ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জুলাইয়েই ই-পাসপোর্ট নাগরিকদের হাতে পৌঁছাচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১ জুলাই ২০১৯

 জুলাইয়েই ই-পাসপোর্ট নাগরিকদের হাতে পৌঁছাচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ বহু প্রতীক্ষিত ই-পাসপোর্ট এ মাসেই নাগরিকদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। ই-পাসপোর্ট দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে পাসপোর্ট অধিদফতর। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। আর এই উদ্বোধনের কাজটি করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ই-পাসপোর্টের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশ যুক্ত হবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে। বিশ্বের ১১৯ দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশ হবে ১২০ নম্বর দেশ। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের (আইকাউ) নিদের্শনা মেনেই ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের কারণে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এ কারণে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে অধিদফতর জানিয়েছে। এ মাসের যে কোন দিন ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। যাদের এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে তারাও ইচ্ছে করলে ই-পাসপোর্ট নিতে আবেদন করতে পারবেন। এ তথ্য পাসপোর্ট অফিসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ই-পাসপোর্ট বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তিনি সময় দিলেই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করা হবে। ই-পাসপোর্ট হবে ১০ বছর মেয়াদী। প্রকল্পটি গ্রহণের পর থেকেই দ্রুতগতিতে কাজ করা হয়েছে। এ কারণেই আমরা সময় মতো ই-পাসপোর্ট গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিতে পারব। আমরা ই-পাসপোর্টের সব কাজ শেষ করে রেখেছি। মন্ত্রী বলেন, নিরাপদ ও ১০ বছর মেয়াদী এই পাসপোর্ট গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে ই-পাসপোর্ট রয়েছে। জুলাইয়ে ই-পাসপোর্ট চালু হলে আমরা ওসব দেশের কাতারে চলে যাব। তাছাড়া বিশ্বজুড়েই ই-পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। এই পাসপোর্ট সহজে কেউ জাল করতে পারবে না। পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ। এই পাসপোর্ট ইচ্ছে করলে কেউ জাল করতে পারবে না। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি প্রক্রিয়ায় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পে কিছুটা সময় বেশি লাগলেও জুলাইয়ের মধ্যে যে কোন মূল্যে গ্রাহকদের হাতে পাসপোর্ট পৌঁছে দেয়া হবে। ই-পাসপোর্ট ১ জুলাই থেকে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তিনি ফিরে এলেই কার্যক্রম চালু করা হবে। ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলেই উদ্বোধনের সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা হবে। জুলাই মাসেই দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট হাতে পাবেন। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, উদ্বোধনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্ট তৈরি ফ্যাক্টরি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথমদিন থেকেই সবাই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ই-পাসপোর্টের ফি কত হবে তার একটি প্রস্তাব গেছে। ফি নির্ধারণ কাজ শেষ হওয়ার পথে। উদ্বোধনের পর ফুল সেট-আপের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট নিখুঁতভাবে প্রিন্ট করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্টের যুগে নাগরিকরা চাইলে এমআরপিও করতে পারবেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে। তবে আধুনিক পাসপোর্ট নিতেই নাগরিকরা বেশি আগ্রহী হবেন। কারণ এটি নিরাপদ ও ১০ বছর মেয়াদী। ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্ট গেট স্থাপন করা হয়েছে। এই গেট দিয়ে দ্রুত ইমিগ্রেশন করা হবে। সব ধরনের যন্ত্রপাতি ই-গেটে বসানো হয়েছে। জার্মানির কোম্পানি যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। পাসপোর্ট অধিদফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলো স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় আনতে ইমিগ্রেশন চেক পোস্টগুলোতে ৫০টি ই-গেট স্থাপন করা হবে। ই-গেটে দ্রুততম সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্ট রিডার ও ক্যামেরার সাহায্যে চিপযুক্ত পাসপোর্ট যাচাই, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে। ই-পাসপোর্টের তথ্য ‘ভেরিফিকেশনে’ ব্যক্তির সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে ই-পাসপোর্ট গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এ ব্যবস্থায় ভ্রমণকারীর পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা আরও বেশি কার্যকর হবে। সীমান্ত সুরক্ষাও হবে। ই-পাসপোর্ট ই-গেটের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাহকের পরিচয় নিশ্চিত করবে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট নিয়মে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। যদি কোন তথ্যের বিভ্রাট ঘটে তাহলে ই-গেটে লালবাতি জ্বলে উঠবে। এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই ই-গেটে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন। সঠিক পদ্ধতিতে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি ই-গেট পার হতে পারবেন। ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনও এর ফি চূড়ান্ত করা হয়নি। এ জন্য অধিদফতরের সবাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জাননো হয়েছে। জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। পরে বিষয়টি সমাধানের পর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী পাসপোর্টের ইলেক্ট্রনিক চিপে ১০ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি মাত্র দুটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে। মাত্র দুই আঙুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হতে পারে এমন প্রশ্ন উঠে। বিষয়টি নিয়ে অধিদফতর জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি সুরাহা হয়। এ কারণে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। তবে প্রকল্প সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করা হচ্ছে। পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্টের জন্য ন্যূনতম ছয় হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ছয় হাজার টাকা দিলে একজন নাগরিক ২১ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাবেন। এছাড়াও সাত দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার এবং একদিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটাই যে চূড়ান্ত ফি তা নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় নানা দিক বিবেচনা করে ফি নির্ধারণ করে দেবে। অত্যাধুনিক পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণে থাকবে। ই-পাসপোর্টে মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটাবেজে যেসব তথ্য আছে। ওই সব তথ্য ই-পাসপোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি ও পরিচয় গোপন করার কাজ কঠিন হবে বলে দাবি করছে পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা। বিশ্বের ১১৯টি দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশ অল্প দিনের মধ্যে ওই সব দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। উল্লেখ্য ২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির কোম্পানি ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের একটি চুক্তি করেন। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাসপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। প্রথম ধাপে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে (সিআইপি) ই-পাসপোর্ট দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। সর্বসাধারণকে জানুয়ারিতে পাসপোর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
×