ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২০০৭ বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি ফিরবে ২০১৯ বিশ্বকাপে?

কাল বার্মিংহামে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১ জুলাই ২০১৯

কাল বার্মিংহামে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই

মিথুন আশরাফ ॥ ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও ভারতের নিজেদের প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। প্রথম ম্যাচেই ধরাশায়ী হয় ভারত। তাতে এমনই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল দলটি বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। ভারতকে হারানোর পর বারমুডাকেও হারিয়ে গ্রুপপর্ব অতিক্রম করে বাংলাদেশ। ‘সুপার-৮’-এ খেলে। যখনই ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ হয়েছে তখনই বাংলাদেশের সামনে ত্রিনিদাদ এ্যান্ড টোবাগোর পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভাল স্টেডিয়ামটিতে ৫ উইকেটের জয়টি প্রেরণা হয়ে ধরা দিয়েছে। আর তাই সবার মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, বার্মিংহামের এজবাস্টনে যে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার লড়াই রয়েছে, সেই ম্যাচে ২০০৭ বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি ফিরবে ২০১৯ বিশ্বকাপে? সেই বিশ্বকাপের কথা যখনই মনে পড়েছে অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় তখনই কষ্ট পেয়েছেন। ফেবারিট হয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিলে কষ্ট পাওয়ারই কথা। আবার ভারতীয় সমর্থকরা ক্রিকেটারদের বাড়িতে হামলাও চালিয়েছিলেন! কি যে হতাশায় কাটাতে হয়েছে ভারত ক্রিকেটারদের। দ্রাবিড় বলেছিলেনও, ‘২০০৭ সালে বাংলাদেশের কাছে হারের অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছিল আমাদের।’ তা দেয়ারই কথা। পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই যে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে ভারতের বিদায়ে তোলপাড় লেগে গিয়েছিল। শচীন টেন্ডুলকরতো তার, ‘আঃ বিলিয়ন ড্রিমসে’ এ নিয়ে কষ্টের স্মৃতিচারণও করেছেন। সব দোষ বিতর্কিত কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের ঘাড়ে দিয়েছেন। তিনি যে বিশ্বকাপের আগে যেখানে অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সেখানে ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা বেজায় চটেছিলেন। বিশ্বকাপে বিদায়ের পরতো কোচ হিসেবে চ্যাপেল আর অধিনায়ক হিসেবে দ্রাবিড়ের বিদায় ঘণ্টাও বেজেছিল। টেন্ডুলকর এতটাই হতাশ হয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডস বুঝিয়েছেন টেন্ডুলকরকে। আর তাতে করে সিদ্ধান্ত বদলেছেন টেন্ডুলকর। বাংলাদেশের কাছে হেরে কী বাজে পরিস্থিতি হয়েছিল ভারত এবং ক্রিকেটারদের! তাতো হওয়ারই কথা। দলে ছিলেন না কে? সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দ্রর শেবাগ, টেন্ডুলকর, দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, স্পিনার হরভজন সিং, পেসার অজিত আগারকার, জহির খান; সেই সময়ের সেরা সব ক্রিকেটার ছিলেন। অথচ এই পুরো দলকেই টালমাটাল করে দেন বল হাতে ম্যাচসেরা হওয়া পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪/৩৮), স্পিনার মোহাম্মদ রফিক (৩/৩৫), আব্দুর রাজ্জাক (৩/৩৮) আর ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহীম (৫৬*), সাকিব আল হাসান (৫৩) ও তামিম ইকবাল (৫১)। ভারতকে ১৯১ রানে অলআউট করে দিয়ে বাংলাদেশ (১৯২/৫; ৪৮.৩ ওভার) ম্যাচ জিতে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র এ জয়ের বিপক্ষে ম্যাচটির এক বছর আগে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া মুশফিক ও সাকিব কি সাহস দেখান। তামিমতো মাত্র এক মাস আগে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলাটা শুরু করেন। তাতেই জহির, আগারকারদের বলগুলোকে এমন শাসন করেন, তাতে পুরো দলই উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। এরপর মুশফিক ও সাকিব মিলে সাহসী ইনিংস খেলেন। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। সেই সময় এক যুগ আগের। এখন বাংলাদেশ দলতো ভয়ঙ্কর। ওয়ানডেতে যে কোন দলকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। যে মুশফিক, সাকিব, তামিমরা এত সাহস দেখান তখনই, এক যুগ হয়ে যাওয়ার পর কী করবেন? তারা এতটাই অভিজ্ঞ এখন প্রতিপক্ষের আতঙ্ক এ তিন ব্যাটসম্যান। সাকিবতো আবার এবার বিশ্বকাপে ব্যাট-বল হাতে মাতাচ্ছেন। বিশ্বকাপে সেরা হওয়ার মতো খেলছেন। এ তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে এবার ব্যাট হাতে আবার সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আছেন। মাহমুদুল্লাহ যদিও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে পারবেন কিনা শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। তিনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের সময় কাফ মাসলে চোট পান। যদিও এখন সুস্থ। ভারত ম্যাচের আগে পাঁচদিনের ছুটিতে অনেকটাই ফিটও হয়ে উঠেছেন। ব্যথাও কম। কিন্তু রবিবার ও সোমবার দুইদিন দলের অনুশীলনের পরই মাহমুদুল্লাহর খেলা নিয়ে নিশ্চয়তা হয়তো মিলবে। ম্যাচ খেলার মতো শতভাগ ফিট কিনা তা ম্যাচের আগেই বোঝা যাবে। তবে সব ব্যাটসম্যানই দলের জয়ে অবদান রাখছেন। ফর্মেও আছেন। বল হাতে এবার আছেন মুস্তাফিজুর রহমান। যিনি ২০১৫ সালে ভারতকে প্রথমবারের মতো সিরিজে হারানোর স্মৃতি তাজা করে দিচ্ছেন। এক মুস্তাফিজের কাছেইতো সেবার হেরেছিল ভারত। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামেন মুস্তাফিজ। প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েও ম্যাচসেরা। দুটি ম্যাচেই জিতে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতেও যায় বাংলাদেশ। কি অসাধারণ নৈপুণ্য। এবার সেই নৈপুণ্য বার্মিহামের এজবাস্টনে ২ জুলাই মিলে গেলেই হলো। মুস্তাফিজের সঙ্গে এবার আছেন মাশরাফিও। যিনি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হলেই কেমন যেন গর্জে ওঠেন। নৈপুণ্য দেখান। আর আছেন সাইফউদ্দিন। যিনি শেষদিকে ঝলক দেখাতে সিদ্ধহস্ত। ভারত ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভাল খেলেন। কিন্তু সাকিব, মিরাজ, মোসাদ্দেককে কী একই তালে খেলতে পারবেন? সাকিবতো এমন নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন, বল হাতেও ফিরেছেন ফর্মে। ভারত স্বাভাবিকভাবেই সাকিবকে নিয়ে বিশেষ ভাবনায় থাকবে। সেই ভাবনায় কোন ফল মিলেনি আফগানিস্তানের। উড়ে গেল। যদিও আফগানদের মতো দুর্বল দল ভারত নয়। অনেক শক্তিশালী দল। দলটি বিশ্বকাপ জিততেই খেলছে। কিন্তু একটি দিন খারাপ আসে। সেই দিনটি যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে এসে পড়ে। তাহলেইতো হয়ে গেল। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমে জিতে বাংলাদেশ। এরপর ২০১১ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হারে। কিন্তু ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই বাংলাদেশ অন্যরকম দলে পরিণত হয়ে যায়। ভারতকেও সিরিজে হারায়। যদিও এরপর আর ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি ২০১৭ সালে বার্মিংহ্যামে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানেই হারে। বাংলাদেশের সঙ্গে যখনই খেলা হয় তখন সতর্ক থাকে ভারত। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই এখন মহাউত্তেজনা। মহাউত্তাপ। মাঠের লড়াইয়ের আগে চলে কথার লড়াই! সেই লড়াই গিয়ে থামে ম্যাচ শেষে। ম্যাচ এবার মঙ্গলবার। ২ জুলাই যে বাংলাদেশের দিন হবে না তা কে বলতে পারে। দিনটি বাংলাদেশের হয়েও যেতে পারে। তাহলেইতো ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি ফিরে আসতে পারে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাওতো সেই অপেক্ষাতেই আছেন।
×