ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবার আগে যাত্রীর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৪ জুলাই ২০১৯

 সবার আগে যাত্রীর নিরাপত্তা

দৈনিক অসংখ্য মানুষ তাদের গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য ট্রেন ব্যবহার করে। যাত্রার নিরাপত্তা ও স্বল্পমূল্যে টিকেট প্রাপ্তির কথা ভেবে এদেশের সাধারণ মানুষ অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে ট্রেন যাত্রাকেই বেশি পছন্দ করে। প্রতিদিন হাজারো স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ তাদের নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে পৌঁছানোর জন্য ট্রেন যাত্রাকেই বেছে নেয়। কিন্তু দেশে সম্প্রতি অনাকাক্সিক্ষত ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- ‘ট্রেন যাত্রা কি আসলেই নিরাপদ? ট্রেনে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো কি আসলেই সম্ভব?’ সেই সঙ্গে ট্রেনে যাত্রীদের জন্য প্রদেয় সেবার মানও আজ প্রশ্নের মুখে । ট্রেনে যাত্রার জন্যে সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় লোকাল ট্রেন-যাত্রীদের। ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ট্রেনে ঊঠতে হয় তাদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যাত্রীর তুলনায় বগির সংখ্যা খুবই কম। ফলে ট্রেনে সিট পাওয়ার জন্য সবাই একসাথে বগির দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে । কে বৃদ্ধ, কে অসুস্থ কে প্রতিবন্ধী কেউ কিছুই তখন আর দেখে না। প্ল্যাটফর্মে পকেটমার, ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্যের কথা তো বলাই বাহুল্য । প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন যাত্রীর মোবাইল, মানিব্যাগ, অলংকার চুরি হয় এই ট্রেন ভ্রমণে। ট্রেনে ওঠার পর শুরু হয় আরেক বিড়ম্বনা। যাত্রীর তুলনায় বগির সংখ্যা কম হওয়ায় ভালভাবে দাঁড়ানোর জায়গাটা পাওয়াও যেন মাঝে মাঝে ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সেসময় নারী-পুরুষ সবাইকে ঘেঁষাঘেঁষি করে একসঙ্গেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসময়েই কিছু অসুস্থ মানসিকতার মানুষের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় বহু মা-বোনকে । কিছু কিছু ট্রেনে আবার দেখা যায় হিজড়াদের চাঁদাবাজি। তারা যাত্রীদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় শত শত টাকা। কেউ তাদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অথবা তাদের প্রতিবাদ করলে শুরু হয় নানা রকম শারীরিক হয়রানি। যাত্রীরা নিজেদের নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব বা অন্য পরিচিত মানুষের সামনে হিজড়াদের দ্বারা অপমানিত হওয়ার ভয়েই শুধু হিজড়াদের এই চাঁদাবাজি চুপ করে সহ্য করে। এছাড়া টিকেট ছাড়া ভাড়া নেয়ার প্রবণতাও টিকেট চেকারদের মধ্যে দেখা যায়। এতে যাত্রীরা ভাড়া দেয় ঠিকই কিন্তু সেই ভাড়া সরকারের কোষাগার অব্দি আর পৌছাতে পারে না। এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্ল্যাটফর্মে পকেটমার, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। ট্রেনের যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য বগির ভেতরে পুলিশের ব্যবস্থা করতে হবে। অসৎ টিটিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি, সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আরও প্রতিবাদী হতে হবে। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর থেকে
×