ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ভুট্টার বাজারে মূল্য ধস

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১ জুলাই ২০১৯

 সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ভুট্টার বাজারে মূল্য ধস

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ভুট্টা আবাদে প্রতি বছরই দেশের শীর্ষে থাকে রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলা। তিস্তা ও বিভিন্ন নদীর চর সহ এ সকল জেলার মাটি ও আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ভুট্টা আবাদ বেশি হয়ে থাকে। এবারও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। মোট ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিকটন বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, এবার রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে ৮৩ হাজার ১৯২ মেট্রিকটন জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ২শ’ ৫৩ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষক। বিগত বছরগুলোতে ভুট্টার দাম ভাল পেলেও হঠাৎ করে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভুট্টার বাজার মূল্যে ধস নামিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুট্টা চাষ করে ভাল ফলন পেলেও ধানের মতো দেখছে না ভুট্টাতেও লাভের মুখ। কৃষকেরা বলছেন, ভুট্টা চাষ, কেনাবেচা, বাছাই, প্রক্রিয়াজাত, গুদামজাতকরণসহ নানা কাজে জড়িত কয়েক লাখ পরিবার। কিন্তু একটি চক্র কারসাজি করে নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। আর যখন দাম বাড়ে, তখন কৃষকের হাতে আর ভুট্টা থাকে না। ফলে লাভবান হন কতিপয় ব্যবসায়ী। বাজার দখলে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। তারা নানা অজুহাতে কম দামে ভুট্টা কিনছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় তাদের উৎপাদিত ফসলের লোকসানের পর ভুট্টা চাষে কিছু লাভের স্বপ্ন ছিল। সেই ভুট্টাতেও তারা এ বছর সঠিক দাম পাচ্ছেন না। গতবছর এ সময়ে ৭ শত টাকা থেকে ৭ শত ৫০ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি হলেও এ বছর চলতি মৌসুমের শুরুতে ৭০০ টাকা দরে ভুট্টা বিক্রি হলেও এখন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কৃষকেরা আরও জানান, প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। জমি বর্গা বা ইজারা নিয়ে চাষ করলে খরচ আরও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি। প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫ থেকে ২৭ মণ ভুট্টা পাওয়া যায়। নীলফামারী ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের টেপাখড়িবাড়ি গ্রামের ভুট্টাচাষী সহিদুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগেও ভুট্টার দাম কিছুটা থাকলেও এখন তা আর নেই। বর্তমান বাজারে মিটার পাশ ভুট্টা ৪১৫ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে ভুট্টা বিক্রি করলে কৃষকদের লাভ হবে না। বরং লোকসান গুণতে হবে অনেক টাকা। একই গ্রামের ভুট্টাচাষী সামসুল আলী জানান, গতবছর ৭ শত টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি করলেও এ বছর প্রথমদিকে ৫ শত ৬০ টাকা দরে ভুট্টা বিক্রি করেছিলাম। এখন আরও কমে ৪৫০ টাকা হয়েছে। আমরা ধান আবাদ করেও লোকসান গুণছি। এবার ভুট্টা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভুট্টাচাষীদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি ভুট্টার বাজার। তারা সবাই এক হয়ে বাজার দর ঠিক করেন। এরপর ওই দরে ভুট্টা কিনে গুদামজাত করা হয়। কৃষক বাধ্য হয়েই কম দামে ভুট্টা বিক্রি করেন। কৃষকের হাত ছাড়া হলেই তখন ভুট্টার দাম মণপ্রতি ৯০০ থেকে হাজার টাকা বেড়ে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, এবার কোনও রোগবালাই ছিল না, আবহাওয়া ছিল পুরোপুরি অনুকূলে। সে কারণে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ মণ আর হেক্টরপ্রতি ৯ দশমিক ৯৯ মেট্রিকটন। নির্ভরযোগ্য সূত্র ভুট্টার দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানায়, কৃষকের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। উৎপাদিত ফসল কৃষক ঘরে রাখতেও পারে না। কৃষকের সংসারে টাকার প্রয়োজনে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। এ জন্যই ভুট্টার দাম কমে গেছে।
×