গে দুই বিলিয়ন প্লাস ডলারের ইনভেস্টমেন্টের চুক্তি তুচ্ছ বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। চীন আমাদের উন্নয়ন পার্টনার। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে; রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। গত ১ জুলাই পাঁচ দিনের সরকারী সফরে ঢাকা থেকে চীনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই চীন সফর নিয়ে আগে থেকেই দেশের রাজনৈতিকসহ অভিজ্ঞ মহলে ছিল একই আলোচনা, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীনের সমর্থন আদৌ আসবে কি না? দুদেশের অর্থ ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের চেয়ে, জ্বলন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুটিই প্রাধান্য পায় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে। বিভিন্ন ফোরামের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সফল কূটনৈতিক তৎপরতা ও সাহসী-অভিজ্ঞ উপস্থাপনায় ঢাকা ও বেজিং দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সম্মত হয়েছে। দেশে ফেরার আগের দিন শুক্রবার চীনের রাজধানী বেজিংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই মতৈক্য হয়। বৈঠক শেষে দুই নেতা প্রথমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সম্মত হয়ে বলেন, এটি অমীমাংসিত রাখা যাবে না। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলেন, এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই বছর পেরিয়ে গেছে। কীভাবে এ সমস্যার সমাধান হবে এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। রোহিঙ্গারা অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যাবে। বৈঠকে উভয় নেতা উল্লেখ করেন যে, এ ব্যাপারে দুই দেশের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে কাজ করবেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তারা মিয়ানমারের ওপর ‘গুড উইল’ কাজে লাগাবেন। চীনে সফরে থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কটের আদ্যপ্রান্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেন এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদানের পর যে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে তাও জোরালোভাবে তাঁদের সামনে তুলে ধরেন। চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা দেশের জন্য পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিক থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ চীনের ‘গুড উইল’ কামনা করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, তাঁর দেশ এর আগেও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে চীনের প্রেডিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা চাই রোহিঙ্গারা ফেরত যাক। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারে যেসব মন্ত্রী কাজ করেন তারা আবারও বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। আশা করা যায়, এতে এ সঙ্কট নিরসনের আরেকটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা এ সঙ্কট সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করব। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুদেশই আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। আমাদের কাছে দুদেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুটিই যেহেতু উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু তারা (চীন) দুদেশের স্বার্থই দেখবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে বোঝানোর বিষয়ে বেজিং ঢাকাকে আশ্বস্ত করেন। দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানের বিষয়ে বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এতে কোন সন্দেহ নাই যে, এটা (রোহিঙ্গা সমস্যা) বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এ ব্যাপারে তিনি চীনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও উল্লেখ করেন। এদিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি) সমঝোতার ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুকি ও অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দুদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিদ্যুত, পানি সম্পদ, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের চাল সরবরাহের লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে ৯টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডিপিডিসি প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন এই অর্থ দিচ্ছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে চীনা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে চীন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরের অর্জন অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রীর সফরে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য এলওসিসহ (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ৯টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের গ্রেট হল অব পিপলে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে উভয় দেশের মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা এতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো হলো- রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য সংক্রান্ত এলওসি। এর আওতায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন আড়াই হাজার টন চাল সরবরাহ করবে। সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচী নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি। ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক। পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুত গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গবর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট। এছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের সঙ্গে দুটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ বেশিরভাগ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এছাড়া পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়োর ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সচিব ড. মোঃ আবু জেনা মোস্তফা কামাল একটি করে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী সফলকালে বিদ্যুত সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা বাড়াতে চীনের সঙ্গে পাঁচটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তিনটি চুক্তির আওতায় বিদ্যুত সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১৪০ কোটি ২৯ লাখ ডলার ঋণ পাবে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) অধীনে ২৮ কোটি ৪ লাখ ডলার ব্যয়ে গ্রিড নেটওয়ার্কের উন্নয়নে একটি কাঠামো চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। এছাড়া অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার অনুদান পাবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চুক্তির আওতায় ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে গবর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট। পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুত গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার করতে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। এই চুক্তির বিষয়ে ডিপিডিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, ১৬৫ কোটি ডলার ব্যয়ে ডিপিডিসির একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই ঋণ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং চীন সরকার ৩৮ কোটি ১০ লাখ ডলার দেবে। বাকি ১০২ কোটি ডলার চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসাবে পাওয়া যাবে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের আওতায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১৪টি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব স্টেশন নির্মাণ এবং ৪০টি ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ডিপিডিসির জন্য কিছু উঁচু ভবন নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে হাতিরপুল এলাকায় একটি টুইন টাওয়ার এবং হাতিরঝিলে ২০তলা একটি ভবন রয়েছে বলে জানান তিনি। চীনা উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান ॥ সফরকারে চীনা উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া পণ্যের বৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়াতে চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বস্ত্র ও চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গত শুক্রবার বিকেলে বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন অংশীদার চীন। নির্মাণ, গতানুগতিক ও বিকল্প বিদ্যুত উৎপাদন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা কোম্পানি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার চীনের সঙ্গে ১ হাজার ২৪০ কোটি ডলারের বাণিজ্যের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। তবে এই বাণিজ্যের বেশিরভাগই যে চীন থেকে আমদানি তাও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় চীনে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ৬৯ কোটি ৫ লাখ ডলার, যা দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ১০ শতাংশেরও কম। আর সদ্য বিদায়ী গত অর্থবছরের ১১ মাসে চীনে রফতানি হয়েছে ৭৮ কোটি ডলারের পণ্য।
×