ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমিনূর রশীদ বাবর

মানুষ যাবে কোন পথে

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ৪ জুলাই ২০১৯

মানুষ যাবে কোন পথে

আকাশপথে গেলে বিপদ, নদীপথে গেলে বিপদ, সড়কপথে গেলে বিপদ, সব চাইতে নিরাপদ ছিল রেলপথ এ পথে গেলেও বিপদ। কোন পথই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ অবস্থায় মানুষ কোন্্ পথে যাবে? মানুষ এখন ঘর থেকে বের হয়ে আবার যে সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফিরবে এ ভরসা করে না। দেশের জনগণ এখন এক অশুভ আতঙ্ক নিয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষকে বাধ্য হয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াত করতে হয়। এক প্রকার নিরুপায় হয়ে মানুষ যানবাহনে যাতায়াত করে থাকে। এ ছাড়া মানুষের অন্য কোন উপায় নেই। মোদ্দা কথা সব ধরনের ভ্রমণ এখন সম্পূর্ণ অনিরাপদ। এক কথায় সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আপনার জন্য মূর্তিমান মৃত্যুদূত হয়ে অপেক্ষমাণ। সর্ব শেষ ভরসা ছিল রেলপথ, সে ভরসাও গত ১৯ জুন মৌলভীবাজারের বড়মচাল নামক স্থানে ঢাকাগামী উপবন রেল একটি জীর্ণ পুরনো রেল সেতু অতিক্রম করার সময় সেতু ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে পাঁচজন মারা যায় (মতান্তরে ছয় জন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নয়জনও উল্লেখ করা হয়েছে)। এ দুর্ঘটনায় মোট পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে একটি বগি নিচে ছড়া নদীতে পড়ে বাকিগুলো ছিটকে গিয়ে জমিনে পড়ে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ১৭৭ কিঃমিঃ দীর্ঘ সিলেট-আখাউড়া রেলপথ। এই দীর্ঘ রেলপথে দুই শতাধিক রেল সেতু আছে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেরোটি সেতু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করেছে। অতএব, এই রেলপথের সার্বিক অবস্থা কর্তৃপক্ষের জানা। তা ছাড়া এ পথে প্রতিদিন পনেরো/ ষোলো হাজার যাত্রী চলাচল করে। জনগণের প্রশ্ন এ বিপুল পরিমাণ যাত্রীর জানমালের নিরাপত্তা বিধান কি রেল কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব ছিল না? স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ মনে করেন রেল কর্তৃপক্ষের অনীহা ও চরম অবহেলার জন্য এই দুর্ঘটনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের যদি সামান্যতম কান্ডজ্ঞান ও যাত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকত তা হলে এ অঘটন ঘটত না। এই রেলপথে মানুষ রেল ভাড়া দিয়ে চলাচল করে। রেল কর্তৃপক্ষ রেল ভাড়া বাবদ জনগণের কাছ থেকে কোটি টাকা আয় করে থাকে। এ পরিমাণ টাকা জনগণের কাছ থেকে নেয়া হয় অথচ রেল কর্তৃপক্ষ এই জনগণের জানমালের হেফাজতের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র দায়িত্ব নেই, সম্মান নেই। রেল যাত্রীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের এ ধরনের আচরণ মোটেই ইতিবাচক নয়। রেল পরিবহন একটি নিরাপদ লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই নিরাপদ পরিবহনকে অনিরাপদ করার অধিকার কারও নেই। সব ধরনের পরিবহনের মধ্যে রেল হচ্ছে একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপদ পরিবহন। এ ব্যাপারে রেল বিভাগের একটা সুনাম আছে। তা ছাড়া রেল নিছক একটি পরিবহন নয়, মনে রাখতে হবে রেল একটি অন্যতম জাতীয় সম্পদ। কতিপয় উন্নয়নবিরোধী কর্মচারী ও কর্মকর্তার কারণে এই জাতীয় সম্পদকে কলঙ্কিত হতে দেয়া যায় না। অতএব, রেল ভ্রমণকে নিরাপদ করতে হলে, রেল বিভাগের সুনাম রক্ষা করতে হলে এবং দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে কারা উন্নয়নবিরোধী, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী তাদের শনাক্ত করতে হবে এবং এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ইতোপূর্বে স্বর্গীয় সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত রেল বিভাগ থেকে ‘কালো বিড়াল’ বের করতে গিয়ে নিজেই কালো বিড়াল হয়ে বিতাড়িত হয়েছিলেন। এ ঘটনা থেকেও জনগণকে শিক্ষা নিতে হবে। সব কথার শেষ কথা হলো জনগণ চায় জাতীয় সম্পদ রেল বিভাগের সুরক্ষা। গির্জাপাড়া, মৌলবীবাজার থেকে
×