ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লর্ডসে জ্বলে উঠবে তামিমের ব্যাট?

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৫ জুলাই ২০১৯

 লর্ডসে জ্বলে উঠবে তামিমের ব্যাট?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের পক্ষে তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই সর্বাধিক রান, সেঞ্চুরির মালিক বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। গত কয়েক বছর ধরেই ফর্মের তুঙ্গে আছেন এবং অনেক আগে থেকেই অন্যতম নির্ভরতার নাম তিনি। সেই তামিমের চলতি বিশ্বকাপ কেমন গেল? দলের নৈপুণ্য, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নৈপুণ্যের সঙ্গে বিবেচনায় রাখলে একেবারেই ম্লান তামিম। কিন্তু অবাক হলেও সত্য যে এই বিশ্বকাপেই তামিম সবচেয়ে ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন! আগে যে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন তামিমের ব্যাটিং নৈপুণ্য ছিল ভয়াবহ রকমের বাজে! তবে ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপে এসে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন এখন পর্যন্ত। তবে প্রত্যাশা মাফিক নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি, হতাশ করেছেন ভক্ত-সমর্থকদের। তবে আজ দলের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ সুযোগ তার জ্বলে ওঠার। কারণ ম্যাচটি লর্ডসে। ‘ক্রিকেট মক্কা’ হিসেবে খ্যাত এ ঐতিহাসিক ভেন্যুতে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মর্যাদার ‘অনার্স বোর্ডে’ নাম লিপিবদ্ধ করেছেন বাঁহাতি তামিম। তবে সেটি ছিল টেস্ট ম্যাচ। এ ভেন্যুতে আজ প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ। পুরো আসরে নিষ্প্রভ তামিম আজ ২০১০ সালের মতোই জ্বলে উঠবেন এমন প্রত্যাশা ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের। বিশ্বকাপ গত ৩০ মে মাঠে গড়িয়েছে। গত বছর ৩০ মে থেকে চলতি বছর ৩০ মে পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় বাংলাদেশের পক্ষে সেরা অবস্থানে মুশফিকুর রহীম। তিনি ২১ ম্যাচে ৫২.৫০ গড়ে ৮৪০ রান করেছিলেন। আর তামিম এই সময়ে মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলেই ঈর্ষণীয় ৫৬.১৮ গড়ে করেছেন ৬১৮ রান। সেই তামিম বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে দারুণ কিছুই উপহার দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু একেবারেই ম্লান তিনি। নামের সুবিচার করতে পারেননি দলের অন্যতম অপরিহার্য ব্যাটসম্যান হিসেবে। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে তিনি মাত্র একটি অর্ধশতক হাঁকাতে পেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহ্যামে ৬২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টন্টনে খেলেছিলেন ৪৮ রানের একটি ইনিংস। এছাড়া বাকি ম্যাচগুলোয় তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে- ১৬, ২৪, ১৯, ৩৬ ও ২২ রান! তার নামের পাশে এই সংখ্যাগুলো একেবারেই বেমানান। যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্বপ্নই ছিল সেমিফাইনালে যাওয়ার সেখানে তামিমের মতো কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের উইলো থেকে এমন ম্লান পারফর্মেন্স হতাশা উপহার দিয়েছে দলকে। অথচ সেখানে সাকিব আল হাসান ৭ ম্যাচে ৫৪২ আর মুশফিক ৩৫১ রান করেছেন। এ দু’জনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কল্যাণেই ৩টি ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ এবং সেমিতে ওঠার স্বপ্ন জিইয়ে রাখে। কিন্তু সাকিব-মুশফিককে দেখে আর কেউ উজ্জীবিত হতে পারেননি, এমনকি তামিমও! তামিমের ব্যর্থতা নিয়ে যতই আলোচনা করা হোক, এবারই কিন্তু তিনি সফলতম বিশ্বকাপ আসর কাটিয়েছেন। নিজের সেরা পারফর্মেন্সকে ছাড়িয়ে গেছেন নিয়মিত কিছু না কিছু রান করে। বড় ইনিংস বলতে শুধু ৬২ রানের ইনিংসটি হলেও সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচে করেছেন এবার ৩২.৪২ গড়ে ২২৭ রান। এক বিশ্বকাপে এটিই সর্বাধিক রান করার কীর্তি তামিমের। এর আগে এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক ১৭২ রান করতে পেরেছিলেন তিনি। সেটি ২০০৭ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ছিল তার। ৯ ম্যাচে ১ ফিফটিতে ১৯.১১ গড়ে সেই রান করেছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে তিনি করেন আরেকটি ফিফটিসহ ৬ ম্যাচে ২৬.১৬ গড়ে ১৫৭, ২০১৫ বিশ্বকাপে ২৫.৬৬ গড়ে ৬ ম্যাচে এক ফিফটিতে ১৫৪। অর্থাৎ বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে কখনই আলো ছড়াতে পারেননি তামিম। এবারও তা দেখা গেছে। তবে পূর্বের পারফর্মেন্স থেকে নিজের উন্নতি ঘটিয়েছেন। সেটিকে আরও ভাল করার শেষ সুযোগ আজ তার জন্য। সে জন্য দারুণ এক পয়া ভেন্যুও পাচ্ছেন। লর্ডসে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেই ইনিংসটির জন্য প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘অনার্স বোর্ডে’ নাম লিখেছেন তামিম। ৯ বছর পর আবার সেই ঐতিহাসিক লর্ডসে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন তামিম। বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যান এখানে শতক হাঁকাতে পারেননি। অবশ্য দুই টেস্ট ছাড়া বাংলাদেশ দল এ ভেন্যুতে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। সেদিক থেকে তাই তামিমই আজ বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম নির্ভরতা। ৯ বছর আগের স্মৃতি মনে করে আজ জ্বলে উঠতে পারবেন তামিম? নিজেকে আবার আলোয় ফেরাতে পারবেন বড় একটি ইনিংস উপহার দিয়ে?
×