ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে খেলাই বড় অর্জন ওয়াহাব রিয়াজের!

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৫ জুলাই ২০১৯

 বিশ্বকাপে খেলাই বড় অর্জন ওয়াহাব রিয়াজের!

জাহিদুল আলম জয় ॥ যুগে যুগে পাকিস্তানী ক্রিকেটে এসেছে তারকা সব পেসার। গতির ঝড় তুলে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন পাকি বোলাররা। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, আকিব জাভেদ, শোয়েব আকতার বিভিন্ন সময়ে মাতিয়েছেন ক্রিকেট মঞ্চ। বর্তমান সময়ে এমন তারকা পেসার পাকি শিবিরে নেই বললেই চলে। মোহাম্মদ আমির শুধু নামটা ধরে রেখেছেন। এর বাইরে অন্যরা নিজেকে তেমন আলোকিত করতে পারেননি। ওয়াহাব রিয়াজের ভাল সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ‘বাবা’র আকস্মিক মৃত্যুতে ক্রিকেটে পূর্ণ মনোনিবেশ দিতে পারেননি লাহোরের এই ক্রিকেটার। ৩৪ বছর বয়সী বাঁহাতি এই পেসারের চলমান বিশ্বকাপই খেলার কথা ছিল না। শেষ পর্যন্ত দলে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। পাকিস্তানের সর্বশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয়ে তার অবদান অসামান্য। শেষদিকে আফগানদের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য পাকিদের দরকার ছিল ২০ বলে ২২ রান। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাত্র আট বলে ১৪ রান করে পাকিস্তানকে মহাগুরুত্বপূর্ণ জয় পাইয়ে দেন। ওই জয়ের কারণেই আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে খেলার ক্ষীণ সম্ভাবনা নিয়ে মাঠে নামতে পারছে ইমরান খানের দেশ। তবে যেমনই হোক, ওয়াহাব বিশ্বকাপে খেলতে পেরেই খুশি। কেননা একটা পর্যায়ে তার ক্রিকেটই খেলার কথা ছিল না! ২০১৭ সালের পর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন ওয়াহাব। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাবেন কি পাবেন না এ নিয়েও ছিল অনেক প্রশ্ন। প্রাথমিক স্কোয়াডেও ছিলেন না। কিন্তু পাকিদের প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হক অভিজ্ঞতার গুরুত্ব দিয়ে তাকে দলভুক্ত করেন। সুযোগ পেয়ে সেটা কাজেও লাগিয়েছেন। বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ১০। গড়টা ৩৬.৭০। দুটি ম্যাচে সøগ ওভারে এসে গতি ও রিভার্স সুইংয়ে দলকে জিতিয়েছেন ওয়াহাব। আরেক ম্যাচে জিতিয়েছেন ব্যাট হাতে। দুই বছর হলো পাকিস্তানী এই পেসারের বাবা মারা গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন। সেই দুঃস্মৃতি স্মরণ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাঁচা-মরার ম্যাচে মাঠে নামার আগে ওয়াহাব রিয়াজ বলেন, আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম কারণ আমার বাবাকে ভীষণভাবে ভালবাসি। যখন তিনি ছিলেন কখনই আমাকে কোন দায়িত্ব নিতে দিতেন না। শুধু আমাকেই না, পরিবারের কাউকেই দিতেন না। বাবা যখন মারা গেলেন তখন থেকে আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, অনেক কিছুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি ক্রিকেটের প্রতি মনোযোগী ছিলাম না তাই পাকিস্তান দলে আমি নিয়মিত হতে পারিনি। এমন অবস্থায় এটা করাও কঠিন। এরপরও আমি যে বিশ্বকাপে খেলছি এটাই আমার অনেক বড় অর্জন। ইতোমধ্যে বিশ্বকাপে চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে তিন দলই নিশ্চিত হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এখন বাকি আছে শুধু শেষ জায়গাটি। এই একটি জায়গার জন্য লড়াই করছে দুই দল নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান। তবে পয়েন্ট টেবিলের এখন যে অবস্থা তাতে বলা যায় সেমিতে যাওয়া একপ্রকার নিশ্চিতই হয়ে গেছে কিউইদের। কেননা সেমিতে যেতে হলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে পাকিদের। চেস্টার লি স্ট্রিটে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ইংলিশদের জয় পাওয়ার পরই ১৯৯২ চ্যাম্পিয়নদের সব আশা শেষ হয়ে গেছে। কাগজে কলমে শুধু সূক্ষ্ম হিসেব বাকি আছে। সেই সূক্ষ্ম হিসেব মতো, পাকিদের সেমিফাইনালে যাওয়া নির্ভর করছে আসরের শেষ ম্যাচে অনেক সমীকরণের ওপর। আজকে ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেভাবেই হোক টস জিতে আগে ব্যাট করতে হবে পাকিস্তানকে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে হারাতে হবে তিন শ’রও বেশি রানে। যদি কোন মতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তখনই ভেঙ্গে যাবে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল স্বপ্ন। কারণ বাংলাদেশ যে স্কোরই দাঁড় করাক না কেন, পাকিস্তানকে সেটা টপকাতে হবে এক বলে! এমন অসম্ভব সমীকরণ পাকিস্তান যে কোনভাবেই পূরণ করতে পারবে না, তা ভালমতোই জানেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ ইউসুফ। তার মতে বাংলাদেশের ওপর বজ্রপাত না পড়লে তাদের এতো বেশি রানে হারানো সম্ভব নয়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা সাবেক তারকা এই ব্যাটসম্যান বলেন, বিশ্বকাপ থেকে যে পাকিস্তান বাদ পড়ে গেছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যদি কোনমতে বাংলাদেশ দলের ওপর বজ্রপাত পড়ে এবং তারা যদি ১০ রানে অলআউট হয়ে যায়, তখনই আমাদের সেমিতে যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে এই ব্যাপারটা প্রায় অসম্ভব।
×