ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্মরণকালের সবচেয়ে বিতর্কিত বিশ্বকাপ!

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৩ জুলাই ২০১৯

স্মরণকালের সবচেয়ে বিতর্কিত বিশ্বকাপ!

ইংল্যান্ডে চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেট নানাকারণে বিতর্কিত হয়ে চলেছে। অনেকের দৃষ্টিতে স্মরণকালের মধ্যে এবারের বিশ্বকাপ সার্বিকভাবে ফ্লপ! বাংলাদেশ আছে বলেই এদেশের মানুষের কাছে আবেদন আছে। বিশ্বকাপের আবহ নষ্ট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার মতো বড় দল। ম্যাচ গড়াপেটার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। আছে অব্যাহত বাজে আম্পায়ারিং। মাত্র দশ দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়েও অসন্তোষ আছে। সবকিছু মিলিয়ে এটাকে অনেকে ‘বিশ্বকাপ’ মানতেই নারাজ! বার্মিংহামের এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের ৩৩৭ রানের বিশাল স্কোরের নিচে চাপা পড়ে শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী ভারত হেরে যায় ৩১ রানের বড় ব্যবধানে। ভারতের এই হারে লাভ হয়েছে কেবল ইংল্যান্ডেরই। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপমহাদেশের তিন দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের তো সেমির স্বপ্ন শেষই হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের সেমিতে ওঠার যে স্বপ্ন, তা অনেকটাই কঠিন হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের এই জয়ে। ৮ ম্যাচ শেষে ইংলিশদের অর্জন ১০ পয়েন্ট। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আবারও তারা উঠে এসেছে ৪ নম্বরে। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে বাংলাদেশ (মঙ্গলবার রাতে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে)। ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ৫ নম্বরে পাকিস্তান। ১১ পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে ভারত আর নিউজিল্যান্ড রয়েছে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে। কাগজে-কলমে এখনও বাংলাদেশের সেমির আশা শেষ হয়ে যায়নি (অবশ্য গত রাতে ভারতের কাছে হেরে গেলে সেমির স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে, আর জিতে গেলে স্বপ্ন টিকে থাকবে)। কিন্তু ভারত ইংল্যান্ডো করছে হেরে যাওযায় অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে গত ২৭টি বছর ভারতকে হারাতে পারে না, তারাই কি না গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে বিরাট কোহলিদের বলতে গেলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভারতের হারের ধরন দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের প্রশ্ন, ভারত কি তবে ইচ্ছা করেই হেরেছে? তাদের ব্যাটিং স্টাইল এবং জিততে না চাওয়ার মানসিকতার কারণেই মূলত এই প্রশ্ন তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। ইংল্যান্ডের করা ৩৩৭ রানের জবাবে ভারত থেকে ৩০৬ রানে। শেষ ১০ ওভারে ভারতের রান তোলার হার দেখে, হার্দিক পান্ডিয়া, মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা কেদার যাদবদের মধ্যে জয়ের কোন মানসিকতা না দেখেই ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের ইচ্ছে করে হারের আলোচনাটা উঠে এসেছে। নেটিজেনদের ভাষ্য, বাংলাদেশকে ঠেকানোর জন্যই এই কা-টা ঘটিয়েছে ভারত। তাদের সেমিফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত। সামনে বাকি থাকা দুই ম্যাচ তাদের জন্য সহজই। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এর মধ্যে একটি জিতলেই সেমি নিশ্চিত। সে কারণে স্বাগতিক প্লাস তিন মোড়লের এক দেশ ইংল্যান্ডকেও তারা টেনে তুলে নিল উপরে। এটা কৌশল করেই করেছে ভারত। না হয়, শেষের দিকে ভারত কখনই এতটা সেøা ব্যাটিং করেনি। ফারদিন খান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভারতের মাইন্ড গেমটা বুঝতে মনে হয় না কারও কোন সমস্যা হচ্ছে। তাদের মেন্টাল সেটাপ যেভাবেই হোক বিগ থ্রি-কে সেমিফাইনালে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান, বাংলাদেশ বাদ পড়বে। সে ক্ষেত্রে ভারত আরও দুইটি ম্যাচ পাবে। তাদের যে কোন একটি জিতলেই তারা সহজেই সেমিতে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে তারা নিউজিল্যান্ডকে সেমিতে পাবে। এশিয়ার যে কোন টিম থেকে নিউজিল্যান্ড সেমিতে সহজ প্রতিপক্ষ। আর বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটিয়, রাজনৈতিক সম্পর্ক সবারি জানা। বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য অনেক বড় সুযোগ ছিল এবার। এখন অনেকে ভাবতেই পারেন যে ভারত চেষ্টা করছে। আদৌ কি করছে? শেষ ৫/৭ ওভারে ধোনি পান্ডিয়ার মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানরা কোন শটই অফার করেনি। হাউ ফানি। এমন নির্লজ্জতা কেমনে দেখাতে পারে! তারা প্রমাণ করল’। এনআই মিঠু নামের একজন বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্ত লিখেছেন, ‘ম্যাচটা জেতার কোন চেষ্টায় করেনি ভারত। ম্যাচের এই অবস্থায় ধোনিকে এমন নির্লিপ্ত ব্যাটিং কখনও করতে দেখি নাই।’ মইনুল হাসান টিপু নামে একজন লিখেছেন, ‘বুঝলাম না ইন্ডিয়া এমন করল কেন? জেতার জন্য তাদের সে ইন্টেন্ট কিংবা আর্জেন্সি দেখা যায়নি। শেষদিকে যেভাবে সিঙ্গেল নিচ্ছিল এর কোন ব্যাখ্যা নেই আসলে। একেবারে অদ্ভুত ব্যাটিং! ইন্ডিয়া আজ হারাতে কমফোর্ট জোনে থাকবে না। হয়ত তারা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হয়ে সেমিফাইনালে যাবে। ইংল্যান্ড যদি সেমিফাইনালে উঠে পুনরায় ইন্ডিয়ার সঙ্গে দেখা হতে পারে। ইংল্যান্ড অবশ্যই আজ জেতাতে ওদের সঙ্গে এগিয়ে থাকবে। অন্যদিকে আরেকটা পজেটিভ দিকও আছে। ইন্ডিয়া আজ হারাতে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে থাকবে, তারা এখনও অফিসিয়ালি কোয়ালিফাই করেনি। আর শেষদিকের মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিতও হবে। ইন্ডিয়া এক ম্যাচ হারলেও ওদের মিডিয়া, দর্শকরা প্রচুর চাপ তৈরি করে। এখানে বাংলাদেশের এডভান্টেজ। কয়েকদিনের বিরতিতে একদম চাঙ্গা হয়ে আছে টাইগাররা, যারা ক্লান্ত ইন্ডিয়াকে পাবে। ইন্ডিয়াকে হারানো যাবে। তবে বুমরা সবচেয়ে বড় থ্রেট। যদি কিন্তুর সমীকরণ না ভেবে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ভাল প্ল্যান নিয়ে মাঠে নামতে হবে।’ কেউ কেউ তো ভারত পাতানো খেলা খেলেছে বলেও দাবি করছেন। রবিউল ইসলাম রবি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এই প্রথম কোন একটি ম্যাচকে আমার কাছে পাতানো মনে হলো!’ মুমতাজুল করিম নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘পাতানো খেলায় ইন্ডিয়া ইচ্ছা করে হারছে। ধোনির ব্যাটে বল লাগে না। হারছে তারপরও ইন্ডিয়ার দর্শকরা নাচছে।’ পলাশ সরকার নামে একজন লিখেছেন, ‘আহারে! কষ্ট লাগে তাদের জন্য যারা ক্রিকেটকে ভদ্রলোকীয় খেলা মনে করে, যারা ক্রিকেটারদের দেবতা মনে করে!!! আজকের ইংল্যান্ড ও ইন্ডিয়ার ম্যাচের পর নিশ্চয়ই তাদের চোখের ব্যান্ডেজ খুলে যাবে। তারা এখন থেকে এই খেলাটিকে অন্যসব খেলার মতো এর আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জয়কেও অনেকে পাতানো হিসেবে অভিযোগ করেছেন।
×