ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডায় উচ্চশিক্ষা অধ্যয়নরত হ্রী ফরহাত

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৫ জুলাই ২০১৯

 কানাডায় উচ্চশিক্ষা অধ্যয়নরত হ্রী ফরহাত

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসরে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশের তরুণী হ্রী উচ্চ শিক্ষায় বিশ্বমানের ডিগ্রী অর্জনে নিজেকে সাবলীলভাবে তৈরি করে যাচ্ছে। দেশ ও আন্তর্জাতিক সীমানায় আধুনিক সময়কে জ্ঞানের অনুষঙ্গ করতে এই প্রাণচঞ্চল শিক্ষার্থী বিদেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে নিতে পিছপা হচ্ছে না। লক্ষ্য শুধু একটাই- যোগ্যতা ও দক্ষতার মাপকাঠিতে আপন বৈশিষ্ট্যে নিজেকে শুধু এগিয়ে নেয়া। বাবা-মা-ভাইকে ছেড়ে অন্য দেশে পড়াশোনার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই মিষ্টি মেয়েটি ভিন দেশের বৈরী আবহাওয়া থেকে শুরু করে ঘরকান্নার কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে নির্দ্বিধায় ও অবলীলায়। ছোটবেলা থেকে অদ্ভুত সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী হ্রী ছায়ানটেরও একজন কৃতী শিক্ষার্থী ছিল। আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা ও মুক্তচিন্তার ধারক এই উদীয়মান তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছেন -নাজনীন বেগম বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রগামিতায় আন্তর্জাতিক সীমানায়ও তার জোরালো অংশগ্রহণ দৃশ্যমান করেই যাচ্ছে। দেশটা যখন সময়ের দুর্বার স্রোতে নিয়তই অগ্রসমান তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না সবাইকে নিয়ে প্রবৃদ্ধির এই গতিধারা চলার পথে নির্ণায়ক শক্তি। অর্থাৎ শ্রেণী, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ সমতায় দেশটি সমান তালেই এগিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে অর্ধাংশ নারীরাও আধুনিকতার এমন নবযুগের সহযোগী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করে যাচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে তো অনেকখানিই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফলে ছাত্রছাত্রীর ফারাক কমে আসতেও সময় লাগেনি। আর উচ্চ শিক্ষায় মেয়েদের অভিগমন এখন হাতেগোনার অবস্থায় নেই। দেশে-বিদেশে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে মেয়েরা আজ স্বরূপ বিচরণে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। কোন এক সময় একা কোন মেয়ে দেশের বাইরে পড়তে যাবে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে- তা একেবারে স্বপ্নেরও অতীত ছিল। সেই স্বপ্ন আজ কল্পনার চেয়েও সত্য এবং বিস্ময়কর। মেয়েরা সময়ের দুর্বার মিছিলে তাল মেলাতে শুধু সাহসী পদক্ষেপই নয় যোগ্যতার মাপকাঠিতেও তাদের প্রমাণ করে যাচ্ছে। হ্রী ও আধুনিক স্রোতের তেমনই এক বলিষ্ঠ পথিক যে কিনা তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশমান যুগে নিজেকে তৈরি করে কানাডায় শিক্ষার্জনের যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আযম পান্না এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম সবিতা ইয়াসমিনের দুই সন্তানের মধ্যে হ্রী কনিষ্ঠ এবং কন্যা। বড় সন্তান পুত্র হৃদ্য ফরহাত। সেও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী। অল্প কিছু দিনের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন হবে বিবিএতে। অতি বাল্যকাল থেকে বাবা-মায়ের স্নেহাতিশয্যে বড় হওয়া হ্রীর বুদ্ধিমত্তা ও মেধার পরিচয় পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি মনোসংযোগও ছিল নজর কাড়া। কথা বললে বোঝাই যেত মেধা ও মননের এক অবিমিশ্র শক্তি। সবচেয়ে বেশি মুগ্ধতার ব্যাপার ছিল অসাধারণ এক সুরেলা কণ্ঠের মিষ্টতা। ফলে পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তাকে ‘ছায়ানট’র মতো উচ্চ মানসম্পন্ন সঙ্গীতালয়ে ভর্তি করানোর বিষয়টি। সেখানেও ছিল আর এক বিস্ময়। বলতে গেলে এক বালিকাই ১২ বছরে পা দেয়ার আগেই ‘ছায়ানটে’র মতো ঐতিহ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ডবল প্রমোশন পেয়ে যায় দক্ষতা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে। মনে রাখতে হবে বয়সটা ছিল প্রাথমিক শিক্ষার্জনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সময়। তখন সে সানিডাল স্কুলে ইংলিশ মাধ্যমের শিক্ষার্থী। লেখাপড়া এবং গান দুটোর টানাপোড়েনে হ্রী বিদ্যার্জনের পথটাই বেছে নিল। নতুন করে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে তার সাফ জবাব গানকে বেছে নিলে শুধু সঙ্গীতেই মনোযোগী হতাম। লেখাপড়া সেভাবে হতো না। সেই কারণে তখন মনে হয়েছে এখনও সেটাই ঠিক যেন লেখাপড়াটাই মূল। সানিডেল স্কুল থেকে ও লেভেলস কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ডেলিস্টার পুরস্কারে অভিষিক্ত হয়। পরবর্তীতে এ লেভেলস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা শুরু করে। সেখানেও ভাল জিপিএ (৩.৬) পায় ৪-এর মধ্যে। এর পর থেকেই শুরু হয় দেশের বাইরে পড়াশোনা করার আনুষঙ্গিক সব নিয়ম বিধিতে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে ফ্রেন্স ভাষাও আয়ত্তে নিয়ে আসে ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করে। কানাডায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার যোগ্যতা বিচারে আইএলটিএসের স্কোর অত্যন্ত জরুরী। সেখানেও সে উত্তীর্ণ হয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করার দক্ষতা অর্জন করলে কানাডার উইনন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। তার পর নিকটজন সবাইকে ছেড়ে কানাডায় পাড়ি দেয়া। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সারা পৃথিবী থেকে আসা অন্যান্য ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বাঙালী শিক্ষার্থীদেরও উপস্থিতি নজর কাড়া। নতুন পরিবেশ, ভিন্ন আবহাওয়া, অপরিচিতদের নিজের করে ভাবা, যে উদ্দেশে যাওয়া সেখানেই বিশেষভাবে মনোসংযোগ করা সব মিলিয়ে এক অন্যরকম শঙ্কিত অনুভব কেটে যেতেও সময় লাগেনি। ভিন্ন মাত্রার পরিবেশ-পরিস্থিতিতে সামলিয়ে ঘরের কাজগুলোও আয়ত্তে আনতে হয়েছে। জ্যান্ত মাছ কাটার যে নতুন অভিজ্ঞতা তাও যেন এক উপভোগের মাত্রা, মাছ কাটার সময় ভিডিও করা হচ্ছে। অর্থাৎ আনন্দ, কষ্ট, বেদনা সবই এখন নিয়মানুগ অবস্থায় তাকে নিয়তই এগিয়ে দিচ্ছে। তবে কানাডায় অনেক বাঙালী থাকার কারণে ১ বৈশাখ এবং জাতীয় দিবসগুলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদযাপন করা হয়। ১ বৈশাখে হ্রী নিজেই ‘আজি বাংলা দেশের হৃদয় হতে’ গানটি পরিবেশন করে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক আয়োজনে। লেখাপড়ায়ও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়মের সেমিস্টার পদ্ধতিতে কোন জিপিএ নেই। ৮০% কিংবা ৯০% নম্বর পেলে মানসম্মত ফলাফলের বিবেচনাধীন হয়। হ্রীও তার হয়ে যাওয়া সেমিস্টারে ৯০% নম্বর পেয়ে ৩ হাজার কানাডিয়ান ডলার বৃত্তি পায়। যা সেমিস্টার ভিত্তিতে দেয়া হয়। হ্রীর উচ্চ শিক্ষার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনায় তার জন্য অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
×