ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিউচুয়াল ফান্ডের শোচনীয় অবস্থাতেও লাভবান সম্পদ ব্যবস্থাপকরা

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ৪ জুলাই ২০১৯

 মিউচুয়াল ফান্ডের শোচনীয় অবস্থাতেও লাভবান সম্পদ ব্যবস্থাপকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতসহ উন্নত অর্থনীতির দেশে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও বাংলাদেশে এটির অবস্থান তলানিতে। সম্পদ ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে ফান্ডগুলো এই শোচনীয় অবস্থায় নেমে এসেছে। সঠিকভাবে বিনিয়োগ করার অভাবে যথাযথ মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ফান্ডগুলো। তবে সম্পদ ব্যবস্থাপকদের তাতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। নিট সম্পদের ওপর সম্পদ ব্যবস্থাপকদের ফি নির্ধারিত থাকায়, ফান্ডের লোকসান হলেও ফি বাবদ তাদের আয় থেমে থাকে না। এমতাবস্থায় সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সঠিক মূল্যায়নে ফান্ডের ব্যবসায়িক পারফরমেন্সের ওপরে ফি নির্ধারণ করা উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী, ফান্ডের নিট সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি টাকার মধ্যে হলে, সম্পদ ব্যবস্থাপক সর্বোচ্চ ২.৫ শতাংশ ফি নিতে পারবে। এছাড়া নিট সম্পদ ২৫ কোটি টাকার মধ্যে হলে, ৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত অংশের জন্য ২ শতাংশ, নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকার মধ্যে হলে, ২৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত অংশের জন্য ১.৫ শতাংশ এবং নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত অংশের জন্য ১ শতাংশ ফি নিতে পারবে। শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যবসায় কোন পারফরম না করেও সম্পদ ব্যবস্থাপকরা অফিসে গিয়ে বসে বসে ফি নেবে-এটা ঠিক না। অবশ্যই পারফরমেন্সর ওপরে ফি নির্ধারণ করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে এ্যাসেট ম্যানেজারদের স্বার্থে আইন-কানুন করেছে। তারা তদবিরের কাজ করে। কমিশনের এই খামখেয়ালিপনার জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের কোন আস্থা নেই। এখন আর কেউ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে নতুন করে বিনিয়োগে আসতে চান না। বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, সম্পদ ব্যবস্থাপকের পারফরমন্সের ওপরে ফি নির্ধারণ হওয়া উচিত। যে ভাল পারফরম করলে সে বেশি পাবে, যে কম পারফরম করবে সে কম পাবে। তাহলে সবার মধ্যে ভালো ব্যবসা করার তাগিদ আসবে। আর এখন তো মুনাফা না করলেও বসে বসে ফি পাওয়া যায়। এটা ঠিক না। এ নিয়ে অনেকবার কমিশনে আলাপ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন, মুনাফার তুলনায় ম্যানেজমেন্ট ফি ২৮ শতাংশ হওয়া মানে বেশি। এক্ষেত্রে কোন ফান্ড হয়তো অনেক বেশি মুনাফা করেছে, কোনটি হয়তো লোকসান করেছে। যাতে গড়ে ২৮ শতাংশ হয়েছে। তবে পারফরমেন্সের ওপরে ফি নির্ধারিত হতো, তাহলে ফান্ডগুলোর মুনাফা আরও বেশি হতো। একারণেই পারফরমেন্সের ওপরে ফি নির্ধারণ করা উচিত। দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৭টি ফান্ডের চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ শেষে ২১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এই মুনাফা অর্জনে সম্পদ ব্যবস্থাপকের ফি বাবদ খরচ হয়েছে ৫৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যা নিট মুনাফার ২৮ শতাংশ। এরমধ্যে ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালি ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ডের লোকসান হলেও সম্পদ ব্যবস্থাপক ভ্যানগার্ড এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ঠিকই নির্ধারিত ফি পেয়েছেন। যাতে ফান্ডটিতে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোন দক্ষতা দেখাতে না পারা সত্ত্বেও তার আয়ে কোন সমস্যা হয়নি। এদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থার তলানিতে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর পানির দরে পাওয়া যাচ্ছে। তালিকাভুক্ত ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ৩১টির ইউনিট দর অভিহিত মূল্যের নিচে। এরমধ্যে ৭টির দর ৪ টাকার ঘরে রয়েছে। এত সস্তা হওয়ার পরেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে আগ্রহ নেই। তবে মিউচুয়াল ফান্ড সংশ্লিষ্টরা বলেন, শুধুমাত্র সম্পদ ব্যবস্থাপকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ ২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ধসের সময় নতুন মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন দিয়েই ফান্ডে ৭০ শতাংশ দিয়ে বর্তমান দরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে এক প্রকার বাধ্য করা হতো। যার কারণে পরবর্তীতে শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় ইউনিটের সম্পদ মূল্য কমে যায়। ফলে আরও নেতিবাচক হয়ে পড়ে ফান্ডের ইউনিট মূল্য। এখন বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ড অভিহিত মূল্যেও নীচে রয়েছে।
×