ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাটার মাস্টারের রেকর্ড!

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৩ জুলাই ২০১৯

কাটার মাস্টারের রেকর্ড!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভারতের বিপক্ষে বোলিং করতে নামলেই যেন দুরন্ত হয়ে ওঠেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যাত্রাই শুরু হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে। অভিষেকে সেই ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে ৫টি এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ধূমকেতুর মতো উপস্থিতি ঘোষণা করেছিলেন। বিশ্বকাপে ভাল যাচ্ছিল তার। আগের ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশী পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা বোলিং করলেন। আবারও সেই ভারতের বিপক্ষে। প্রায় চার বছর পর আবার ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার। বার্মিংহ্যামে দলের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ১০ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি। দেশের পক্ষে এটি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেরা বোলিং। বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান আগের ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। বিশ্বকাপের এক আসরে এখন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেট দখলের রেকর্ড মুস্তাফিজের। ৭ ম্যাচে তার উইকেট ১৫টি। বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ২০০৭ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। মুস্তাফিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা যেমন হয়েছিল সেটা আর পরের বছরের শেষদিক থেকেই থাকেনি। ২০১৫ সালে ক্যারিয়ার শুরু করে সারাবিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে গবেষণার বিষয় হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মুস্তাফিজ মাঝে যেন অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন মাঝে কিছু সময়। তবে বিশ্বকাপের আগে থেকেই নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে অন্যতম এ ভরসা। ভাল ছন্দে আছেন সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। ২৩ বছর বয়সী এ বাঁহাতি চলতি বিশ্বকাপেও দারুণ বোলিং করছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট ছিল তার। ভারতের বিপক্ষে মঙ্গলবার প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৫ রান দিলেও পরের ২ ওভারে ১৮ রান দেন। ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে ২৩ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ইনিংসের ২৪তম ওভারে আক্রমণে ফিরে প্রথম বলেই রোহিত শর্মার কাছে ছক্কা হজম করে ওভার শেষ করেন ১১ রান দিয়ে। আবার ফেরেন ৩৯তম ওভারে। সেই ওভারটিতে দারুণভাবে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় বলে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে সাজঘরে ফেরান। চতুর্থ বলে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হারদিক পা-িয়াকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ দেননি, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। মেডেনসহ ২ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। দারুণভাবে ফেরার পরও পরবর্তী ওভারে বিরতি দিয়ে ৪২তম ওভারে আবার আক্রমণে আনা হয় মুস্তাফিজকে। তিনি সেই ওভারে ১০ রান দিলে আবার বিরতি দিয়ে তাকে ৪৬তম ওভারে ফেরান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। শেষের ৩টি ওভার দুর্দান্ত বোলিং করেন ফিজ। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ঠিকভাবে খেলতে পারেননি তাকে। ৪৬তম ওভারে ৯ রান দেয়ার প্রতিশোধ নিয়েছেন ৪৮তম ওভারে দীনেশ কার্তিককে তুলে নিয়ে। ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও মোহাম্মদ শামিকে তুলে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি দেখান। এর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশী পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং করেছিলেন ডানহাতি শফিউল ইসলাম। ২০১১ বিশ্বকাপে মিরপুরে তিনি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৮ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট। এবার মুস্তাফিজ ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ৫৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিলেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপের ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেও পেসারদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই কীর্তি দেখালেন। আগের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে সাকিব ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়ার বিরল নজিরটা গড়েছিলেন। এ ম্যাচের ৫ উইকেট শিকারে চলতি বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ থেকে মুস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫টি। এর আগে এক বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেট ছিল বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাকের। ২০০৭ বিশ্বকাপে তিনি ৯ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন। এখন সেরা হয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। পেসারদের মধ্যে ২০০৭ বিশ্বকাপে মাশরাফির ৯ ম্যাচে ৯ উইকেট ছিল এক আসরের সেরা বাংলাদেশের হয়ে। ২০১৫ সালের ১১ নবেম্বর মিরপুরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর আর ইনিংসে ৫ উইকেট নিতে পারেননি মুস্তাফিজ। সাড়ে চার বছর পর আবার ৫ উইকেট নিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে সবসময়ই দুর্দান্ত এ বাঁহাতির উইকেট ৭ ম্যাচেই ২০টি। ৫৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখন তার উইকেট সংখ্যা ৯৮টি। আর দু’টি উইকেট পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে শিকার করতে পারলেই ষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে ১০০ ওয়ানডে উইকেটের মালিক হবেন তিনি।
×