ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জিব্রালটারে ইরানী তেলবাহী জাহাজ আটক ॥ ব্রিটেনের পদক্ষেপের প্রশংসায় ওয়াশিংটন

ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৬ জুলাই ২০১৯

ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব

তেলবাহী জাহাজ আটক করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইরান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জিব্রাল্টার প্রণালী দিয়ে সিরিয়া যাওয়ার পথে জাহাজটি আটক করা হয়। সিরিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দামেস্ক অভিমুখী এ জাহাজ আটক করে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সদস্যরা। ইরানের জাহাজ আটকের এই ঘটনাকে অত্যন্ত ভাল খবর বলে আখ্যা দিয়েছে ওয়াশিংটন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। জাহাজটিতে ৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল ছিল। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাহাজ জব্দের এ ঘটনাকে ‘একধরনের দস্যুতা হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। অবশ্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তেহরানের এ মন্তব্যকে ‘বাজে কথা’ বলে উড়িয়ে দয়েছে। খবর বিবিসি ও আল জাজিরা অনলাইনের। ব্রিটেনের অভিযোগ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানের ওই তেলবাহী জাহাজটি সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিল। তবে ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, যুক্তরাজ্য সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে তাদের তেলবাহী জাহাজ আটক করেছে। ইরানের সরকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মুসাবি বলেছেন, তাদের তেলবাহী জাহাজ অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে। তাই ইরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ম্যাকাইরকে তলব করা হয়। এ সময় তেহরান এ ঘটনার কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানায়। আব্বাস মুসাবি আরও বলেন, ব্রিটেনের এ পদেক্ষেপ চরম রীতিবিরুদ্ধ। কারণ তারা যে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে তা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আরোপ করা হয়নি এবং জাহাজ আটকের এ ঘটনা ইরান মানবে না। জিব্রাল্টার প্রশাসনকে সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্য থেকে ৩০ নৌ-সেনার একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। গোলাগুলি বা বড় ধরনের অঘটন ছাড়াই অভিযান শুরু করে ওই সেনাদল এবং সফল হয়। স্পেনের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ বোরেল বলেন, গ্রেস-ওয়ান নামের ওই জাহাজ আটক করতে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বিবিসির সাংবাদিক জোনাথন মার্কস বলেছেন, জাহাজ আটকের মানে এই নয় যে যুক্তরাজ্য ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বরং ব্রিটিশ সরকার এই আটকের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইইউর নিষেধাজ্ঞা আরও কার্যকর করছে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। ইরানের তেলবাহী জাহাজ আটকের ঘটনায় ব্রিটেনের প্রশংসা করেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। এ ঘটনার প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার বোল্টন তার টুইটার পেজে লিখেছেন, চমৎকার সংবাদ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে সিরিয়া অভিমুখে ইরানি তেল নিয়ে যাওয়ার সময় সুপার ট্যাংকার গ্রেস- ওয়ানকে ব্রিটিশ সেনারা আটক করে ভাল কাজ করেছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরান এবং সিরিয়াকে এ ধরনের অবৈধ বাণিজ্য থেকে বিরত রাখবে। কেননা এই ধরনের অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে তেহরান ও দামেস্ক লাভবান হচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র মুখপাত্র বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইরানের তেলবাহী জাহাজ আটকের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ সিরিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ‘খুনী শাসনব্যবস্থা’ যেন মূল্যবান সম্পদ না পায় তা নিশ্চিত করতেই রাজকীয় নৌবাহিনী ও জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষ ট্যাঙ্কার জব্দের ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়েছিল। পাশাপাশি জিব্রাল্টার সরকারও জাহাজ আটকের এই ঘটনাকে সঙ্গত বলে দাবি করেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, গ্রেস-ওয়ান জাহাজটি অপরিশোধিত তেল নিয়ে সিরিয়ার বোনিয়াস শোধনাগারে যাচ্ছিল। এই শোধনাগারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জিব্রাল্টারের মুখ্যমন্ত্রী ফ্যাবিয়ান পিকারদো বলেন, আমার জানামতে আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সহায়তায় এই জাহাজ আটক করেছে। স্পেনের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ বোরেল বলেছেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষ এ তেলবাহী ট্যাঙ্কারটিকে আটক করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা ও মানবতাবাদীরা বলছেন, ইরানি এ তেল সিরিয়ার জনগণের জন্য নেয়া হচ্ছিল যা নিতান্তই মানবিক বিষয়। এ জাহাজ আটক করে ব্রিটিশ সরকার অন্যায় কাজ ও মানবতা-বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই এ জাহাজ আটকের ঘটনা ঘটল। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত এক পরমাণু চুক্তি থেকে ওয়াশিংটন বেরিয়ে গেলে এ উত্তেজনা দানা বাঁধতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে। যদিও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা এ পথে হাঁটেনি। ওয়াশিংটন গত মাসে হরমুজ উপকূলের কাছে দুটি তেলবাহী জাহাজে মাইন হামলার জন্য তেহরানকে দায়ী করলেও ইরান তা উড়িয়ে দিয়েছে। কয়েকদিন পর ইরান তাদের ‘আকাশসীমায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়া’ একটি মার্কিন ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করলে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। ‘ইরান খুব বড় ভুল করেছে,’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেসময় এমন হুঙ্কারও দিয়েছিলেন। ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বিমান হামলা চালানোর পরিকল্পনা করলেও, পরে সেখান থেকে পিছু হটে। আবার ব্রিটিশ-ইরানি নারী নাজনীন জাহারি-রেটক্লিফের কারাদণ্ড নিয়েও লন্ডন ও তেহরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৬ সালে ইরান ওই নারীকে ৫ বছরের সাজা দেয়; নাজনীন অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
×