ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাড়ি ছিনতাই করতেই উত্তরায় উবারচালক আরমানকে খুন

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১ জুলাই ২০১৯

  গাড়ি ছিনতাই করতেই উত্তরায় উবারচালক আরমানকে খুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন ধরেই সুযোগ খুঁজছিল একটি এলিয়ন গাড়ি ছিনতাইয়ের। এই মডেলের একটি গাড়ি বিক্রির বায়না বাবদ অগ্রিম টাকাও নেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ আসে গত ১৪ জুন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রামপুরা থেকে একটি উবার গাড়ি ডেকে উত্তরা গিয়ে কয়েক মিনিটেই খুন করা হয় চালক আরমানকে। কিন্তু মাত্র দু’সপ্তাহের মাথায় ধরা পড়ে ঘাতকরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস টিম এই ছিনতাইকারীচক্রকে আটক করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকারও করে যে মাত্র ৮ লাখ টাকার চুক্তি রক্ষা করতেই উবারে রেজিস্ট্রিকৃত এলিয়ন মডেলের এই গাড়ির চালককে হত্যা করা হয়। এ জন্য উবারের রাইড রিকোয়েস্টে এক/দুবার নয়, পাঁচবার কল করে এলিয়ন মডেলের গাড়ি পেতে। ঘটনার মূল হোতা সিজান নামে এক দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। গ্রেফতার হওয়া তার অপর দুই সহযোগী ছিনতাইকারী হলো শরিফ (১৯) ও সজীব (২০)। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শনিবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি সুইচ গিয়ার চাকু ঘটনাস্থলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে রবিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, টার্গেট ছিল একটি টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি ছিনতাই করার। টার্গেট হিসেবে ওরা বেছে নিয়েছিল রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের গাড়ি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই গাড়ি পেতে উবারের রাইড রিকোয়েস্টে এক/দুবার নয়, পাঁচবারের চেষ্টায় পেয়ে যায় কাক্সিক্ষত এলিয়ন মডেলের গাড়ি। ঘটনা সম্পর্কে ডিবি প্রধান জানান, গত ১৩ জুন রাত বারোটা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬নং রোডের ৫২ নং বাড়ির সামনে গাড়ির মধ্যে চালক আরমানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা-ের পর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উত্তরা জোনাল টিম ছায়া তদন্তে নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, উবার চালক আরমান হত্যার মূল চক্রান্তকারী সিজান ও তার সঙ্গে ছিল শরিফ ও সজীব। মামলাটি বর্তমানে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগে তদন্তাধীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, সিজান আগেও গাড়ি ছিনতাই করেছে। জনৈক ব্যক্তিকে ৮ লাখ টাকায় এলিয়ন মডেলের গাড়ি সরবরাহের চুক্তি করে ছিনতাইকারী চক্র। এরপর এলিয়ন গাড়ি ছিনতাইর উদ্দেশে সিজান রামপুরায় তার বাসার ছাদে শরিফকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজায়। এক পর্যায়ে তাদের চক্রান্তে সজীবকে যুক্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ জুন নিউমার্কেট থেকে দুটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনে তারা। রাত আনুমানিক এগারোটার দিকে সিজান উবারের মাধ্যমে কল করলে গাড়িটি এলিয়ন না হওয়ায় কল বাতিল করে দেয়। এভাবে পঞ্চম চেষ্টায় পেয়ে যায় উবার চালক আরমানের এলিয়ন মডেলের গাড়িটি। গাড়িতে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬নং রোডে নিরিবিলি স্থানে গাড়িটি থামাতে বলে। গাড়ির ভাড়া পরিশোধ না করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে রাত বারোটা ৩৭ মিনিটের দিকে চারদিকে নিরাপদ মনে করে সিজানের ইশারায় চালক আরমানের পেছন ছিটে বসা শরিফ আরমানের মাথার চুল পেছনের দিকে টেনে ধরে চাকু দিয়ে গলা কেটে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পরবর্তীতে আশপাশের পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় আরমানের মরদেহসহ গাড়িটি রেখেই ওরা পালিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এলিয়ন মডেলের প্রাইভেটকার ছিনতাইয়ের উদ্দেশেই তারা উবার চালক আরমানকে গলা কেটে হত্যা করে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এর আগেও এ ধরনের কোন অপরাধে ওরা জড়িত ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখাৃ হচ্ছে।
×