ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাককর্মীদের মজুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২ জুলাই ২০১৯

পোশাককর্মীদের মজুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পোশাক শিল্পকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে ডিজিটাল ওয়ালেট চালু হচ্ছে। সম্প্রতি আরএমজি ডিজিটাল ওয়ালেটের (ই-ওয়ালেট) নামে বিজিএমইএ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে পোশাক কর্মীরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরিও পাবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি স্বল্প পরিসরে চালু করা (পাইলট প্রকল্প) হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে ই-ওয়ালেটকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া হবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব ও বিজিএমইএ সচিব আব্দুর রাজ্জাক এই সমঝোতা স্মারকে নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন। বিজিএমইএর উত্তরা কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ডিজিটাল ওয়ালেট পদ্ধতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা ও বিজিএমইএ পরিচালকবৃন্দ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস শিল্প কর্মীরা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে তারাও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন। পোশাক মালিকদের পক্ষ থেকে এমন একটি উদ্যোগ পোশাক শিল্পকর্মীদের বড় ধরনের সুবিধা তৈরি করবে। তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত, যা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। তাই পোশাক শিল্পকে সকল ধরনের সহযোগিতা দেয়ার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সব সময় সচেষ্ট রয়েছে। স্বল্পপরিসরে পোশাক শিল্পে ই-ওয়ালেট চালু হলো। আগামী তিন মাসের মধ্যে ই-ওয়ালেটকে বড় পরিসরে করার কথা তিনি উল্লেখ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। সরকারের ভিশন ’২১ সালের মধ্যে ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সরকারের গৃহীত কার্যকর উদ্যোগের ফলে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নে ৫ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এসব সেন্টার থেকে জনগণ দুই শ’ রকমের সেবা পাচ্ছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন দেয়া হলে পোশাক শিল্পকর্মীদের বেতনে স্বচ্ছতা আসবে। এমনকি তাদের কেনাকাটাসহ আর্থিক লেনদেন সহজ হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের ফলে সাধারণ নাগরিকরা এখন সহজে, কম খরচে ও ঝামেলাহীন উপায়ে জমির পর্চা, জীবনবীমা, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারী ফরম, পাবলিক পরীক্ষার ফল, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, নাগরিক আবেদন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শসহ অন্তত ২০০ ধরনের সরকারী-বেসরকারী সেবা ইউডিসি থেকে পাচ্ছে। মানুষের হাতের মুঠোয় বিভিন্ন তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন উদ্যোগ গ্রহণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগ ও অধিদফতরের তথ্য ও সেবার মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন তৈরির লক্ষ্যে আইডিয়া জেনারেশন ওয়ার্কশপ চলছে। এসব আইডিয়ার মধ্য থেকে তৈরি করা হয়েছে ৬ শ’ মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ডিজিটাল ওয়ালেটের ফলে পোশাক শিল্পের কর্মী ভাইবোনেরা অর্থ নিরাপত্তা পাবেন। তাদের অর্থ সাশ্রয় হবে। তারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন। বিদ্যুতসহ সব ধরনের সেবার বিল সহজেই পরিশোধ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো কর্মীদের ক্রেডিট প্রোফাইল তৈরি হবে। ফলে তারা যে কোন সমস্যায় ঋণ গ্রহণও করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠার ফলে সরকারী সেবা প্রদান সহজ করা হয়েছে। আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলার অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত কানেক্টিভিটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বাংলাগভনেট প্রকল্পের আওতায় ৫৮ মন্ত্রণালয়, ২২৭ অধিদফতর, ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৬৪ নির্বাচিত উপজেলা নির্বাহী প্রশাসকের কার্যালয় একই নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। ইনফো সরকার-২ প্রকল্পের জেলা ও উপজেলার ১৮ হাজার ১৩০ সরকারী অফিসের কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৮ শ’ ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। -বিসিসি ভবন ও বাংলাদেশ সচিবালয় এসেছে ওয়াই-ফাইর আওতায়। বিগত দিনগুলোতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে মানুষের দোরগোড়ায়। এখন দেশের মানুষ ঘরে বসেই প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারছেন। এমন কি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। তথ্যপ্রযুক্তির যত রকমের সুবিধা রয়েছে তার সব কিছু দেশের মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।
×