ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফৌজদারি অপরাধ

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৪ জুলাই ২০১৯

ফৌজদারি অপরাধ

দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা অভিহিত করে এর দখল-দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য করেছে উচ্চ আদালত। এ সম্পর্কিত বাংলায় লিখিত ২৮৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সোমবার প্রকাশিত হয়েছে সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে। দেশে এই ধরনের একটি ঐতিহাসিক ও জনগুরুত্বসম্পন্ন রায় এই প্রথম। রায়ে দেশের সব নদ-নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা তথা সুরক্ষার নিমিত্ত জাতীয় নদী কমিশনকে নিযুক্ত করা হয়েছে আইনগত অভিভাবক হিসেবে। সেই সঙ্গে দেয়া হয়েছে ১৭ দফা নির্দেশনা। যা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা হলফনামা আকারে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আদালতে জানাতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আরও বলা হয়েছে, নদী দখল ও দূষণকারী যে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং কোনভাবেই কোন ব্যাংকঋণ পাবেন না। এর পাশাপাশি জেল ও অর্থদ-সহ আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা তো আছেই। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র প্রকৃতি ও পরিবেশ, নদী-নদী, বনসম্পদ ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষক তথা ট্রাস্টি। জনগণ হলো আমানতকারী। রাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই জনসাধারণের আমানতের খেয়ানত করতে পারবে না। অতঃপর রাষ্ট্র্রকে জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষায় কঠিন ও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখতে চাই আমরা, যাতে অনতিবিলম্বে দেশের সব নদ-নদী সবরকম দখল ও দূষণমুক্ত হয়ে প্রকৃতই জীবন্ত সত্তা লাভে সক্ষম হয়ে ওঠে। সম্প্রতি তুরাগ নদকে লিগ্যাল পারসন, জুরিস্টিক পারসন বা জীবন সত্তা অভিহিত করে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। জীবন সত্তা ঘোষণা করায় একজন মানুষ যেমন আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান, তেমনি নদ-নদীরও আইনগত প্রতিষ্ঠার সুযোগ হলো দেশে। দেশে নদ-নদীকে জীবন সত্তা ঘোষণার রায় এই প্রথম। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে নিউজিল্যান্ড নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে আইন পাস করেছে। গঙ্গা-যমুনাকে জীবন সত্তা ঘোষণা দিয়ে রায় দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। তাই নদ-নদীর জীবন্ত প্রবাহ রক্ষা করতে হলে দেশের অবশিষ্ট নদ-নদীগুলোকেও জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা অপরিহার্য। কেননা, অবৈধ বিত্তবান ও ক্ষমতাবানদের দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতিদিন কম বেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করার ফলে নদী সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে ক্রমশ। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি প্রবাহও অবরুদ্ধপ্রায়। দেশের প্রায় সর্বত্রই একই অবস্থা বিরাজমান। সে অবস্থায় নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা অভিহিত করে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাস এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। অতঃপর পানি সম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী পানি ব্যবস্থাপনার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ভারতসহ নেপাল, ভুটান, সিকিম, চীন ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা বর্তমানে সময়ের দাবি।
×