ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১২ বছর পর...

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৩ জুলাই ২০১৯

১২ বছর পর...

লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা। এই আসরের অন্যতম সফল দল আর্জেন্টিনা। এবার অবশ্য শুরু থেকেই অচেনা ছন্দে ছিল দলটি। তবে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনিজুয়েলার বিপক্ষেও জয় তুলে নেয় মেসি-এ্যাগুয়েরোরা। লটারো মার্টিনেজ আর জিওভানি লো সেলসোর গোলে কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আর্জেন্টিনা এদিন ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ভেনিজুয়েলাকে। আর তাতেই টুর্নামেন্টের শেষ চারে জায়গা করে নেয় আর্জেন্টিনা। এর ফলে সেমিফাইনালেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র করেছিল তিতের দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে জিতে কোপা আমেরিকার শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করে কুতিনহো-জেসুসরা। দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই দল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। অথচ, গত এক যুগেও এই টুর্নামেন্টে একে অপরের বিপক্ষে খেলেনি তারা। ২০০৭ সালে সর্বশেষ একে অপরের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ। সেবার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। এরপর আরও তিনটি কোপা আমেরিকা হয়। কিন্তু দেখা হয়নি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণের! ফুটবলপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটে এবার। সেমির পথ আগেই নিশ্চিত করে ব্রাজিল। এরপর সেই পথে হাঁটে আর্জেন্টিনাও। রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুটা বেশ ভালই করে আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে দারুণ উদ্দীপনা নিয়েই যেন মাঠে নামে তারা। প্রথম থেকেই তাদের ম্যাচে সেই গতি লক্ষ্য করা গেছে। সেমিফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে যেন মুখিয়ে ছিল। তিন মিনিটেই ডানদিক থেকে মার্টিনেজের নিখুঁত পাস পেয়েছিলেন সার্জিও এ্যাগুয়েরো। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির তারকা ফরোয়ার্ডের লো ক্রস শট সহজেই পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক ফারিনেজ। জারমান পাজেলা অনেকটা ফাঁকায় থাকলেও তার ফ্লিক ব্যাক পোস্টে লেগে ফেরত আসে। একের পর এক আক্রমণে ভেনিজুয়েলার রক্ষণভাগ ব্যস্ত হয়ে উঠে। প্রথম ১০ মিনিটে ৮০ শতাংশ পজিশন ছিল আর্জেন্টাইনদের দখলে। যে কারণে বেশ কয়েকটি কর্নারও আদায় করে নিয়েছিল আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা। শেষ পর্যন্ত এগুয়েরোর শট থেকেই সুযোগ সন্ধানী মার্টিনেজ ফ্লিক করে বল জালে জড়ালে উদযাপনে মেতে উঠে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করতেও দারুণ চেষ্টা করে স্কালোনির শিষ্যরা। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে মার্কোস আকুনার সহযোগিতায় মার্টিনেজ তো তার দ্বিতীয় গোল পেয়েই গিয়েছিলেন প্রায়। কিন্তু রবার্তো রোসালেস শেষ মুহূর্তে মাত্র চার গজ দূর থেকে বলটি ক্লিয়ার করলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় স্কালোনির দল। দ্বিতীয়ার্ধেও একের পর এক আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু এ্যাগুয়েরো- মার্টিনেজের ব্যর্থতায় বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করে টুর্নামেন্টর অন্যতম সফল দলটি। তবে ম্যাচে ফিরতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যায় ভেনিজুয়েলাও। ৭১ মিনিটে টমাস রিনকনের ভলি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক ফ্র্যাংকো আরমানি রক্ষা না করলে তখনই হয়ত সমতায় ফিরতে পারত ভেনিজুয়েলা। তার তিন মিনিট পর এ্যাগুয়েরোর শট ফারিনেজ ধরতে ব্যর্থ হলে ফিরতি বলে লো সেলসো ভেনিজুয়েলার জালে বল জড়ান। আর তাতেই সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হয়ে যায় আর্জেন্টিনার। অথচ, গ্রুপপর্বের বাধা অতিক্রম করা নিয়েই সংশয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। কেননা, গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গেই যে ২-০ গোলে হেরেছিল মেসি-এ্যাগুয়েরোরা। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে প্যারাগুয়ের সঙ্গেও ১-১ গোলে হতাশার ড্র! তবে কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার। এবার ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও জয় পেল তারা। এই জয়েই আশা দেখছেন লিওনেল মেসির সমর্থকরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২৬ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর মিশনে লিওনেল মেসির দল এবার কোপা আমেরিকায় খেলতে নামে। বলা হয়ে থাকে একজন ফুটবলারের যা যা পাওয়া সম্ভব তার সবই পেয়েছেন লিওনেল মেসি। তবে সেই কথার সঙ্গে ব্র্যাকেট বন্দী হয়ে আরও একটি কথাও চলে আসে- সব পাওয়া তো ক্লাবের হয়ে। নিজের দেশ, যার জার্সি গায়ে তোলা একজন খেলোয়াড়ের সারাজীবনের স্বপ্ন হয়ে থাকে সেই দেশের হয়ে তো তাকে বারবারই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। আকাশী-সাদা জার্সিতে কিছুই পাওয়া হয়নি তার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে! অথচ, দারুণ সুযোগ এসেছিল আর্জেন্টিনার হয়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ জয়ের। হ্যাঁ, ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপেই শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামের সেই সন্ধ্যা বেলাতেই যেন নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। সেই দৃশ্যটা মনে আছে নিশ্চই? ফাইনালে হারের পর মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। একপাশে জার্মান ফুটবলাররা বিশ্বজয়ের উল্লাস করছে আরেক পাশে মেসি-এ্যাগুয়েরোদের বিষন্ন মুখ। এ যে তীরে এসে তরী ডুবার হতাশা। এ তো গেল বিশ্বকাপে হতাশার গল্প। লিওনেল মেসির সামনে সুযোগ এসেছিল টানা দুইবার কোপা আমেরিকা জয়েরও। ২০১৫ সালে মেসির জন্য উৎসবের মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পারেনি আর্জেন্টিনা। চিলির কাছে টাইব্রেকারের দুঃখে ভাসতে হলো লিওনেল মেসিকে। ২০১৬ সালের শতবর্ষী কোপাটা আর্জেন্টিনা শুরু করল জয়ের এক ও একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে। একের পর এক প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালেও উঠে যায় তারা। শিরোপার লড়াইয়ে এবারও তাদের প্রতিপক্ষ সেই চিলি। কিন্তু এবারও মেসিকে বঞ্চিত করল সেই চিলি। আবারও সেই টাইব্রেকার। আবারও স্বপ্ন ভঙ্গের দুঃসহ যন্ত্রণার গল্প। ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে আরও একবার যথাযথ সম্মান দিতে পারল না সময়। এবার কী পারবেন মেসি? সেজন্য তার জিততে হয় দুই ম্যাচ। আজ ভোরে ব্রাজিলকে যদি হারিয়ে থাকে তাহলে বাকি থাকে কেবল এক ম্যাচ।
×