ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক বিশ্বকাপ আসরে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে চার সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এক আসরে ৫ শতাধিক রান

সাঙ্গাকারার রেকর্ড স্পর্শ করলেন রোহিত

প্রকাশিত: ১২:০২, ৩ জুলাই ২০১৯

সাঙ্গাকারার রেকর্ড স্পর্শ করলেন রোহিত

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছোটে। মঙ্গলবার বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে নামার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২ ওয়ানডেতে ৫৫.৬০ গড়ে ৫৫৬ রান করেছিলেন ২টি করে শতক ও অর্ধশতক হাঁকিয়ে। গত বিশ্বকাপে দুর্বার বাংলাদেশের সেমিতে ওঠার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছিলেন রোহিতই ১২৬ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলে। এবার তিনি বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে খেললেন ৯২ বলে ৭ চার, ৫ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস। ৪ বছর আগে মেলবোর্নে ভুল আম্পায়ারিংয়ে জীবন পেয়েছিলেন, এবার তামিম ইকবাল ক্যাচ হাতছাড়া করায় ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন পেয়ে এই শতক হাঁকিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী রোহিত। এক বিশ্বকাপে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ৪টি শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। চলমান ১২তম বিশ্বকাপ পর্যন্ত একবারই মাত্র কোন ব্যাটসম্যান এর আগে এক আসরে চারটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। গত বিশ্বকাপে কুমার সাঙ্গাকারা সেই রেকর্ড গড়েছিলেন। এবার তাকে স্পর্শ করলেন রোহিত। এছাড়া দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রোহিত এক আসরে ৫ শতাধিক রান করার মাইলস্টোনও পেরিয়েছেন। এর আগে শচীন টেন্ডুলকর দুই আসরে ৫ শতাধিক রান করেছিলেন। গত বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারা চারটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করা সাঙ্গাকারা পরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আরও তিনটি শতক হাঁকান। টানা চারটি শতক হাঁকানোর সেই রেকর্ডটি অবশ্য রোহিত ছুঁতে পারেননি। গত বিশ্বকাপে রোহিত শুধু একটিই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে মেলবোর্নে ১২৬ বলে ১৩৭। সেই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার অবশ্য রোহিত প্রথম থেকেই আছেন দারুণ ফর্মে। এবার ভারতের উদ্বোধনী ম্যাচেই সেঞ্চুরি পেয়ে যান। এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে আবার শতক হাঁকিয়েছিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেদিন ম্যানচেস্টারে ১১৩ বলে ১৪০ রানের যে ইনিংস খেলেন সেটিই বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে রোহিতের সেরা ইনিংস ছিল। পরের দুই ম্যাচ ভাল যায়নি তার। তবে আবার তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রান করে। মঙ্গলবার তাই চলমান বিশ্বকাপে ভারতের ‘সেঞ্চুরি মানব’ হিসেবে পরিণত হওয়া রোহিতের কাছ থেকে আরেকটি শতক আশা করছিল দল। কারণ এ ম্যাচে বাংলাদেশের যেমন জয়টা অতীব জরুরী তেমনি ভারতের জন্যও প্রয়োজন। সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে শেষ দুই ম্যাচের মধ্যে অন্তত একটি জিততেই হবে তাদের। রোহিত তাই দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন। এজবাস্টনের একটি প্রান্ত খুবই ছোট। সেদিকটা টার্গেট করেই ইংল্যান্ড আগের ম্যাচে ভারতীয় বোলারদের পিটিয়ে তুলোধুনো করেছিল। সেই শিক্ষাটা কাজে লাগিয়েছেন ভারতের দুই ওপেনার। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে রোহিত প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারের সুবিধাটা কড়ায়-গ-ায় উসুল করে নিয়েছেন। ৬৯ রান উঠেছে কোন বিপদ ছাড়াই। তবে ভারতীয়দের বড় বিপদটা যে ঘটেনি তারজন্য দায়ী তামিম ইকবাল। মুস্তাফিজুর রহমানকে পুল করতে গিয়ে পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত ৯ রানে ক্যাচ দিলেও রোহিতকে সাজঘরে ফেরাতে পারেননি সহজ ক্যাচটি ফেলে দেয়া তামিম। এরপর আর রোহিত সুযোগ দেননি। হয়ে উঠেছেন দুর্বার। আরও পরিশীলিত ও স্বাচ্ছন্দ্য ব্যাটিং উপহার দিয়ে ৪৫ বলেই ছুঁয়ে ফেলেন অর্ধশতক। ৪টি চার, ৩টি ছক্কা ততক্ষণে হাঁকিয়েছেন। তবে পরের অর্ধশতকটা ৪৫ বলেই করলেও আর মাত্র ২টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ৯০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর অবশেষে বিদায় নেন রোহিত। এটি তার টানা দ্বিতীয় শতক। শেষ পর্যন্ত অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকারের বলে যখন লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তখন তার রান ৯২ বলে ৭ চার, ৫ ছক্কায় ১০৪। এটি চলতি বিশ্বকাপে তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। গত বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারা এক আসরে ৪ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন। এবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন রোহিত। তবে সাঙ্গাকারা করেছিলেন টানা। ৭ ম্যাচে ৫৪১ রান করেছিলেন সাঙ্গাকারা। সমান ম্যাচ ব্যাটিং করে রোহিতের রান ৫৪৪। অর্থাৎ রাানের দিক থেকে রোহিত ছাড়িয়ে গেছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তিকে। এর আগে ভারতের হয়ে এক আসরে সর্বাধিক ৩ সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তি ছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর। ২০০৩ বিশ্বকাপে কলকাতার যুবরাজ ওই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। এছাড়া ৩টি করে শতক ছিল অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহ (১৯৯৬ বিশ্বকাপ) ও ম্যাথু হেইডেনের (২০০৭ বিশ্বকাপ)। এছাড়া ভারতের হয়ে এক বিশ্বকাপ আসরে ২টি করে সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড আছে শচীন টেন্ডুলকর (১৯৯৬), রাহুল দ্রাবিড় (১৯৯৯), শিখর ধাওয়ান (২০১৫) ও টেন্ডুলকরের (২০১১)। সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন রোহিত। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ভারতের পক্ষে এক আসরে ৫ শতাধিক রানের রেকর্ড এর আগে শুধু শচীনেরই ছিল। তিনি ২০০৩ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে যে ৬৭৩ রান করেছিলেন সেটি এখন পর্যন্ত এক আসরে সর্বাধিক রানের রেকর্ড। সেই ‘লিটল মাস্টারই’ ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৫২৩ রান। এবার ৭ ম্যাচ শেষে রোহিতের রান ৫৪৪। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটিতে নামার আগে ৬ ম্যাচে ৪৪০ রান ছিল তার। শচীনের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এক বিশ্বকাপে ৫ শতাধিক রান করার কৃতিত্ব দেখালেন রোহিত। এক আসরে সর্বাধিক রান করার দিক থেকে এখন ভারতের পক্ষে দুই নম্বর অবস্থানে তিনি। আর সার্বিক পরিসংখ্যানে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে উঠে এসেছেন ৫ নম্বরে। তার ওপরে শচীন (৬৭৩) ছাড়াও আছেন ৬৫৯ রান করা হেইডেন (২০০৭), ৫৪৮ করা শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়বর্ধনে (২০০৭) ও ৫৪৭ রান করা নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল (২০১৫)। চলতি আসরে ভারতীয় ইনিংস শেষ হওয়া পর্যন্ত রোহিতই সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। তার পেছনে পড়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার- ডেভিড ওয়ার্নার (৫১৬) ও এ্যারন ফিঞ্চ (৫০৪) এবং বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান (৪৭৬) ও ইংল্যান্ডের জো রুট (৪৭৬)।
×