ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিবিসির গবেষণা প্রতিবেদন

জিনজিয়াংয়ে মুসলিম শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৬ জুলাই ২০১৯

 জিনজিয়াংয়ে মুসলিম শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন

বিবিসির নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চীনের মুসলিম শিশুদের সম্বন্ধে এক ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম শিশুদের পরিবার, ভাষা ও তাদের বিশ্বাস থেকে আলাদা করা হচ্ছে। শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে হাজারো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বিশাল ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। দ্রুতগতিতে বোর্ডিং স্কুল তৈরির বিশাল কার্যক্রম চলছে সেখানে। চীনের ওই অঞ্চলে শিশুদের সঙ্গে যা ঘটছে, চীনের বাইরে বাস করা কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতকারের মাধ্যমে বিবিসি তার বহু প্রমাণ হাতে পাওয়ার দাবি করেছে। রেকর্ডে দেখা যায়, একটি শহরের ৪০০-এর বেশি শিশুর মা-বাবা ক্যাম্পে কোন না কোনভাবে আটক আছেন। শিশুদের কেন্দ্রীয়ভাবে কোন যত্নের প্রয়োজন আছে কি না, তা আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। জিনজিয়াংয়ের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের পরিচয় রূপান্তরের প্রচেষ্টাসহ শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা পদ্ধতিগত কর্মসূচী চালানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। চীনে কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের কারণে বিদেশী সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা অনুসরণ করা হয়। ফলে চীন থেকে কোন প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন। তবে তুরস্কে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। ইস্তানবুলে বড় একটি হল রুমে এক ডজনের বেশি লোক তাদের গল্প বলেছেন। তাদের অনেকের সন্তান পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চীনে রয়ে গেছে। তিন সন্তানের ছবি দেখিয়ে এক মা বলেন, ‘সেখানে তাদের দেখাশোনা কে করছে জানি না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।’ তিন ছেলে ও এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে আরেক মা বলেন, ‘আমি শুনেছি তাদের এক এতিমখানায় রাখা হয়েছে।’ ৬০টির মতো পৃথক সাক্ষাতকারে ১০০ শিশুর উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা শোনা যায়। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তারা উইঘুর পরিবারের। মানবাধিকার গ্রুপগুলো অভিযোগ করে আসছে, সন্ত্রাস দমন অভিযানের নামে চীনা কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়ন চালাচ্ছে। বেজিং উইঘুর মুসলিমদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে বছরের পর বছর ধরে তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, সহিংস ধর্মীয় উগ্রপন্থা ঠেকাতে উইঘুরদের ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণ বলছে, অনেকেই ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রার্থনা বা পর্দার কারণে ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। অনেকে আবার তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় ক্যাম্পে আটক থাকতে হচ্ছে। যারা সেখানে আছেন, তাদের বিদেশে কথা বলাও ভয়ানক বিপদের কারণ। এক ব্যক্তি বলছেন, চীনে তার স্ত্রীকে ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তার ৮ সন্তান এখন চীনা কর্তৃপক্ষের হেফাজতে। তাদের সম্ভবত শিশু শিক্ষা ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। বিবিসির অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় ওই শিশুদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তাই উঠে এসেছে। জার্মানির গবেষক এ্যাড্রিয়ান জেনজ দেখেছেন, জিনজিয়াংয়ে স্কুল সম্প্রসারণের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। নতুন ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এখন রাষ্ট্র অনেক শিশুর ২৪ ঘণ্টা তদারকির সক্ষমতা অর্জন করেছে। একই সঙ্গে তারা জিজ্ঞাসাবাদের ক্যাম্প তৈরি করছে। এসবই মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘু শিশুদের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির হার ৯০ শতাংশ বেড়েছে।
×