ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২ জুলাই ২০১৯

 ঢাকার দিনরাত

বরগুনায় বুধবার স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন সমাবেশ থেকে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে বক্তারা সোচ্চার হচ্ছেন; পাশাপাশি আয়োজিত হয়ে চলেছে মানববন্ধন। তবে সত্যপ্রকাশের দায়বোধ থেকে এটা বলতেই হবে, সামাজিক মাধ্যমে এই হত্যাকান্ড নিয়ে যতোটা প্রতিবাদ চলছে, রাজপথে তার খুব সামান্যই দৃশ্যমান হচ্ছে। তবু রাজধানী হিসেবে ঢাকার একটি সংবেদনশীল ও সাহসী অবস্থান সব সময়েই রয়েছে। সে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণসহ বেশ কয়েকটি স্থানে আয়োজিত হতে দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদ সমাবেশ। বর্ষা ঋতুর ভেতরে গ্রীষ্মকাল আষাঢ়ের মাঝামাঝি চলে এলেও বর্ষার দাপট দেখা যাচ্ছে না তেমন। ঢাকায় কোনদিন এক-দুঘণ্টার জন্য বৃষ্টি হলেও পরদিন সেই খরখরে রোদ। তবে রবিবারই প্রথম মনে হলো বর্ষাকাল চলে এসেছে। কড়া রোদ আর মেঘলা আবহাওয়া ভাগাভাগি করে বিরাজ করেছে দিনভর। বর্ষাকালে আজকাল বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। যেন গ্রীষ্মকাল। তবু তো প্যারিসের মতো ৪৫ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যাচ্ছে না তাপমাত্রা। প্যারিসের কথা ওঠার পেছনে কারণ রয়েছে। সুব্যিখাত আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে কৃত্রিম ঝর্ণার জলাশয়ে প্যারিসবাসী ভিড় করছেন একটুখানি স্বস্তির আশায়। এমন একটি ছবি সংবাদ সংস্থাগুলো লুফে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসমূহে সেই ছবি ভাইরাল হচ্ছে। প্রচন্ড গরমের কারণে হাজার হাজার বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আরেকটি বিষয়ও রয়েছে প্যারিসের প্রসঙ্গ উত্থাপনের। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবসম্পদ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মার্সার প্রকাশিত একটি তালিকা জানাচ্ছে, প্যারিস-ঢাকা এখন সমানে সমান। কীভাবে? খোলাসা করেই বলি। ব্যয় বেড়ে গেছে ঢাকায় বসবাসকারী প্রবাসীদের। গত বছর প্রবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ৬৬তম হলেও, এ বছর তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৭তম অবস্থানে। ঢাকার সঙ্গে যৌথভাবে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় একই অবস্থানে এসে পড়েছে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা পর্যটননগরী প্যারিস। নিউইয়র্কে বসবাসের খরচকে মানদন্ড ধরে অন্য শহরের তুলনা করে ব্যয়বহুল শহরের এ তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। এ বছর পাঁচ শতাধিক শহরে জরিপ করা হলেও, তালিকায় রাখা হয়েছে ২০৯টি। জরিপে প্রতিটি শহরের ২০০টি বিষয়ের তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাসা ভাড়া, যাতায়াত, খাবার, পোশাক, নিত্যপণ্য ও বিনোদনের খরচ। প্রতিটি পণ্যের দাম মার্কিন ডলারের বিপরীতে ওই দেশের মুদ্রার মানের সঙ্গে তুলনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ভয়ে কি ফল খাব? হ্যাঁ, এই ভরা ফলের মৌসুমে বাছবিচার না করে ফল খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। রোজার মাসে বিরত থাকলেও এখন আর অত ভয় পাচ্ছি না। বলা চলে লোভনীয় রসালো ফলের বিরাট সমারোহ দেখে কার না জিভে জল আসবে! ঢাকার পথে পথে এখন রীতিমতো ছোটখাটো ‘ফল বাগান’ চোখে পড়ছে। কোথাও দেখি তরমুজের পাহাড় উঠে গেছে, কোথাও কাঁঠালের সমাহার। বাজারে বোধহয় জায়গা পাচ্ছেন না এসব ফল ব্যবসায়ী। ফলে পথই এখন হাট। পথচলতি রাস্তার ধারে জড়ো করে রাখা নানা রসময় মৌসুমী ফলের বাহ্যিক সৌন্দর্য বহু ঢাকাবাসীর দৃষ্টি কাড়ছে। দেশে নতুন নতুন জাতের আম, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন ফলসহ বিদেশী জাতের ফলের আবাদ হচ্ছে। একসময় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশী ফলের ওপর নির্ভরতা ছিল। এখন এই সময়ে দেশীয় ফলের সরবরাহ বাড়ছে। তাজা ও রাসায়নিকমুক্ত ফলে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ২১ লাখ কেজি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ফল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৯৯ লাখ ৭২ হাজার কেজি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ২১ লাখ কেজিতে। এই অর্থবছর শেষেও ফল উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। বিদেশী ফল বেচাকেনার ভরা মৌসুমেও এখন পাওয়া যাচ্ছে দেশী ফল। এর মধ্যে প্রধান ফল হলো নতুন নতুন জাতের পেয়ারা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মৌসুমী ফলের কল্যাণে ঢাকার রূপ যেন কিছুটা বদলে যায়। তবে আষাঢ় মাসে বাজাওে কাঁঠাল চলে আসায় বিচিত্র রঙের ফলে ভরে ওঠা দোকানগুলো দেখতে ভারি ভাল লাগে, আর তা আমাদের গ্রামের কথাও মনে করিয়ে দেয়। গ্রীষ্মে রসাল ফল দেহের জন্য উপকারী তা বলাইবাহুল্য। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বেশি পুষ্টি পাওয়ার উপায় হলো মধুমাসে মৌসুমী ফল খাওয়া। বিশেষ করে তরমুজের দুটি ফালি কিংবা কাঁঠালের দশ-বারোটি কোয়া খেলে এক বেলার খাবার হয়ে যায়। ঢাকার শ্রমজীবী মানুষ বলতে সবার আগে যে কয়টি পেশার নাম চলে আসে তার ভেতর রয়েছে রিক্সাচালনা, পোশাক-শ্রমিক ও নির্মাণ-মজুর। এদের সীমাবদ্ধ আয়ের টাকা দিয়ে ক্রয় ক্ষমতা আর কতটুকুই বা অর্জিত হয়। তাই রাজধানীতে রাস্তার পাশে এদেরই এক ফালি তরমুজ কিংবা এক প্লেট কাটা আনারস কিনে খেতে বেশি দেখা যায়। স্নিগ্ধ চিত্র ও শঙ্কা সেদিন বাসের ভেতর মায়ের কোলে অল্পদিন আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া এক শিশুর স্নিগ্ধ মুখ দেখে মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল (ছবি দেখুন)। শ্রমজীবী দরিদ্র পরিবারের শিশু। মায়ের কোলে পরম নিশ্চিন্তে নিদ্রারত শিশু- দৃশ্যটি মূল্যবানই মনে হলো। এমন কত শিশুই না জন্ম নিচ্ছে ঢাকা শহরে, সবার পক্ষে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা সম্ভবও হচ্ছে না। দারিদ্র্য এখনও অভিশাপ হয়ে বিরাজ করছে সমাজে। শিশুটির ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেল কয়েকদিন আগে খবরের কাগজে পড়া আরেক মেয়েশিশুর কথা। ঢাকার মুগদাপাড়ায় সেই শিশুটির মা মেয়েটিকে ‘চিরঘুম পাড়িয়ে’ নিজেও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। ব্যর্থ হয়েছেন। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ ছিল। নিজ ভাইবোনদের থেকে দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল ওই মায়ের। মেয়েকে নিয়ে একাই থাকতেন ভাড়া বাসায়। স্বামী মাদকের বলি হয়েছিলেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে রোজার মাসে মারা যান। শিশুসন্তান রোজাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার সময় ছিল সামাজিক গঞ্জনা, অনেকেই বলত তাকে স্বামী হত্যাকারী। আবার ভাড়াবাড়ির মালিকের সঙ্গেও ভাড়া নিয়ে কলহ হয়। এসব চাপ সহ্য করতে ব্যর্থ মা নিজে সাতটি ঘুমের বড়ি খান। মেয়েকে পানিতে গুলিয়ে খাওয়ান তিনটে বড়ি। মেয়ে চিরঘুমে নিমজ্জিত হলেও মা বেঁচে যান। আসলেই কি তিনি বাঁচলেন? বাসের মধ্যে ক’দিন বয়সী শিশুকে দেখে ভালোলাগার কথা বলেছি। কিন্তু এর পাশাপাশি এক অজানা শঙ্কায় মন বিষণ্ণ ও হলো। এই সমাজে কত বিপত্তি আর বিপন্নতা উজিয়েই না শিশুটিকে বেঁচে থাকতে হবে। মেয়েশিশু হওয়ায় তার নিরাপদ জীবনযাপনও হয়ে উঠবে ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তরের হাওয়ার সাহিত্য সন্ধ্যা সাহিত্য সংগঠন হিসেবে উত্তরের হাওয়া ঢাকায় একটি আশাজাগানিয়া স্থান করে নিয়েছে লেখক-পাঠক মহলে। তাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই থাকে পরিকল্পনার ছাপ। আর এ জন্যে সংগঠনের সভাপতি কবি হোসেন দেলওয়ার, প্রধান সমন্বয়ক ও অনুষ্ঠান সঞ্চালক কবি সোহেল হাসান গালিব এবং কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্যবৃন্দ একাধিকবার আলোচনায় বসেন। ‘তুমি যেন বলো আর আমি যেন শুনি’ এমন একটি চরণ উৎকীর্ণ ছিল শুক্রবার সন্ধ্যায় দীপনপুরে আয়োজিত সাহিত্য অনুষ্ঠানের ব্যানারে। অনুষ্ঠানে গত বইমেলায় প্রকাশিত পাঁচটি নির্বাচিত বই নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কয়েকজন কবির উপস্থিতিতে তাদের প্রতিনিধিত্বশীল কবিতার আবৃত্তি পরিবেশিত হলো। জানতে চাওয়া হলো স্বয়ং কবির মন্তব্য (একজন বাদে সব কবিরই আবৃত্তি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ পেলো)। আলোচিত বইগুলোর মধ্যে কবিতা, গদ্য ও ছড়াগ্রন্থ ছিল। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ আয়োজনে সারাক্ষণই মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন প্রধান অতিথি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও সংগঠনের সভাপতি। স্বল্পায়তন মঞ্চের এক কোণে রাখা ছিল রোসট্রাম। সেখানে এসেই বক্তারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ফলে দর্শকদের মূল আগ্রহটা ছিল সেখানেই। অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে ভাবছিলাম ভূমিকাহীন এভাবে মঞ্চে বসে থাকা উপবিষ্টদের জন্যে কতখানি অস্বস্তিকর। আবৃত্তি পরিবেশন করা হচ্ছে যে কবির কবিতা, তিনি ওই স্বল্প সময়টুকুর জন্যে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছিলেন। একজন কবি এই বিড়ম্বনাময় আসনের সমালোচনাও করে গেলেন। আসলে কবির জন্যেও অতিথিদের মতো আরামদায়ক আসন থাকাটাই সমীচীন ছিল। যাহোক, মঞ্চসজ্জা নিয়ে নিশ্চয়ই আগামীতে আরও সতর্ক হবেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কেননা মঞ্চ অনুষ্ঠানে মঞ্চ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছোট্ট জায়গায় দুজন আবৃত্তিকারের পরিবেশনা করতেও অসুবিধে হওয়ার কথা। গ্রন্থের আলোচকরা লেখকের মুখের দিকে না তাকিয়ে তার নিজের খোলামেলা অভিমত তুলে ধরার বিষয়টি নিঃসন্দেহে শ্রোতারা উপভোগ করেছেন। গ্রন্থ-লেখকদেরও উপকৃত হওয়ার কথা। আলোচিত গ্রন্থের লেখকরাও জানান তাদের প্রতিক্রিয়া। একজন বংশীবাদক বসেছিলেন কিছুটা নেপথ্যে, মাঝেমধ্যে তার বাঁশির সুর অনুষ্ঠানে মধুরতা এনেছে। গুণী প্রকাশকের পঞ্চাশ মোস্তফা সেলিম। একাধারে দেশের খ্যাতিমান প্রকাশক, লেখক, সংগ্রাহক ও নাগরিলিপি-গবেষক। কিছুকাল আগে তিনি পঞ্চাশে পা দিলেও সতীর্থ, স্বজনদের উদ্যোগে ঘটা করেই গত সপ্তাহে তার জন্মদিনটি পালিত হলো। শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর পিবিএস মিলনায়তনে জন্মদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য পরিষদ। কবি-সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। উপস্থিত সবাই মেতে ওঠেন আড্ডায়। শুরুতেই মোস্তফা সেলিমকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রকাশক বন্ধুরা। এরপর সবাই মিলে জন্মদিনের কেক কাটেন। আগত সকল সুহৃদদের গানের মাধ্যমে স্বাগত জানান কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী। মোস্তফা সেলিম বলেন, আমি আজকের এই দিনটার জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আবেগে আপ্লুত। প্রকাশকদের জন্মদিন এমন ঘটা করে এর আগে করা হয়নি। যার জন্য আমি আপনাদের কাছে চিরঋণী হয়ে গেলাম। যারা আমার এই ক্ষুদ্র জীবনকে ভালবাসা দিয়ে রাঙিয়েছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশের একটি প্রায় বিলুপ্ত বর্ণলিপিকে আমি প্রাণ দেয়ার চেষ্টা করেছি। এই কাজের জন্যই আপনারা আজকের দিনে আমার জন্মদিন পালন করছেন। আমি চাই নাগরিলিপি বাংলা সাহিত্যে জীবন পাক।’ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লেখক, কবি, সাংবাদিকসহ অনেকেই। উপস্থিত ছিল প্রকাশক-পুত্র নাফিস উৎস, যার নামেই মোস্তফা সেলিমের উৎস প্রকাশন। ৩০ জুন ২০১৯ [email protected]
×