ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুব শীঘ্র বিসিএস ফল প্রকাশ ও মৌখিক পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১ জুলাই ২০১৯

  খুব শীঘ্র বিসিএস ফল  প্রকাশ ও মৌখিক  পরীক্ষা শুরু

বিভাষ বাড়ৈ ॥ পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষায় থাকা বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর আসছে। অন্তত তিনটি বিসিএসের ফল প্রকাশ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শীঘ্রই। কবে কোন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে তাও অনেকটাই চূড়ান্ত করে ফেলেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। এদিকে স্বচ্ছতার খাতা মূল্যায়নের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় ও প্রয়োজন হলে তৃতীয় পরীক্ষকের প্রয়োগ হওয়া ৩৮ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে যাচ্ছে। বিসিএসের খাতা মূল্যায়নের ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম ঘটনা। সরকারী কর্মকমিশনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নির্দেশনা অনুযায়ী খাতা মূল্যায়নে নতুন এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সময় পরীক্ষকের ভুলে বা অসাবধানতায় শিক্ষার্থীরা তাদের খাতার সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হন। তাই এবার তৃতীয় পরীক্ষক রাখা হচ্ছে। ৩৮তম লিখিত থেকে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। মূলত এ কারণেই ৩৮তম ফল লিখিত ফল হতে কিছুটা দেরি হয়েছে। পিএসসিতে সব সময় একজন পরীক্ষক লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতেন। কিন্তু ৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করছেন। এই দুই পরীক্ষকের প্রদত্ত নম্বরের ব্যবধান যদি ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠিয়েছে পিএসসি। ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হওয়ার একটি সুন্দর পথ তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রবিবার কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছু নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে ইতোমধ্যেই টাইমফ্রেম নির্ধারণ করেছে কমিশন। এছাড়া ৩৭ বিসিএসে যারা ক্যাডার পদ পাননি তাদের মধ্য থেকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে আরও নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিশনের একজন সদস্য জনকণ্ঠকে বলেছেন, চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে পিএসসি কাজ করছে স্বচ্ছতার সঙ্গে ফল প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে। চাকরি প্রার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে একের পর এক পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন কমিশনের সকলে। ক্যাডার পদ না পেলেও যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক নন-ক্যাডার পদে চাকরি পান সেজন্য উদ্যোগী হয়েছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে ৩৭ বিসিএস থেকে এক দফায় নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশের পর এবার আরেক দফায় প্রথম শ্রেণীর নিয়োগের সুপারিশ করা হচ্ছে। আজ কালের মধ্যেই আরও অন্তত ১০০ জন প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করা হবে। ৩৮ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিয়ে চাকরি প্রার্থীরা অপেক্ষা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন সময় ফল প্রকাশে বিলম্বেরও অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। তবে এবার সেই ফল আসন্ন ঈদের আগেই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কেবল তাই নয়, ঈদের আগেই লিখিত পরীক্ষার প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠিত হয় লিখিত পরীক্ষা। ১৬ হাজার ২৮৬ জন ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। যারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার ২৪ জন ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০, পুলিশ ক্যাডারের ১০০ পদসহ সাধারণ ক্যাডারে মোট ৫২০, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯ এবং শিক্ষা ক্যাডারে ৯৫৫ পদ থাকছে। এ পরীক্ষাতেই প্রথমবারের মতো প্রয়োগ হলো দ্বিতীয় ও প্রয়োজন হলে তৃতীয় পরীক্ষক। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান বলছিলেন, পিএসসি কাজ করছে স্বচ্ছতার সঙ্গে ফল প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে। চাকরি প্রার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে একের পর এক পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন কমিশনের সকলে। যার সুফলও পাচ্ছেন চাকরি প্রার্থীরা। এবার ৩৮ বিসিএসে যেভাবে খাতা মূল্যায়ন হচ্ছে তাকে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ অভিহিত করে তিনি বলেন, এটি একটি পরীক্ষার্থী বান্ধব উদ্যোগ। চাকরি প্রার্থীরা এর ফলে তার খাতার ১০০ ভাগ সঠিক মূল্যায়নও পাবেন। যা বিসিএসে প্রথম বারের মতো প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে সামান্য একটু দেরি হলেও সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন চাকরি প্রার্থীরা। তিনি আরও বলেন, লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করেছেন। তাদের নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হয়। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হবে। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলও প্রকাশ করা হবে ঈদের আগেই। গত ৩ মে অনুষ্ঠিত হয় এ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। যেখানে নিবন্ধিত পরীক্ষার্থী ছিলেন বিবিএসের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক চার লাখ ১০ হাজার ৯৬৩ জন। কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন তিন লাখ ২৭ হাজার ৫২৫ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ৮৩ হাজার ৪৩৮ জন। উপস্থিতির হার শতকরা ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। এই বিসিএসে মোট এক হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ক্যাডার অনুসারে প্রশাসনে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, করে ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জন নিয়োগ দেয়ার কথা। তবে পিএসসি সূত্রগুলো বলছে, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
×