ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত সংযোগ পেতে টিআইএনের বাধ্যবাধকতা থাকছেই

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২ জুলাই ২০১৯

 বিদ্যুত সংযোগ পেতে টিআইএনের বাধ্যবাধকতা থাকছেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত সংযোগ পেতে সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর এলাকার গ্রাহকদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের (টিআইএন) বাধ্যবাধকতা থাকছেই। বিদ্যুত বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও অর্থবিলে বিষয়টি রেখেই বাজেট পাস করা হয়েছে। শহরের বিতরণ কোম্পানিগুলোও বলছে প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিদ্যুত বিল দেন এমন অনেক গ্রাহক রয়েছেন। ভবিষ্যতে এই শ্রেণীর গ্রাহকের করযোগ্য আয় না থাকলেও তাদের টিআইএন দিয়েই বিদ্যুত সংযোগ পেতে হবে। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, কারও করযোগ্য আয় না থাকলেও বিদ্যুত সংযোগের জন্য টিআইএন করতে হবে। এটি বিদ্যুত গ্রাহকদের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে। এবার বাজেটে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শহরে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা আয়কর প্রদান আইনে বাধ্য নয়। সেক্ষেত্রে তাদের বিদ্যুত সংযোগ প্রদানে জটিলতা সৃষ্টি হবে। জানতে চাইলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) -এর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী এটিএম হারুন-অর-রশিদ বলেন, এখনও আমরা আদেশ পাইনি। আদেশ হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন দিতে হবে। প্রতি মাসে ১০০ থেকে ১৫০ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহার করেন এমন গ্রাহক সংখ্যা কেমন জানতে চাইলে বলেন, সঠিক সংখ্যা এই মুহূর্তেই বলা সম্ভব নয়। তবে বহু গ্রাহক রয়েছেন তারা এমন বিদ্যুত ব্যবহার করেন। দেশের তিন কোটি ৩৪ লাখ গ্রাহকের বড় অংশেরই টিআইএন নম্বর নেই। এরমধ্যে এক কোটি ২০ লাখ গ্রাহক আবার অতি দরিদ্র শ্রেণীর ফলে এসব গ্রাহকদের জন্য টিআইএন নম্বর দেয়া কঠিন। তবে এই দরিদ্র শ্রেণীর গ্রাহক শুধু গ্রামে নয় শহরেও রয়েছেন। এদের সংযোগের ক্ষেত্রে জটিলতার আশঙ্কা জানিয়েছেন ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহিদ সারোয়ার বলেন, জটিলতা তো হবেই। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিন দেয়া কঠিন। আবার না দিলে সে বিদ্যুত সংযোগও পাবে না। প্রসঙ্গত এখন আবাসিকে বিদ্যুতের সংযোগর জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে আবেদনকারীর দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুত লোড হলে সৌর প্যানেল স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কারও ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকলে অনাপত্তিপত্র দিয়েও বিদ্যুত সংযোগ নেয়া যায়। তবে এখন থেকে এর সঙ্গে টিন দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য এই আদেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অর্থমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে জানান, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি। ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। বর্তমানে সারাদেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবির গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। আরইবির গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ প্রান্তিক গ্রাহক। যারা প্রতি মাসে ৫০ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহার করেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রান্তিক (লাইফ লাইন) গ্রাহকরা খুবই দরিদ্র। অনেকেই দিনমজুর। তাদের পক্ষে টিআইএন করা কষ্টদায়ক এবং অমানবিক। তাছাড়া টিআইএন থাকলে প্রতি বছর আয়কর বিবরণ জমা দিতে হয়। যা ওই দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের জন্য হয়রানিমূলক, কর্ম-কালের অপচয় এবং সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্গত কারণে বিদ্যুত সংযোগে টিআইএন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানায় বিদ্যুত বিভাগ।
×