ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৫ জুলাই ২০১৯

 কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ

গ্রামনির্ভর কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সিংহভাগ অর্থনীতি আবর্তিত হয় পল্লী জননীর অফুরন্ত প্রাকৃতিক বৈভবে। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীবিধৌত বাংলার নরম-উর্বর পলিমাটি সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবন প্রবাহে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মানুষ আর প্রকৃতির অনবদ্য মিলন সৌধে গ্রামবাংলার অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেভাবে সময়ের অবারিত স্রোতে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাও সামগ্রিক দেশের অগ্রগামিতার এক অনবদ্য চিত্র। ধনে, ধান্যে, পুষ্পে ভরা আবহমান বাংলা ব্রিটিশ উপনিবেশের করাল গ্রাসে এক সময় নিঃস্ব আর নির্বিত্ত হতেও সময় লাগেনি। সে অন্ধকার যুগ অতিক্রম করে আমাদের শ্যামল বাংলার উর্বর কৃষি অর্থনীতি আজ সুবর্ণ সময়ের দ্বারপ্রান্তে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হওয়ার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় মানুষের যে অবর্ণনীয় দুর্দশা আর পায়ের ঘাম মাথায় ফেলার যে উদয়াস্ত পরিশ্রম তেমন দুঃসময়ও জনজীবনে নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। তার পরেও গ্রামবাংলার কৃষি অর্থনীতিকে সাধারণ কৃষকরা তাদের সবটুকু দিয়ে গতি সঞ্চারই করেনি বাঁচিয়ে রাখতেও প্রাণপণ সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। তেমন দুর্দিনে গ্রামবাংলার সাধারণ গৃহিণীরা শুধু কি সংসার ধর্ম পালন করে রান্নাবান্নায় নিজেদের সংযুক্ত রেখেছে নাকি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও স্বামীদের পাশে সহযোগী শক্তির ভূমিকায় নেমেছে? সভ্যতার আদি ইতিহাসে সাক্ষ্য মেলে নারীরাই নাকি কৃষি সভ্যতার জীব বপন করে। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের ক্রান্তিলগ্নে সভ্যতা সূর্য যখন মাত্র তার প্রভাতের আলো বিকিরণ করে তখনই কৃষি অর্থনীতি এক নবযুগের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়। যাযাবর বৃত্তি এবং বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো বন্য মানুষের জীবনে পশুপালন এবং কৃষি অর্থনীতির যাত্রা শুরু ইতিহাসের এক বিশিষ্ট মাইলফলক। প্রাচীন সমাজবিদদের লেখায় জানা যায় এই সময়ে নারী জাতির ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক এবং অবিস্মরণীয়। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে কর্তৃত্বের আসনে নারীদের মর্যাদায়ই শুধু নয় সন্তানের বংশপঞ্জি এবং সম্পত্তিও মায়ের দিক থেকে নির্ধারিত হলো। পরবর্তীতে এমন পরিবারের বিলোপ সাধন নারী জাতির ঐতিহাসিক পরাজয় এবং সব ধরনের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার যে করুণ আখ্যান সেটাও ইতিহাসের এক বিশিষ্ট পর্যায়। সমস্ত অধিকার হারালেও মূল্যবান শ্রমশক্তি থেকে তারা কখনই আলাদা ছিল না। মমতাময়ী নারীরা স্নেহে, শ্রমে, দায়বদ্ধতায় সব সময়ই সংসার ও পরিবারের হাল ধরেছে, মূল ভিত্তি সংহতও করেছে। তারই অবধারিত পরিণতিতে সভ্যতা সূর্য আজ মধ্য গগনে। গ্রামগঞ্জে যখন আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি, তথ্যপ্রযুক্তি ও যুগের আবেদন নিয়ে জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তার পরেও কৃষি অর্থনীতির চাকা ঘুরেছে। অভাব-অনটনকে সামলিয়ে সাধারণ গৃহস্থরা তাদের প্রতিদিনের কর্মদিবসকে পরিশ্রমনির্ভর করতে এতটুকু পিছপা হয়নি। সেভাবে গৃহস্থ নারীরাও নিজেদের মূল্যবান শ্রমশক্তির মাধ্যমে পারিবারিক সচ্ছলতা যেমন এনেছে অর্থনীতিতেও এসেছে যুগান্তকারী অবদান। কঠোর পর্দা প্রথার আড়ালে নারীদের অন্দর মহলেই সব ধরনের কাজ-কর্ম সামলাতে হতো। সে সময় গ্রামবাংলার প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে গৃহিণীরা সামান্য করে হলেও চাষাবাদের আয়োজন করত। ছোট্ট একটি উঠান অথবা বাড়ির চারপাশের পড়ে থাকা আঙিনায় বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ করত। ঘরে হাঁস, মুরগি পালা হতো। সেখান থেকে শুধু ডিমই নয়, বাচ্চা হাঁস-মুরগি লালন পালনের পর বড় হলে তাও পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি হতো। শাক-সবজিও সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা হতো। এভাবে নারী সেই অনেক সময় থেকে বাংলার কৃষি অর্থনীতিতে সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তখন সবই ছিল পর্দার আড়ালে +গৃহাভ্যন্তরে। সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যেমন জোয়ার এসেছে সেভাবে নারীরাও ঘর থেকে বাইরে পা দিয়ে পুরুষের সহযোগী শক্তির ভূমিকায় তাদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিতও করেছে। এখন ফসলের মাঠে নারী কৃষকের প্রয়োজনীয় ভূমিকা অর্থনীতির এই বিশেষ খাতকে প্রতিনিয়তই শক্তিশালী করে যাচ্ছে। আর তাই প্রাকাশ্যে দিবালোকে কৃষি জমিতে নারীদের সম্পৃক্তকরণ সময়ের যৌক্তিক চাহিদা। নির্ণয়কের ভূমিকায়ও কৃষি অর্থনীতিতে নারীর জোরালো ক্ষমতায়ন আজ স্পষ্টটতই দৃশ্যমান। সংসার সামলাচ্ছে, কৃষিপণ্য উৎপাদন করছে খোলা ফসলী জমিতে, বাণিজ্যিকীকরণেও নারীর সফল অংশগ্রহণ অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করছে। অর্ধাংশ এই গোষ্ঠী যদি উন্নয়নের গতিধারায় অংশ নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সফল অর্থনীতি কখনও সামনে আসবে না। -অপরাজিতা প্রতিবেদক
×