ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশার রাজ্যে আশার আলো ॥ তাড়া করছে অসহায়ত্ব

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৫ জুলাই ২০১৯

হতাশার রাজ্যে আশার আলো ॥ তাড়া করছে অসহায়ত্ব

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৪ জুলাই ॥ পঞ্চম পেরিয়ে থমকে যায়। অভাবের তাড়নায় ঢাকায় গিয়ে সুতার কারখানায় কেটেছে দুই বছর। হাল ঠেলেছে সংসারের। ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণীর লেখাপড়া হয়নি। দারিদ্র্য যেন সব পথ রুদ্ধ করে দেয়। কিন্তু দমেনি সে। জীবিকা যুদ্ধের লড়াই যতই কঠিন ছিল কিন্তু শিক্ষার স্বপ্ন কখনও মন থেকে মুছে যায়নি। ধূসর, বিবর্ণ জীবনে লেখাপড়ার রঙিন স্বপ্নের জাল বুনত। ভর্তি হয় অষ্টমে, এলাকায় চরচাপলী ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছিল জমানো কিছু টাকা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুরু করে টিউশনি। সীমাহীন কষ্টে এসএসসি পাস। কিন্তু সাফল্য শতভাগ। জিপিএ-৫। হতাশার রাজ্যে আশার আলো। টিউশনির জমানো ১২ শ’ টাকায় কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। কিন্তু এখন আর চলে না। বিজ্ঞান বিভাগের বইসহ সকল খরচ কীভাবে, কোথা থেকে জোটাবে তা ভেবে সব অন্ধকার দেখছে। কাটে বিনিদ্র রাত। পুরো নাম মানসুরা মীম। বাবা নাসির হাওলাদার রিক্সা চালান। মা জাকিয়া বেগম নানান জটিল রোগে শয্যাশায়ী। টানা দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন বাড়িতে পড়ে আছেন। উন্নত চিকিৎসা তো দূরের কথা, ওষুধ ঠিকমতো চলে না। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার চরচাপলী গ্রামে মীমের বাড়ি। বাড়ি বলতে এক চালের একটি ঘর। সঙ্গে বারান্দা। শ্রমজীবী বাবার আয়ে চারজনের পেটের যোগান চলে না। মায়ের চিকিৎসা আটকে আছে। এক ভাই পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। আলাইহীমের লেখাপড়াও অনিশ্চিয়তার দোলাচলে। এখন সংসারের রান্নার কাজ। অসুস্থ মায়ের সেবা করা। টিউশনি করতে সময় বের করা। এরপরে নিজের লেখাপড়ার সময়। এতেই মীমের অবস্থা ত্রাহি। বই কেনা হয়নি। কবে কিনবে জানেও না। আর্থিক দৈন্য যেন কোমলমতি কিশোরীর টুটি চেপে ধরেছে। বোঝাতে পারে না কতটা অসহায় তার আগামীর পথচলা। যেন দু’চোখে সব অন্ধকার দেখছে মেধাবী মীম। মায়ের চিকিৎসার অসহায়ত্বে মীম ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে কখনও। কিন্তু স্বপ্ন কী বাস্তবে পরিণত হবে! এমন কোন সম্ভাবনার আলো দেখছে না মীম। সব যেন ফের স্বপ্নেই মিলে যায়। একরাশ হতাশা নিয়ে কিশোরী মীম বলে, হয়ত শ্রমিক হতাম। নিজের খেয়ালে এখন কলেজের ছাত্রী। যেন নতুন যুদ্ধে নেমেছে সে। যেখানে জয়ী হওয়ার কোন পথ জানা নেই। মীমের ভাষ্য, ‘কতই না কষ্ট করেছি। উপোস কিংবা আধাপেটে দিনের পর দিন পার করেছি। তারপরও ভাল ফল করেছি। কিন্তু এখন সামনের পথ খুঁজে পাই না।’ মীমের কথায় যেন নিজের গলাও আটকে যাচ্ছিল। শুধুই অসহায়ত্ব ওকে তাড়া করছে। যেখানে দৌড়ানোর কিংবা পালানোর কোন পথ ওর জানা নেই। শুধুই মোকাবেলার পথ খুঁজছে হতদরিদ্র পরিবারের এ মীম। কোমর সোজা করে শিক্ষা জীবনের লড়াইয়ে টিকে থাকার আকুতি তার। নইলে একটি মেধাবী মুখ ছিটকে পড়বে সমাজ থেকে। হারিয়ে যাবে চিরদিনের জন্য। মা জাকিয়া বেগম বলেন, মীমের মতো কষ্ট করে কেউ পড়বে না। শিক্ষক নুরুন্নবী জানান, মীম খুবই মেধাবী। কিন্তু ওর পরিবারে এখন ঠিকমতো খাওয়া জোটে না। সেখানে লেখাপড়ার কী হবে।
×