ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ নয় শিক্ষাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১ জুলাই ২০১৯

নিরাপদ নয় শিক্ষাঙ্গন

মা-বাবার অপত্য স্নেহচ্ছায়ার পরেই শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বাধিক নিরাপদ আশ্রয়স্থল হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন, তা সে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, যাই হোক না কেন! দুঃখজনক হলো, সেই শিক্ষাঙ্গনই যেন দিন দিন অনিরাপদ ও অপবিত্র হয়ে উঠছে শিক্ষক নামধারী একশ্রেণীর লম্পট ও চরিত্রহীন শিক্ষক কর্তৃক। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়ায় অক্সফোর্ড হাই স্কুলের গণিতের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্তত ২০ শিশু শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেল করে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাদ যায়নি শিক্ষার্থীর মাও। তাকে সহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রধান শিক্ষককেও। প্রমাণ হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে ধারণকৃত ছবিসহ সেলফোন ও ল্যাপটপ। এলাকাবাসী ক্ষোভ-বিক্ষোভে ধৃতদের বিচার এবং স্কুলটি বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। মামলা দায়েরসহ রিমান্ডে নেয়ার খবরও আছে। অন্যদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক ও আপত্তিকর সম্পর্ক স্থাপনসহ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ধরনের অভিযোগ যে কেবল প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই উঠেছে, তা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নামী-দামী অনেক উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের এক শ্রেণীর শিক্ষকেরও ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনসহ ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ আছে। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নুসরাতকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনা তো রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সারাদেশে। অতঃপর সঙ্গত কারণেই সব অভিভাবকের উদ্বিগ্ন প্রশ্ন, শিক্ষাঙ্গন যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে যাবে কোথায় শিক্ষার্থীরা। এমনকি গণপরিবহনে গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে একাধিক। গণপরিবহন রীতিমতো বিপজ্জনক ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য। শুধু পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের শতকরা ২২ দশমিক ৪ ভাগ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। শিক্ষাঙ্গন এক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রশ্ন হলো, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? ধর্ষণের সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বাড়ছে দিন দিন। প্রতি মাসে ৫৫ শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ২৬৯টি বেসরকারী সংস্থার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই পরিসংখ্যান। চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসে ১৭৬ জন শিশু শিকার হয়েছে ধর্ষণের। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৫ শিশুকে। কেন এসব হচ্ছে, তা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। এর আপাত কারণ হতে পারে দুর্বল চার্জশীট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি। কখনও যদি ধর্ষকের শাস্তি হয়ও, তবে তা নামমাত্র। অথচ অসহায় ধর্ষিত মেয়েটিকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় কলঙ্কের বোঝা। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে যথেষ্ট ভাল আইন রয়েছে। ধর্ষকদের ফাঁসি অথবা ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবিও উঠেছে। দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আছে বিস্তর। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতাও সীমিত। সরকার ও আদালত নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা। সর্বোপরি যে কোন মূল্যে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোকে নিরাপদ ও নিষ্কলুষ করে তুলতে হবে শিক্ষাথীদের জন্য।
×