ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্য ঘরের কাব্য

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৫ জুলাই ২০১৯

 শূন্য ঘরের কাব্য

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত জয়িতা শিল্পীর ‘ঘরের মধ্যে ঘর শূন্য’ কাব্যগ্রন্থে। নামকরণে প্রেম-বিরহের ছোঁয়া থাকলেও পাঠে মনোনিবেশ করলে পাঠককে সরে আসতে হবে প্রাথমিক ধারণা থেকে। তরুণ কবি জয়িতা শিল্পী শুধু দেশমাতৃকার ছবিই আঁকেননি- বাঙালীর লোকজ উৎসব, বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মরণ-মূল্যায়ন, প্রাত্যহিক ও সমাজজীবনের অসঙ্গতির খন্ডচিত্র তুলে ধরেছেন কথা-কবিতায়। কথা-কবিতা অভিধা এ কারণেÑ কবিতায় যারা আবছায়া দেখতে চান, পেতে চান নিজস্ব আবিষ্কার ও স্বনির্মিত অর্থ- তাদের একটু হোঁচটই খেতে হবে! জয়িতার লিখনশৈলী সহজিয়া ও মজলিশি ঢঙের। কবিতায় দ্ব্যর্থবোধক অর্থ কিংবা দোলায়মানতা অনেকটাই অনুপস্থিত কাব্যগ্রন্থে। অন্যদিকে কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে পীড়িত বোধ করেন যে পাঠকÑ বইটি স্বস্তি দেবে তাকে। ছয় ফর্মার এ বইয়ে একটি কবিতাও পাওয়া যাবে না- যেটার রসাস্বাদনে পাঠককে বেগ পেতে হবে। কখনও মনে হবে কবি বিন্দুহীন বৃত্ত নির্মাণে প্রয়াসী, আবার পরক্ষণে মনে হবে বৃত্তহীন বিন্দুতেই তার আগ্রহ! ‘সংশয়’ সৃষ্টি করতে সক্ষম হওয়াও একজন শিল্পসাধকের শক্তিময়তার পরিচয়বাহী। পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা এ কবি ছত্রে ছত্রে এঁকেছেন বাংলার রূপ-অরূপ চিত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত কবিতাগুলো জানিয়ে দেয় জনকের প্রতি তার দায়; অনুভবে দেশ-জননীর প্রতি ঋণ। বাক্সময় হয়ে ওঠে স্বদেশচেতনা। ‘রক্তে লিখি মুজিবের নাম’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন- স্কুলে শ্রেণী-পাঠ্যের বাইরে ভুল করে যদি কোন কোমলমতি শিক্ষার্থী তুলে আনে বঙ্গবন্ধুর কীর্তিগাথা তাতে শিক্ষক রাগ না করে উল্টো খুশিই হবেন। শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের সস্নেহ প্রশ্রয়, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা যুগপৎভাবে উঠে এসেছে। জয়িতা শিল্পীর হৃৎচেরা কলম বলে ওঠে- বৈজ্ঞানিক কোন সূত্র লিখতে গিয়ে ভুল করে যদি/ ছয় দফা আন্দোলনের তাৎপর্য লেখে কেউ/ নম্বর কাটা গেলেও বিন্দু দিদিমণি/ বাধ্য হবেন ফিরে যেতে ইতিহাসের পাতায়...। প্রেম-অপ্রেম ও বিরহগাথার বাইরেও কবি স্পর্শ করেছেন সমাজের নানা দিক- সমস্যা ও সম্ভাবনার অধ্যায়ে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দৈনন্দিন গ্লানিকে মূর্ত করে তুলেছেন। প্রকৃতির খেয়ালী সন্তান হিজড়ারা মানুষ হয়েও যেন মানুষ নয়- নারী নয়, পুরুষ নয়। তাদের মনোবেদনার বয়ান শেষে কবি উপনীত হয়েছেন সরল সিদ্ধান্তে- ‘বৈচিত্র্যময় জীবন নিয়ে নতুন পৃথিবী’। কবি মাত্রই স্বপ্নবাজ। জয়িতা শিল্পীও এর বাইরে নন, তিনি হতে চান ‘পাগল কবি’। এমন বাসনাই ধরা পড়েছে ‘কবি’ কবিতায়। একজন ‘নিপাট’ কবির বর্ণনায় দেন এভাবে- ‘কবি চলছেন হেলে-দুলে উদাসীন/ গন্তব্য ঠিক জানা নেই/ কবিতা উৎসবের একটি ঝোলা কাঁধে/ পাউরুটি আর কলা হাতে।’ আবার সম-বোধের ‘কবিমন’ কবিতায়ও তিনি উচ্চারণ করেন- ‘শূন্য ঘরে নিজেই রাজাধিরাজ/ স্বপ্নের চারণভূমি স্বর্গ রচনা করে/ যেখানে সকল সুখের আলাপ।’ আলোচ্য বইটির কাগজ, বাঁধাই প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে সবখানেই রয়েছে যত্নের ছাপ। তবে কিঞ্চিত অযত্ন কিংবা অসাবধানতা যে নেই তা নয়। বইয়ের ক্রেডিট লাইনে প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম ধ্রুব এষ ছাপা হলেও ফ্ল্যাপে রয়েছে সোহানুর রহমান অনন্তের নাম! ধ্রুব এষের নামও ছাপা হয়েছে ভুল বানানে, যা পারিজাত প্রকাশনীর নামের প্রতি সুবিচার করেনি। রয়েছে আরও বেশ কিছু মুদ্রণ প্রমাদ। দুটি কবিতায় লেখা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়। সেখানে একই মানুষের নাম এক কবিতায় লেখা হয়েছে রাবিনা, অন্য কবিতায় রাভিনা। আরেকটু সতর্কতা প্রয়োজন ছিল- কবি, প্রকাশক ও বানান সমন্বয়কের।
×