ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বৃত্তদের পকেট ভারি করতেই গ্যাসের দাম বেড়েছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২ জুলাই ২০১৯

  দুর্বৃত্তদের পকেট ভারি করতেই গ্যাসের দাম বেড়েছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্বৃত্তদের পকেট ভারি করতেই সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাজেটের মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন জনগণের সম্পদ লুট করে নিচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে আরও বেশি সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে বিএনপি। সোমবার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে মির্জা ফখরুল এই অভিযোগ করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশ (এ্যাব) এই মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে। এ সময় তিনি গ্যাসের দাম বাড়ানোর কঠোর সমালোচনা করে বলেন প্রতি চুলায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৭৫ টাকা। যেসব ব্যবসায়ী এলএনজি আমদানি করছে তাদের সুবিধা দেয়ার জন্যই দাম বাড়ানো হয়েেেছ। তাদের পকেট ভারি করার জন্য এবং দুর্বৃত্তদের পকেট ভারি করার জন্য সরকার এটা করেছে। তিনি বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে লুট করা অর্থ দিয়ে সরকার তাদের ভবিষ্যত নির্মাণ করছে। বাজেটের নাম করে তারা ট্যাক্স আরোপ করেছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়ে তারা তাদের লুণ্ঠনের সম্পদ বাড়াচ্ছে। বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছে এবং ধনী-গরিবের ব্যবধান বাড়ছে। সরকার নিজেরাই একটা লুটেরা সরকার। এক এক করে রাজনৈতিক জীবনে, অর্থনৈতিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে এক ভয়াবহ সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। বিএনপি মহাসচিব মানববন্ধন কর্মসূচীতে আরও বলেন, সরকারের বিরোধিতা করায় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। ২৬ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আছে, এক লাখ মানুষের ওপরে মামলা আছে, দেড় হাজারের ওপরে মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য। মানুষ আজ অসহায়। কোন রকম আশ্রয় ছাড়া, আইনের শাসন ছাড়া মানুষ করুণ অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। সরকার পরিকল্পতভাবে এই সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এই সঙ্কট সৃষ্টি করে তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়। আজকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে সবার চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্ষণ, লুট, অপহরণ করা হচ্ছে। কোথাও কোন বিচার নেই। যেভাবে সরকার আদালত, বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আদালতের অজুহাত দেখিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রাখা হয়েছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে জনগণের ওপর। এ সময় অবিলম্বে এ নির্বাচনের ফল বাতিল করে, নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান মির্জা ফখরুল। মানববন্ধন কর্মসূচীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, ড্যাবের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, এ্যাগ্রিকালচারিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। আজ বিক্ষোভ কর্মসূচী ॥ এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার বিকেলে নয়াল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কর্মসূচী অনুযায়ী আজ দেশব্যাপী জেলা সদর ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হবে। এছাড়া একই দাবিতে ওইদিন ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গণবিরোধী ও গরিব মারার সিদ্ধান্ত। গ্যাসের অযৌক্তিক এই মূল্য বৃদ্ধি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিএনপি। আওয়ামী লীগের ১০ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে ছয় বার। এর আগেও ১৯৯৬-২০০১ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে দুই বার। এক চুলা ১৫০ টাকা ও দুই চুলা ২০০ টাকার গ্যাস এখন ৯২৫ টাকা ও ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। মূলত ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-স্বজনদের লুটপাটের জন্যই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে আবার বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
×