ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন ঝরাচ্ছেন মিচেল স্টার্ক

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১ জুলাই ২০১৯

 আগুন ঝরাচ্ছেন মিচেল স্টার্ক

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ অনন্য নজির স্থাপন করলেন মিচেল স্টার্ক। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে তিনবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়লেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার। লর্ডসে শনিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ২৪৩ রান করেছিল অসিরা। জবাবে স্টার্কের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৪৩.৪ ওভারে ১৫৭ রানে অলআউট হয় কিউইরা। আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা এ্যারন ফিঞ্চের দল তুলে নেয় ৮৬ রানের বড় জয়। ম্যাচে স্টার্কের বোলিং ফিগার ৯.৪-১-২৬-৫। নটিংহ্যামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৬ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। আর অকল্যান্ডে গতবার (২০১৫) এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিতে খরচ করেছিলেন ২৮ রান। এর আগে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দুইবার ৫ উইকেট করে নিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা ও শহীদ আফ্রিদি। শুধু তাই নয়, ২৪ উইকেট নিয়ে এক বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিকারি এখন স্টার্ক। ২৬ উইকেট নিয়ে স্টার্কের সামনে কেবল পূর্বসূরি গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রা। এরপরও ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার বলেছেন, বিশ্বকাপে এখনও তারা নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি! স্টার্ক বলেন, ‘আমরা এখনও নিখুঁত পারফর্মেন্স দেখাতে পারিনি, সেরা খেলাটাও এখনও বাকি। আমরা মাঠে কি করতে পারি সেটার ঝলক দেখা গেছে শুধু। তবে উন্নতির আরও জায়গা আছে। সেমিতে আমরা নিজেদের সেরা খেলাটা খেলে ফাইনালে যেতে চাই, ফাইনালে তারচেয়েও ভাল খেলতে চাই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা দারুণ, কিন্তু এটা তো বিশ্বকাপ জেতা নয়।’ সর্বোপরি বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে স্টার্কের উইকেট ৪৬। তারচেয়ে বেশি উইকেট আছে আর মাত্র পাঁচজনের। এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রার। ২০০৭ বিশ্বকাপে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর মাত্র ৩ উইকেট নিলেই ম্যাকগ্রাকে টপকে রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন স্টার্ক, ‘বিশ্বকাপ না জিতলে ব্যক্তিগত রেকর্ডের কোন মানেই নেই। এই দলটার জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরেই আমি খুশি। আমাদের জয়ে অন্যতম বড় ভূমিকা অধিনায়ক ফিঞ্চেরই। সে অসাধারণ একজন অধিনায়ক, খুবই ঠা-া মাথায় সবকিছু সামলায়। যখন আমাদের খারাপ সময় যাচ্ছে তখন সে মাথা ঠান্ডা রাখে। তার এমন আচরণেই বোলার ও ফিল্ডাররা ভরসা পায়’ বলেন তিনি। এ নিয়ে এক আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট শিকার করেছেন মিচেল স্টার্ক। এক আসরে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে স্টার্কের দরকার আর মাত্র দুটি উইকেট। এক আসরে ২৩ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছেন চামিন্দা ভাস, শন টেইট ও মুত্তিয়া মুরলিধরন। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা ২০০৭ বিশ্বকাপ আসরে রেকর্ড ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন। তখন ম্যাকগ্রার এই রেকর্ড কেউ কি ভেবেছিল ভাঙ্গতে ছুটে আসছেন অস্ট্রেলিয়ারই কোন এক ফাস্ট বোলার। ম্যাকগ্রা অবসরের পর তো অসিদের বোলিং লাইনআপ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতেন। তবে স্টার্ক সেই কাজটা করে চলেছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোপরি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারেও স্টার্ক উঠে এসেছেন ষষ্ঠ স্থানে। মাত্র ১৬ ম্যাচ খেলে ৪৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন এ বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। পঞ্চম স্থানে থাকা চামিন্দা ভাস ৪৯ উইকেট পেয়েছেন ৩১ ম্যাচে অর্থাৎ স্টার্কের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ম্যাচ খেলতে হয়েছে লঙ্কান পেসারকে। চতুর্থ স্থানে থাকা লাসিথ মালিঙ্গা ২৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৫২ উইকেট। ৩৮ ম্যাচে ৫৫ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম। ৪০ ম্যাচে ৬৮ উইকেট মুরলিধরনের। আর ৩৯ ম্যাচে ৭১ উইকেট নিয়ে শীর্ষে গ্লেন ম্যাকগ্রা। বিশ্বকাপের দুই আসর খেলে অবশ্য কোন বোলার ৫০ উইকেট স্পর্শ করতে পারেননি। এই অনন্য রেকর্ডটিও ছুঁয়ে ফেলার অপেক্ষায় স্টার্ক। গত বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে নিয়েছিলেন ২২ উইকেট, এবার ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ২৪ উইকেট। টানা দুই বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ৪৬টি। সেমির আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরও একটি ম্যাচ আছে। সুতরাং মিচেল স্টার্ক আরও কত রেকর্ড তছনছ করে দেন সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×