ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ লাখ টন বিদেশে বিক্রির অনুমতি ;###; লাভবান হবে কৃষক

রফতানি হচ্ছে চাল ॥ ধানের দাম নিশ্চিত করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:১৯, ৬ জুলাই ২০১৯

রফতানি হচ্ছে চাল ॥ ধানের দাম নিশ্চিত করার উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ ধানের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে শীঘ্রই ১৫ লাখ টন চাল রফতানির অনুমতি দেয়া হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদন খরচের চেয়ে কমদামে বিক্রি হচ্ছে ধান। জাত ও মানভেদে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৮ টাকায়। গত এক বছরে চালের দাম হ্রাস পেয়েছে ১০-১৮ শতাংশ পর্যন্ত। এতে উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারমূল্যের সমন্বয় না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষী। কৃষকরা ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে দীর্ঘমেয়াদে চালের বাজারে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই বাস্তবতায় রফতানির মাধ্যমে ধানের সঠিক দাম নিশ্চিত করা হবে। জানা গেছে, ধানের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পদক্ষেপ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ধান চাষীদের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য চাল আমদানির ওপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং সম্প্রতি আরোপিত ২৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্য যেমন ডাল, গম, পেঁয়াজ ভোজ্যতেলের কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি দেশের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। এ কারণে কৃষিখাতের প্রধান উপকরণ বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক প্রভৃতি আমদানিতে শূন্য শতাংশ শুল্ক অব্যাহত রাখা হয়েছে। এদিকে, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত বোরো ধানের দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে রফতানির বিষয়টি সামনে এসেছে। উৎপাদিত ধান সরকারীভাবে কেনার উদ্যোগ থাকলেও গুদাম সঙ্কটের কারণে তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকারীভাবে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে চাল আমদানি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, চালের একটি বড় অংশ আমদানি করা হয়ে থাকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে। কিন্তু ধানের বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান এখন দেশে মজুদ হয়েছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে ধানের দাম কমে যায়। দেশের বেশিরভাগ জায়গায় উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে ধান বিক্রি হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে চাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধান রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হলে এর প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে ধানের দাম কিছুটা বাড়বে। এতে কৃষক লাভবান হবে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সাক্ষাত করে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল চাল রফতানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সবদিক থেকে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার। কীভাবে ও কোথায় চাল রফতানি করা হবে তার কৌশল ঠিক করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সর্বশেষ বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বেও সম্প্রতি চাল রফতানির বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে চাল রফতানির অনুমতি প্রদানে কৃষি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বিশেষভাবে পর্যালোচনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন চাল রফতানি করার অনুমতি দিবে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টন চাল রফতানি করার পক্ষে। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, চাল রফতানির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সবার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান করা হবে। সরকার কৃষকের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে সচেতন রয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকের ধানের দাম কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বাম্পার ফলনে এবার দেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ টনে পৌঁছেছে। মোট ধান উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৫৫ লাখ টন। এর মধ্যে বোরো উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ টন। দেশে চালের মোট চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ টন। বাড়তি ৭০-৭৫ লাখ টন চালের মধ্যে মিলারদের কাছে একটি বড় অংশ মজুদ থাকে। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবে ১ লাখ ৫০ হাজার টন এবং চাল সংগ্রহ করবে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন। গত এক বছরে মোটা চালের দাম এখন সবচেয়ে কম ॥ গত এক বছরের মধ্যে মোটা চালের দাম এখন সবচেয়ে কম। জাত ও মানভেদে রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল ৩৪-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এক বছর আগে এই চাল কিনতে একজন ভোক্তাকে গুণতে হয়েছে ৪৮-৫২ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম সামাল দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সেই সময় ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যান্য সোর্স থেকে চাল আমদানি করে থাকে। চালের পাশাপাশি ব্রাজিল ও রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ গম আমদানি করা হয়। এরই মধ্যে বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের ফলে দেশে এখন পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ হয়েছে। সরকারী নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি’র তথ্যমতে, গত এক বছরে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো সরু চালের দাম কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতার দাম হ্রাস পেয়েছে ১০ শতাংশ। এছাড়া মোটা চাল হিসেবে খ্যাত স্বর্ণা ও চায়না ইরির দাম কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমান প্রতিকেজি নাজিরশাইল উত্তম মানের চাল ৫২-৫৬, সাধারণ নাজির ও মিনিকেট ৪৮-৫২, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪৮-৫০ এবং মোটা চাল ৩৪-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
×