ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ু ২০ বছর হলেও ৩ বছরের বেশি চলে না;###; নষ্ট বাস ৮০০ ;###; সিন্ডিকেট সক্রিয়

বিআরটিসি বাসখেকো! মেরামতের অযোগ্য ৫২৪ বাস

প্রকাশিত: ১০:২২, ৬ জুলাই ২০১৯

 বিআরটিসি বাসখেকো! মেরামতের অযোগ্য ৫২৪ বাস

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বাসখেকো রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। বিশে^র অন্যান্য দেশে সরকারী পরিবহন সংস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ পরিবহন সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে একেবারেই উল্টো। বিআরটিসিতে নতুন নতুন গাড়ি আমদানি করা হলেও তা টেকে না। লাইফ টাইমের তিন ভাগের একভাগ সময়ও বাসগুলো রাস্তায় চলার নজির নেই। অল্পদিনের মধ্যেই সড়কের বাসের ঠাঁই হয় মেরামত কারখানায়। সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজির কারণে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি ডিপোতে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকা ও আধুনিক মেরামত কারখানার অভাবে সংস্কারের মুখ দেখে না নষ্ট পরিবহন। ঘটনা এমনও আছে নতুন আমদানি করা বাসে দুই মাসের মাথায় ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ছে। সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি বিআরটিসি বাসখেকো হতে চলেছে। যেখানে গাড়ি আসলেই গিলে খায়। বিআরটিসির জন্য গত প্রায় দুই দশকে কেনা সব বাস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে প্রগতির কাছ থেকে মাসিক কিস্তিতে ৪১৭ ভারতীয় টাটা কামিজ বাস কেনা হয়েছিল। এসব বাস ১০ বছর সচল থাকার কথা থাকলেও পাঁচ বছরের মাথায় বিকল হয়ে পড়ে। এখন প্রায় শ’ খানেক বাস কোন মতে সচল আছে বলে জানা যায়। এরপর ২০০৯ সালে চীন থেকে ১২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় কেনা হয় ২৭৯ ডং ফেং বাস। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুই বছরের মাথায় এসব বাস নষ্ট হতে শুরু করে। এখন চলাচলের একেবারেই অযোগ্য ১৫৯টি। বাকিগুলোও ডিপোতে অচল করে রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালে ২৮২ কোটি টাকায় আনা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির ২৫৫টি বাস। প্রতিটি বাসের দাম পড়ে কোটি টাকার বেশি। কারিগরি শাখার তথ্যানুযায়ী, ছয় বছর পার না হতেই ৮১ বাস নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো এখন মেরামত অযোগ্য। ২০১৩ সালে ভারত থেকে ঋণ নিয়ে কেনা আর্টিকুলেটেডসহ ৪২৮ বাসের ৩৩টি বিকল হয়ে গেছে। জানা গেছে, সর্বশেষ দুই মাস আগে নতুন গাড়ি বহর যুক্ত হওয়ার আগে বিআরটিসির অধীনে ছিল ১ হাজার ৪৪৫ বাস। সেগুলোর মধ্যে সচল ৯২১টি। আর অকেজো অবস্থায় ডিপোতে পড়ে আছে ৫২৪ বাস। এর মধ্যে ৩৬০টি বাস বড় ধরনের মেরামত প্রয়োজন। এর বাইরে আরও প্রায় আড়াই শ’ বাস নষ্ট হয়ে থাকে সময়ে সময়ে। আর মেরামত করা ১৬৪ বাস আর্থিকভাবে কার্যকর লাভজনক নয়। বর্তমানে বিআরটিসির বাস চলাচল করে ৩৯১ রুটে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০ বাস নষ্ট। জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটি গত আড়াই বছর ধরে লোকসান গুনছে। বর্তমানে ৯ কোটি টাকার বেশি লোকসান এ প্রতিষ্ঠানের। যে কারণে কল্যাণপুর ডিপো ছাড়া দেশের সবকটি বাস ডিপোতে বেতন বকেয়া পড়েছে। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এছাড়া গত কয়েক বছরে বিআরটিসির কেনা ৫শ’ বাসই এখন ভাঙ্গাড়ি হিসেবে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ২০ থেকে ২৫ বছর রাস্তায় সচল থাকলেও বিআরটিসির বাস কেন ৩-৫ বছরের বেশি চলে না। অথচ যথাযথ পরিচর্যা করলে একেকটি বাস ২০ বছর পর্যন্ত সচল রাখা যায় বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। খোদ বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, বাস কেনার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিআরটিসি মিলে যে কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে বাস দেখে এলেও শেষ পর্যন্ত শতভাগ মান নিশ্চিত করা হয় না। মান যাচাই না করেই প্রতিবার বাস আমদানি করা হয়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে এসব পরিবহন নষ্ট হয়ে যায়। অভিযোগ আছে, ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণেই বিআরটিসি বারবার বাস আমদানিতে ধরা খাচ্ছে। এক পর্যায়ে এসব বাস ডিপোতে ঢুকিয়ে মেরামতের চেষ্টা চলে। মেরামতের নামে যন্ত্রপাতি আরও বিকল ও হারিয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে কিছুদিন পর বেশিরভাগ বাস মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা হয়। নিলামে বিক্রি হয় যন্ত্রপাতি। আবারও তৎপরতা শুরু হয় নতুন পরিবহন আমদানির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থায় হাজারো ভূতে ঘর বেঁধেছে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ডিপো ও মেরামত কারখানা পর্যন্ত সিন্ডিকেট চক্রের কারণেই মূলত অনেক সময় ভাল বাসও অচল হয়ে যায়। বারবার আক্রান্ত হয় রোগে। কিন্তু রোগ আর সারে না। ১৫ বছরের বাস ॥ বাংলাদেশের কাছে ২০১৩ সালে ৩০০ সিএনজিচালিত বাস বিক্রি করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। দাইয়ু কোম্পানির বাসগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল বলা হয়েছিল ১৫ বছর। অথচ ছয় বছর না হতেই বেশিরভাগ বাস লক্কড়-ঝক্কড় হয়ে যায়। এসব বাস মেরামতে বাংলাদেশ সরকারকে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বিআরটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা ৫২ আসনের ৩০০ দাইয়ু বাসের মধ্যে ১৫০ এসি ও ১৫০টি নন-এসি। এর মধ্যে আটটি একেবারেই মেরামতের অযোগ্য। চারটি পুড়েছে রাজনৈতিক আগুনে। বাকি সব বাসেরই লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থা। কিছু বাস ঢাকা-গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিআরটিসি ডিপোতে রেখে একদিন মেরামত করে দু’দিন চালানো হয়। তবে ১৪১টি বাসের জরুরী মেরামত প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে বিআরটিসি হিমশিম খাচ্ছিল বিধায় তারা দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ কোরিয়ারই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইডিসিএফের। আর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনুদানের হাত বাড়িয়েছে দিয়েছে দক্ষিণ কোরীয় সংস্থাটি। তারা যে অনুদান দিয়েছে তাতে এখন ৪০ বাসের মেরামত সম্ভব। নিজস্ব অর্থায়নে মেরামত চলছে আরও ২০টির। আরও ৮১ বাসের মেরামত জরুরী। এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া সহজ ঋণে আমাদের বাস সরবরাহ করেছিল। এখন বাসগুলো মেরামতেও চার লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। এই অনুদান ও সরকারী অর্থায়নে মোট ৬০টি বাস মেরামত করা হচ্ছে। কিছু বাস ইতোমধ্যে সড়কে চলাচলও করছে। আরও ৮১ বাস মেরামত জরুরী। সেজন্য আরও ৩০ লাখ ডলার অনুদান চাওয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে। বিআরটিসি বাস দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাসগুলো কেন দ্রুত নষ্ট হয়। যারা দায়িত্বে আছেন তারা দেখেন না। খবরও নেন না। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নতুন গাড়ি আনার ‘কিছু দিনের মধ্যে’ সেগুলো জরাজীর্ণ হওয়া নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন। ব্যক্তিস্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি যেন আর করা না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন তিনি। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে সংস্থার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বিআরটিসির মধ্যে খুব একটা সুনামের বিষয় নেই। এখানে অনিয়ম দুর্নীতির জঞ্জাল দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে আছে। নানা ধরনের অনিয়ম এখানে। এই নগরীতে হঠাৎ একটা বিআরটিসিতে আমি যখন উঠি তখন দেখি সিটের ‘ছাল-বাকল’ উঠে গেছে, এসি কাজ করে না- এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে। বাইরে থেকে গাড়ির দিকে তাকানো যায় না। নোংরা ময়লা আবর্জনা। গাড়ি আসবে গাড়ির কোন যতœ নেই, কয়দিন পরে ডাম্পিং হয়ে যাবে। এর জন্য বিআরটিসির কর্মীদের দুর্নীতি ও আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে, যদি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের ভালবাসা না থাকে, তাহলে দেশের প্রতি তাদের ভালবাসা আছে সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। নিজেদের পকেটের উন্নয়নে বিআরটিসিকে ব্যবহার করে। সবাইকে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে আছেন, কার কত ইনকাম আমি ভাল করে জানি। কিভাবে ইনকাম হয় তাও জানি। নতুন গাড়ি যাতে ‘সঠিক ব্যক্তির’ হাতে দেয়া হয় সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিআরটিসির গাড়িগুলো মেরামতের অভাবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকালে নষ্ট হয়ে যায়। সঠিক ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব না পড়লে বিআরটিসির আগের পরিণতিই হবে। মাঝে মাঝে আমি হতাশ হই, যখন আমি পরিদর্শনে যাই তখন আমি হতাশ হই, কেন এমন হয়? শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এখন যাত্রা শুরুতে প্রথম রাতে বিড়াল মারতে হবে, কোন আপোস করা যাবে না। যারা দুর্নীতির সঙ্গে বিআরটিসিকে সমার্থক করে ফেলেছে তাদের এখানে থাকার কোন অধিকার নেই। ‘জিরো টলারেন্স’ দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। নামেই ওয়ার্কশপ ॥ বিআরটিসির নিজস্ব দুটি ওয়ার্কশপ থাকলেও সেখানে বাস মেরামতের তেমন একটা সুযোগ নেই। এর মধ্যে গাজীপুরে লগোপাড়ায় অবস্থিত সমন্বিত কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপটি (মেরামত কারখানা) দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। আর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপটি মূলত সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার হালকা গাড়ি (জীপ, মাইক্রোবাস) এবং অল্পসংখ্যক বাস-ট্রাক মেরামতের কাজ করে থাকে। তবে এ ওয়ার্কশপে বিআরটিসির কোন বাসের মেরামত হয় না। জানা গেছে, গাজীপুরের ওয়ার্কশপটি ১৯৮১ সালে ১৪ একর জায়গার ওপর জাপানী কারিগরি ও আর্থিক অনুদানে নির্মিত হয়। এ ওয়ার্কশপে গাড়ি সংযোজন, বডি নির্মাণ ও গাড়ি মেরামত করা হতো। এ ওয়ার্কশপেই ভলভো দ্বিতল বাস-এর বডি সংযোজন করা হয়েছিল। এছাড়া ২০০৯ সালে সরকারের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১১১টি একতলা ও দ্বিতল গাড়ির ভারি মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয় এখানে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে বর্তমানে ওয়ার্কশপের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিআরটিসির বাস চলাচল করে মূলত ১৯ ডিপো থেকে। এর মধ্যে মাত্র দুটি ডিপোতে (কমলাপুর ও কল্যাণপুর) রয়েছে শেডের ব্যবস্থা। সেসব স্থানে গাড়ির সামান্য ত্রুটি সারাতেও দৈনিক ভিত্তিতে বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান নিয়ে আসতে হয়। এছাড়া সংস্থাটির গাড়ি ধোয়ার জন্য নেই কোন ওয়াশিং প্ল্যান্ট। গাড়ি পরিষ্কারের কাজ ম্যানুয়ালি করা হয়। ৪৮টি ভলভোর বেহাল দশা ॥ বিআরটিসি সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে সুইডেন থেকে ৫০টি দোতলা ভলভো বাস কেনা হয়। এগুলো রাস্তায় নামানো হয়েছিল ২০০২ সালে। ৬ বছরের মাথায় নষ্ট হতে শুরু হলে মেরামত করা হয়নি ৪৮টির। ৫০টি দ্বিতল ভলভো বাসের মধ্যে এখন চলছে মাত্র দুটো। অচল বাসগুলো পড়ে আছে মিরপুর-১২ ও গাজীপুর ডিপোতে। সূত্র জানায়, এক কোটি তিন লাখ টাকা দাম পড়েছিল একেকটি বাসের। সুইডেন থেকে আমদানি করা এ বাসগুলোর জীবনকাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। কিন্তু যথাসময়ে যন্ত্রাংশ লাগানো না হওয়ায় অচল হয়ে গেছে। জানা গেছে, ভলভো বাসগুলো মানসম্মত ছিল না। বাস কেনা হলেও যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। তাছাড়া এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বেশি। জোড়া বাসের দেখা নেই ॥ দোতলা ভলভোর চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কেনা হয়েছিল ৫০টি জোড়াবাস। ৫৪ ফুট লম্বা এ জোড়াবাসের বাহারি নাম ‘আর্টিকুলেটেড বাস’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বাস চলে। সেটা দেখে অনেকটা ‘শখের বশেই’ আমাদের দেশেও এটি আনা হয়। একেকটি জোড়াবাসের দাম পড়েছিল এক কোটি ১১ লাখ টাকা। এসব বাস কেনার সময় জোড়া লাগানো অংশগুলো পুনর্¯’াপনের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। খুচরা যন্ত্রাংশ কেনা হয়নি। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই বেশিরভাগ বাস অচল হয়ে পড়ে। অন্যান্য বাসের চিত্র ॥ সূত্র জানায়, সিঙ্গেল ডেকার বাসের মধ্যে কোরিয়া থেকে আনা হয় ২৫৩টি, এর মধ্যে ১৮৫টি নষ্ট। চীন থেকে আনা হয় ২৪৫টি সিঙ্গেল ডেকার বাস। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে আছে ১২৭টি। ভারত থেকে আনা হয়েছিল ৪৪৩টি সিঙ্গেল ডেকার বাস। নষ্ট হয়ে আছে ১৮৮টি। ভারত থেকে কেনা হয়েছিল ৪৫৮টি ডাবল ডেকার বাস। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ১৫২টি। ২০১২ সালে কোরিয়া থেকে কেনা ৪৫টি বাস এবং ভারত থেকে কেনা ৩০টি বাসই বিকল হয়ে গেছে। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় আগুনে পুড়ে অচল হয়েছে ৫টি বাস। এর আগে ২০১০ সালে নরডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এনডিএফ) ঋণে চীন থেকে কেনা ২৭৫টি বাসের মধ্যে ১১৫টিই অচল হয়ে আছে বিভিন্ন ডিপোতে। প্রসঙ্গত, বিআরটিসির বিভিন্ন ধরনের বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪৫টি। এর মধ্যে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে ৫২৪টি। কোন কোন বাস কেনার অল্প সময়ের মধ্যেই অচল হয়ে গেছে। সচল বাসের মধ্যে ঢাকায় চলছে ৬২০টি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী অফিসের স্টাফ বাস ২৭২টি। সাধারণ যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রয়েছে ৩৪৮টি বাস। এর মধ্যে আবার বেসরকারী খাতে ইজারায় চলছে ৮৮টি বাস। আর ঢাকার বাইরে চলাচল করছে ৩০১টি বাস। দুই মাসের মাথায় ফুটো হলো বিআরটিসি বাস ॥ মাত্র দুই মাস আগে ভারতীয় ঋণে কেনা বিআরটিসি বাসে মারাত্মক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিশে^র মধ্যে নামীদামী গাড়ি উৎপাদক কোম্পানি টাটার বাসে বৃষ্টির পানি পড়ছে ছাদ ফুটো হয়ে। গাবতলী ডিপোতে গত ১৬ এপ্রিল এবং ১০ মে দেয়া আটটি নতুন বাসেই দেখা দিয়েছে এই সমস্যা। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত থেকে অশোক লিল্যান্ডের ৩০০ দ্বিতল, ২০০ একতলা এসি বাস কেনা হয়। গত ১৫ জুন বিআরটিসির উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বাসে ত্রুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন গাবতলী ডিপো ম্যানেজার মোঃ মনিরুজ্জামান। বিআরটিসি বরিবার দেয়া এ চিঠিতে বলা হয়েছে- গাড়িগুলোর ছাদ দিয়ে বৃষ্টির সময় ভেতরে পানি পড়তে দেখা যায়। বাসের ছাদে যে এমএস শিট দেয়া হয়েছে, তা অতিমাত্রায় পাতলা। শিট ছিঁড়ে ভেতরের রিভিট বের হয়ে এসেছে। যার কারণে রিভিটের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে সিলিং বেয়ে পানি ভেতরে পড়ছে। এমএস শিট রিভিট থেকে আলগা হওয়ায় গাড়ি চলার সময় বিরক্তিকর শব্দ সৃষ্টি হয়। বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বাসগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বাসের ইঞ্জিন টাটার তৈরি হলেও, বডি এসিজিএল গোয়া নামের একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি। চুক্তি অনুযায়ী, তারা দুই বছর বিক্রয়োত্তর সেবা দেবে। তাদের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে এসে সমস্যার সমাধান করে দেবে। তবে ভারত থেকে কেনা বাসগুলোর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ২০ বছর।
×