ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দ না আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ৪ জুলাই ২০১৯

 আনন্দ না আতঙ্ক

অনেক সময় ট্রেনে অনেক যাত্রীকে দেখা যায় পরম নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমাতে। তার কারণ একটাই বাস ট্রাকের মতো ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটে না। সকল যানবাহনের মধ্যে একমাত্র ট্রেনে চড়েই যেন যাত্রীরা একদম নির্ভয় থাকেন, সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করেন। বাংলাদেশে রেল চালু হয়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে আর আজ অবধি ট্রেনই হলো বাঙালীর বিশ্বস্ত বাহন। রেল নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ট্রেন যাওয়ার পথ এক নজর নিজের চোখে দেখার জন্য অনেক সময় অনেক দূর থেকে মানুষ কষ্ট করে রেললাইন দেখতে আসে। কবি শামসুর রাহমান রেলগাড়ি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাতে দেখা যায় অপু ও দুর্গা রেলগাড়ি যাওয়ার দৃশ্য দেখার জন্য তাদের গ্রাম পেরিয়ে অনেকদূর চলে যায়। পণ্য পরিবহনে রেলগাড়ির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার ছাত্রজীবনে পুরোটা জুড়ে রয়েছে রেলভ্রমণের সুখকর স্মৃতি আমি সাধারণত ঢাকা কমলাপুর থেকে তূর্ণা নিশিথায় রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিতাম। তাও তো প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ট্রেনে চড়ে ট্রেন ছাড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন ট্রেন ছাড়বে। হঠাৎ করে একটি নারী কণ্ঠ শুনতে পেতাম, ঘোষণা করছে আস্সালামু আলাইকুম সম্মানিত যাত্রীসাধারণ আপনার ভ্রমণ আনন্দময় ও শুভ হোক। ভ্রমণে বাংলাদেশ রেলওয়েকে বেছে নেয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তূর্ণা নিশিথা ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাবে। কথাগুলো এত ভাল লাগত সেই সময়, এখনও তা আমাকে অতীতের স্মৃতির সাম্রাজ্যে বিচরণ করায়। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো দূরের যাত্রায় এদেশের আমজনতার আস্থার প্রতীক। কিন্তু যা ঘটে গেছে কিছুদিন আগে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাটি এটি জনমনে ট্রেনভ্রমণে ভীতির জন্ম দিয়েছে। মানুষ বেশ আতঙ্কে আছে। আগে দেখতাম রেল ইঞ্জিনিয়ার বা পরিদর্শকরা ট্রলিতে সামনে বসে থাকতেন আর পেছনে হাতল ঠেলে ঠেলে নৌকার দাঁড় টানার মতো তিনজন ঠেলত আর সামনে বসা ইঞ্জিনিয়াররা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রেললাইন পর্যবেক্ষণ করতেন কোথায় জয়েন্ট আলগা হয়ে গেছে কিংবা পাথর ঠিকমতো আছে কিনা, স্লিপার আছে কিনা। আগে ইঞ্জিনিয়াররা ট্রেনের ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ নিয়মিত চেকআপ করতেন। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই কাজগুলো এখনও নিয়মিত হয় কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। আজকাল তো প্রায় সকলেই অর্পিত দায়িত্বকে দায়সারাভাবে সেরে ফেলেন যা জনজীবনের জন্য সত্যিই হুমকিস্বরূপ। এমনিতেই বহুদিন ধরে বাংলাদেশে রেলব্যবস্থা সরকারের বিশেষ ভর্তুকিতে চলে আসছে তা সরকারের জন্য অলাভজনক আর উপবনের ঘটনা যদি বার বার ঘটতে দেয়া যায় তাহলে জনগণ রেল থেকে দিনকে দিন মুখ ফিরিয়ে নেবে। এদেশের যাত্রীসাধারণের ভ্রমণের একমাত্র ভরসার যান হলো ট্রেন। প্রতিদিন হাজার হাজার নাগরিক নানা কাজে দেশের নানাপ্রান্তে ছুটে চলেছেন। তাদের রেলভ্রমণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাই একান্ত জরুরী। দুর্ঘটনার কবল থেকে ট্রেনকে রক্ষা করা জনগণের জানমাল রক্ষা করা সকল দেশবাসীর পবিত্র কর্তব্য হওয়া উচিত। এদেশের অনেক ছোট বালককে দেখেছি আমরা রেলের বড় বড় দুর্ঘটনা ঠেকিয়ে দিতে। তারা হিরো অব দ্য এশিয়া হয়েছে যা আমাদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। রেল ভ্রমণ আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কাছে একটা বড় আনন্দ। এক ধরনের বিনোদনও বটে। তাই আসুন সকলে মিলে আমাদের সকলের প্রিয় বাংলাদেশ রেলওয়েকে সকল অনিয়ম অরাজকতা বিপদ থেকে রক্ষা করে রেলকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সচেষ্ট হই। নেত্রকোনা থেকে
×