ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার

বিদেশী চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলে ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২ জুলাই ২০১৯

 বিদেশী চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলে ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশী টেলিভিশনে দেখালে সোমবার থেকেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যাবল অপারেটররা যাতে বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রচার করতে না পারে এবং টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠনের নির্ধারণ করে দেয়া ক্রম অনুযায়ী যেন টিভি চ্যানেল দেখানো হয়, তা নিশ্চিত করতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সোমবার সচিবালয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় আলাপকালে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা দুই বছরের জেল দিতে পারবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মন্ত্রী বলেন, বিদেশী টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো বিশেষত দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপনসহ বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বন্ধের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা নোটিস জারি করেছিলাম। এছাড়া টেলিভিশনের ক্ষেত্রে আমরা যে ক্রম ঠিক করে দিয়েছি সেটা ক্যাবল অপারেটররা অনুসরণ না করলে অর্থাৎ সরকারী টেলিভিশনগুলো শুরুতে এবং বেসরকারী টিভির সম্প্রচারের তারিখ অনুযায়ী যে ক্রম ঠিক করে দেয়া হয়েছে সে ক্রম অনুসরণ না করলে এবং স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ক্যাবল অপারেটর দেখা যায় তারা নিজেরা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন এবং অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, এসব বাস্তবায়নে আমরা তাদের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম ৩০ জুন পর্যন্ত। সে সময়সীমা শেষ হয়েছে। যে নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে তা যদি অনুসরণ করা না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার থেকেই ব্যবস্থাগ্রহণ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই মর্মে নোটিস জারি করা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের আজ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানে এ আইন ভঙ্গ হবে সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ, গণমাধ্যম এবং আইনকে সমন্বিত রাখার স্বার্থে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই বছরের জেল দিতে পারবে, জরিমানা করতে পারবে। প্রথমবার অপরাধের জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা এবং একই সঙ্গে দুই বছরের কারদ-ও দিতে পারবে। সে ক্ষমতা ভ্রাম্যমাণ আদালতের রয়েছে। এ ধরনের কোন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও খবর সংগ্রহ করিনি। তবে এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নজর রাখতে বলেছি। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। টিভি খুললেই দেখা যায় বিদেশী চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে- এর জন্য কি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার প্রয়োজন আছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রয়োজন আছে। কারণ কোথায় এসব ব্যত্যয় ঘটছে সেটা তো দেখতে হবে। এটা সারাদেশের বিষয় তো, এ জন্য দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়াও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপরাধ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। তিনি বলেন, ক্যাবল অপারেটররা সময় চেয়েছিলেন। আমরা তাদের সময় দিয়েছি। তারা আরও সময় চান। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল তো সময় দেয়া সম্ভব নয়। সে জন্যই আমরা আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচারের আগে সেসব দেশের পরিবেশকরা বিদেশী চ্যানেলের বিজ্ঞাপন ছেঁটে শুধু অনুষ্ঠান প্রচার করে। কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছিল না, বরং অনেক দেশী প্রতিষ্ঠান বিদেশী চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করছিল। তাতে দেশী চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন হারাচ্ছে অভিযোগ করে সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছিলেন টেলিভিশন মালিকরা। এই অবস্থায় গত এপ্রিলে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই ক্যাবল অপারেটর ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান যাদু মিডিয়া ভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডকে বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশী টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের নোটিস দিলে দেশে ভারতীয় জি নেটওয়ার্কের পাঁচটি চ্যানেলের সম্প্রচার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ক্যাবল অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতারা পরে জানান, বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশী চ্যানেল সম্প্রচারের প্রযুক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাদের। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া নোটিসের সময় গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে তাদের বলা শুরু করেছি। তারা পাঁচ মাস সময় পেয়েছে, আরও সময় চায়, কিন্তু অনির্দিষ্টকাল সময় দেয়া তো সম্ভব নয়, সেজন্য আমরা আইন প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের পক্ষ থেকে সম্প্রচারের তারিখ অনুযায়ী টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রম ঠিক করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুরুতে সরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এবং তারপরে প্রতিষ্ঠার তারিখ অনুযায়ী অন্যান্য বেসরকারী চ্যানেল দেখাতে হবে। এসব বিষয় তদারকি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি বিটিভির প্রতিনিধি এবং তথ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নজর রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশী চ্যানেলে দেশী বিজ্ঞাপন দেখানো কমেছে, এখনও বিদেশী বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, সেটিও আইনসিদ্ধ নয়। আমরা বাস্তবতার নিরিখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। সহসাই নবম ওয়েজবোর্ড সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে ‘সহসাই’ নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর আগে বলেছিলেন, জুন মাসের মধ্যে ওয়েজবোর্ড ঘোষণার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। সহসাই ঘোষণা করা হবে, যতদ্রুত সম্ভব আমরা করব। মোটামুটি সব কিছুই প্রস্তুত, খুঁটিনাটি দু’একটি বিষয় শেষ করেই আমরা ঘোষণা করব। শুধু সংবাদপত্রের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড করা হচ্ছে জানিয়ে হাছান বলেন, এখানে টেলিভিশনকে যুক্ত করার সুযোগ নেই। তবে সম্প্রচার আইন হলে সেই আইনের আলোকে টেলিভিশন সাংবাদিকরাও যাতে যথাযথ বেতন-ভাতা পান, তা নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হবে। সম্প্রচার আইনের খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ভেটিং চলছে। শেষ হলেই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। ২০১৫ সালে সরকারী কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করেছে। দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ নিজামুল হককে প্রধান করে গতবছর ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। এর পর গত ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। বিচারপতি নিজামুল হক গত ৪ নবেম্বর সচিবালয়ে তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণার বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে।
×