ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে চেনা ছন্দে ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৪ জুলাই ২০১৯

 বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে চেনা ছন্দে ইংল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ধীরে ধীরে জনি বেয়ারস্টো এমনই জ্বলে উঠলেন, তাতে ইংল্যান্ডকেও যেন আলোর পথ দেখাতে শুরু করলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেন এ ওপেনার। ৯৯ বলে ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ১০৬ রান করেন। তার এ সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডও চেনা ছন্দে ফিরেছে। ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩০৫ রান করেছে। ইংল্যান্ডকে যে এবার বিশ্বকাপে ‘৩০০’ রানের দল বলা হচ্ছে, সেই চেনা ছন্দে ফিরেছে তারা। সেটি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতেই সম্ভব হচ্ছে। গত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি হাঁকান বেয়ারস্টো। তবে এখনও সেই মূল কারিগর বেয়ারস্টো নয়, জেসন রয়কেই ধরা হচ্ছে। এই ওপেনার ছাড়া যে কোন গতি নেই ইংল্যান্ডের। তিনিই ইংলিশদের আসল ভরসা। জনি বেয়ারস্টো টানা দুই সেঞ্চুরি করলেন। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলের ভরসা হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সেই রয়কে নিয়েই পড়ে থাকছে ক্রিকেটবিশ্ব। তা হওয়ারই কথা, তিনি যে ইংল্যান্ডের আসল নির্ভরতা। ইংল্যান্ড দুর্বার গতিতে বিশ্বকাপ শুরু করে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দেয়ার পর পাকিস্তানের কাছে লড়াকু হার হয়। এরপর বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানকে পাত্তা দেয়নি। তখনতো মনে করা হয়েছিল, এবার বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে ইংল্যান্ডই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করবে। কিন্তু রয় যেই ইনজুরিতে দুই ম্যাচ খেলতে পারলেন না, ইংলিশদের সব আশা যেন হতাশায় পরিণত হতে শুরু করে দেয়। যে শ্রীলঙ্কা দলটি কারও কাছে পাত্তা পাচ্ছিল না, তারাই কিনা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়। এবার বিশ্বকাপে ‘৩৫০’ রান যেন বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছিল। সেই বিজ্ঞাপনের ধারক ধরা হয় ইংল্যান্ড দলকে। নিজেদের প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেইতো ৩০০ ছড়ানো স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড। এবার বিশ্বকাপে যে সর্বোচ্চ স্কোর ৩৯৭, সেটিও ইংল্যান্ডেরই গড়া। কিন্তু সেই দলটিই হঠাৎ করে ২৫০ রানও যেন করতে পারছিল না। জেতা তো দূরের বিষয় হয়ে উঠেছিল। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছেও উড়ে যায় ইংল্যান্ড। স্বাগতিকদের সেমিফাইনাল খেলা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে পারেননি রয়। তাতে ইংল্যান্ড দলটিই যেন ওলট-পালট হয়ে যায়। এমন অবস্থায় আবার ফিরেন রয়। তার ফেরাতেই যেন ইংল্যান্ড চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ভারতকে উড়িয়ে দেয় ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও বড় স্কোর গড়ে। তা সম্ভব হয় রয়ের জন্যই। এমনটিই ধরা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্কোর বলছে বেয়ারস্টো ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই নিজের নামের প্রতি বিচার করতে পারেননি। জো রুট (২৪), জস বাটলার (১১), বেন স্টোকস (১১), ক্রিস ওকস (৪) নিজেকে খুঁজে ফিরেছেন। মাঝপথে অধিনায়ক ইয়ন মরগান (৪২) ও শেষে লিয়াম প্লানকেট (১৫*) একটু হাল ধরলে রান ৩০৫-এ যায়। নাহলে আরও কম রানে বাঁধা পড়তে পারত ইংল্যান্ড। কিন্তু এত রান হলো কিভাবে? শুরুতে যে রয় আর বেয়ারস্টো মিলে দলকে আকাশে চড়িয়ে দিয়ে যান। রয় এমনই। একাদশে থাকলেই তার ব্যাটে চড়ে স্কোর মজবুত হতে থাকে। তার সঙ্গে যে থাকেন তিনিও সাহসী ভূমিকা নেন। কখনও রয়ের সাহসে এমনই আত্মবিশ্বাস জমে সঙ্গের জন রয়কেও পেছনে ফেলেন। তাতে দলেরই উপকার হয়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যেমন রয় ও বেয়ারস্টো মিলে ১৬০ রানের ওপেনিং জুটি গড়েই ভারতকে চাপে ফেলে দেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তেমনি দুইজন মিলে ১২৩ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন। রয় (৬০) যা করার করে দেন। এরপর বেয়ারস্টো নিজের ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিটি করেই সাজঘরে ফেরেন। এই দুইজনের এমন জুটিতেই ভরসা পায় ইংল্যান্ড। অবশ্য ৩১ ওভারে ২০০ রান করার পরও ইংল্যান্ডের স্কোর আরও বড় হওয়ার কথা। সেখান থেকে ২০ ওভারে যদি রানের চাকা সচল থাকত তাহলে ৩৫০ রানতো অনায়াসেই হওয়ার কথা। কিন্তু শেষ ১৯ ওভারে ১০৫ রানের বেশি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। এই সময়ে কঠিন চাপে থাকে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। ২০০ রানের পর ইনিংস শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ততো হারায় ৬টি উইকেট। বেয়ারস্টো যেই দলের ২০৬ রানে আউট হন, একেক ব্যাটসম্যান আসেন, ফেরার মিছিলে যুক্ত হন। এর মধ্যে মরগান ও প্লানকেট মিলে হাল ধরলে ইংল্যান্ড বড় স্কোরই গড়তে পারে। সব আলোচনা রয়কে নিয়েই। বিশ্বকাপের এক আসরে ইংল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রান করা এ ব্যাটসম্যান একাদশে ফিরতেই যে আবার বড় স্কোর গড়ার ছন্দে ফিরে ইংল্যান্ড। তার ভাগ্য যেন ইংল্যান্ডের ঘাড়ে যোগ হয়। তবে রয়কে নিয়ে আলোচনা হলেও বেয়ারস্টো কিন্তু নায়ক বনে আছেন। দুই উইকেট করে নেয়া ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, জেমস নিশামরা শুরুতে পাত্তাই পাননি। যেই উদ্বোধনী জুটি শেষ হয় তখন থেকে যেন গর্জে ওঠেন কিউই বোলাররা। তাতেও ইংল্যান্ডকে ৩০০ রানের আগে বেঁধে রাখা যায়নি। একজনই যে ১০৬ রান করে ফেলেন। তিনি বেয়ারস্টো। চেস্টার লি স্ট্রিটের রিভারসাইড গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ ইংল্যান্ডের। জিতলে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত। হারলেও সুযোগ থাকবে। তবে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচের দিকে তখন তাকিয়ে থাকতে হবে ইংল্যান্ডকে। এমন ম্যাচে বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি হাঁকান। বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব গড়েন। ভারতের বিপক্ষে ৯০ বলে শতরান করা বেয়ারস্টো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। চলতি বিশ্বকাপে ১৬তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৫তম সেঞ্চুরি করেন তিনি। প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন বেয়ারস্টো। যতই রয়কে নিয়ে ইংল্যান্ড ভরসা খুঁজে পাক, দিন শেষে কিন্তু বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতেই বড় স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড।
×