ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এদের একজন কনস্টেবল পদে চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১ জুলাই ২০১৯

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরগুনা শহরে ব্যস্ততম সড়কে প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে এই হত্যা ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা জানান, বরগুনায় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পরিকল্পনাকারী গ্রুপের সদস্য মোঃ সাগরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাগর পুলিশের কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। রবিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল বরগুনা পুলিশ লাইনে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কোন আবেদনকারী যদি ফৌজদারি মামলার আসামি হয় তাহলে তার নিয়োগ এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। তার পুলিশে চাকরির কোন সুযোগ থাকে না। স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে খুনের আগে ফেসবুকে ‘বন্ড ০০৭’ নামে একটি গ্রুপের হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়। ওই গ্রুপের সদস্য ছিল সাগর। হত্যার আগে ওই গ্রুপের আসামি রিফাত ফরাজী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রুপে রিফাত ফরাজী রামদা নিয়ে সকাল নয়টায় বরগুনা কলেজের সামনে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন। আর সেই ম্যাসেজটি গ্রুপ রিপোস্ট করা হয় সাগর নামের আইডি থেকে। সেই পোস্টের সঙ্গে আবার ‘ভিক্টরি’ ইমো দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মোঃ সাগরের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার রোল নম্বর ১০৮। নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নামের মেধা তালিকায় ৪০ নম্বর পেয়ে ১৮তম স্থান অধিকার করেছেন সাগর। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল লতিফ মাস্টারের ছেলে। ০০৭ গ্রুপটি হলিউড মুভি জেমস বন্ডের কোড নম্বর ‘জিরো জিরো সেভেন’ এর সঙ্গে মিল রেখে করা হয়েছে। আর এই গ্রুপের প্রধান হলেন রিফাত হত্যার মূল আসামি নয়ন বন্ড। বলা হচ্ছে, ওই ফেসবুক গ্রুপেই রিফাত হত্যার বিষয়ে সদস্যদের মাঝে কথোপকথন হয়। আমাদের বরগুনা নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, রবিবার বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন জানান, আসামিরা আমাদের নজরদারিতে আছে খুব শীঘ্রই ধরা হবে। শুধু বরগুনার পুলিশ নয় সারা বাংলাদেশের পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। খুবই শীঘ্রই ভাল সংবাদ দিতে পারব। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আমরা এজাহারভুক্ত দুই জন ও সন্দেহজনক ৪জনকে গ্রেফতার করেছি। এরা হলো এজাহারভুক্ত চন্দন ও মোঃ হাসান। এছাড়াও জড়িত থাকার সন্দেহে আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হচ্ছে, মোঃ নাজমুল হাসান, তানভীর, মোঃ সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন। এখন পর্যন্ত আসামি না ধরা পড়ায় আপনাদের তৎপরতার ঘাটতি বোঝা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আসামি ধরা এটাতো ঘণ্টাব্যাপী বা সেকেন্ডব্যাপী হয় না। টেকনিক্যাল অনেক বিষয় আছে? আসামি কোথায় আছে না আছে? কখন আমি নক করলে আসামিকে আমি সুবিধাজনকভাবে ধরতে পারব নাকি আসামি পালিয়ে যাবে এরকম অনেক বিষয় থাকে। তার মানে এটা না যে এতো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আসামি ধরলাম না বা আসামি আমাদের নজরদারির বাইরে চলে গেছে বা আমাদের গাফিলতি আছে। বিষয়টি তা নয় আমরা রাতদিন বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমার আস্থা আছে, আমার টিমের প্রতি আস্থা আছে, আমার কাজের প্রতি আস্থা আছে তাই আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি আমরা শীঘ্রই আসামি ধরতে পারব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কত জনকে আটক করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না, কারণ অনেকেই গোপনে আমাদের কাছে এসে ইনফরমেশন দিচ্ছে। আবার অনেককেই আমার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনছি এই বিষয়টি আপাতত গোপন থাকুক। এসময় তিনি পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রিফাত হত্যায় পরিকল্পনাকারী গ্রুপের সদস্য সাগর বিষয়ে বলেন, সে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু আমরা যখন জানতে পারি এই গ্রুপে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তখনই তাকে গ্রেফতার করি। রিফাত হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ॥ রিফাত হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনায় তিন দফায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। রবিবার সকাল ১১টায় বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে বরগুনা জেলা বিএনপি। এরপর বেলা ১২টায় উন্নয়ন সংগঠন এডাবের সৌজন্যে বরগুনার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, সবশেষ বিকেল ৫টায় একই স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সহসভাপতি জেডএম সালেহ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ আঃ হালিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম মাঈনুদ্দিন, তারিকুজ্জামান টিটু, দফতর সম্পাদক হুমায়ুন কবির, আবদুল হক, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ হোসেন মোল্লা, এ্যাডভোকেট স্বপন, মাইনুল হাসান লিটন প্রমুখ। এডাব আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল, সিবিডিপির পরিচালক জাকির হোসেন মিরাজ, শহর সমাজসেবা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মোঃ সাহাব উদ্দিন সাবু, সাকোর নির্বাহী পরিচালক কাজী ফকরুল, পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ, সমাজসেবক সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা প্রমুখ। সবশেষ বিকেল পাঁচটায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন একটি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে। এ সময় এইচ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মনির, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ ও সাবেক সভাপিত ইদ্রিসুর রহমান প্রমুখ। প্রত্যেকটি মানববন্ধন থেকেই এই নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সেই সঙ্গে আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বক্তরা বলেন, ঘটনার ৫দিন অতিবাহিত হলেও এখনও পুলিশ কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারেনি। এটা সত্যি বরগুনাবাসীর জন্য হতাশার। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের প্রতি দোষীদের শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।
×