ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের কাছে হেরেই এমন দুর্দশা!

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৩০ জুন ২০১৯

  বাংলাদেশের কাছে হেরেই এমন  দুর্দশা!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ‘গোড়াতেই গলদ’ থাকলে বাকি সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবু এবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আয়োজক ও হট ফেবারিট ইংল্যান্ডের কাছে তা মেনে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কারণ ইংলিশরা সাম্প্রতিক সময় ফর্মের তুঙ্গে এবং আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। তবে পরের ম্যাচেই আবার বাংলাদেশের কাছে হেরে সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে গেছে প্রোটিয়াদের। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে ‘নাম’ থাকলেও তার নিদর্শন দক্ষিণ আফ্রিকা কোন বড় মাপের আইসিসি টুর্নামেন্টেই দেখাতে পারেনি অতীতে। সে কারণেই এবার ফেবারিটদের তালিকায় তাদের কেউ বিবেচনা করেনি। তাই বলে টানা হেরে দলটি আগেভাগে সেমিফাইনালের রেস থেকে ছিটকে যাবে এটিও ঘুণাক্ষরে ভাবেনি কেউ। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা এখন সেটাই হয়েছে। টানা পরাজয়ের পর অবশেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে কিছুটা হলেও সম্মান ফিরেছে প্রোটিয়াদের। এরপর অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস দাবি করলেন, বিশ্বকাপের গোড়াতেই যে দুটি হার হয়েছে দলের তাতেই এমন হতশ্রী পরিস্থিতি হয়েছে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে ১০৪ রানের বিশাল হার। দক্ষিণ আফ্রিকানরা এতে ভেঙ্গে পড়েনি। পরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস ছিল তাদের। কিন্তু সেটিও হয়নি। একপ্রকার ঘোষণা দিয়েই প্রোটিয়াদের পরাস্ত করেছে বাংলাদেশও। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অধিনায়কদের আড্ডা আয়োজনে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ‘আমাদের যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ, তাই আমরা ফাফ ডু প্লেসিসদের হারিয়েই ভালভাবে শুরু করতে চাই।’ কিন্তু কথাটি শুনে দৃঢ়তার সঙ্গেই প্রোটিয়া অধিনায়ক প্লেসিস বলেছিলেন, ‘সে সুযোগ তোমরা পাবে না!’ বাস্তবে প্লেসিস ভুল প্রমাণিত হয়েছেন আর মাশরাফি সঠিক। আর তাতেই হতোদ্যম হয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি হয় তারা। সেটি ছিল বিরাট কোহলিদের চলতি আসরে প্রথম ম্যাচ। টানা দুই হারে আহত প্রোটিয়াদের সহজেই হারিয়ে দেয় ফেবারিট ভারত। টানা তিন হারের পর মেরুদ-ই ভেঙ্গে যায় প্লেসিসদের। দুর্গতি পেছনে যেভাবে আঠার মতো লেগেছিল সেটি পিছু ছাড়েনি পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও। এবারও মনঃকষ্ট নিয়েই থাকতে হয়েছে। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় ম্যাচটি। টানা ৪ ম্যাচে জয়শূন্য আর একটি পয়েন্ট নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। অথচ তখন ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলো টানা সাফল্যে উড়ছিল। পঞ্চম ম্যাচে তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়টি কেউ আমলেই নেয়নি। সে কারণে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানও তাদের বিধ্বস্ত করেছে। তবে নিজেদের সামর্থ্যরে বিষয়ে স্বস্তি পেয়েছেন প্লেসিসরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ৯ উইকেটে জিতে। কিন্তু এর আগেই তো শেষ হয়ে গেছে সব আশা। প্রোটিয়াদের জয়ের দিকে আর কারও লক্ষ্যই নেই। কারণ, বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে পারফর্মেন্সে ব্যর্থতার সাগরে ডুবেছে প্রোটিয়ারা। তাই শেষ মুহূর্তে এসে জ্বলে ওঠায় হতাশা আরও বেড়েছে প্রোটিয়া ক্যাম্পে। অধিনায়ক প্লেসিস তাই শুরুর ব্যর্থতাকে তুলছেন কাঠগড়ায়। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহ কঠিন যাওয়াতেই প্রোটিয়াদের এই ব্যর্থতা। প্রথম ৭ দিনের সূচীটাও অন্য দলগুলোর চেয়ে কঠিন ছিল। ওই সময়ে দুই অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে খেলতে হয়েছে। ওই দুই ম্যাচের হারের মাঝে বাংলাদেশের বিপক্ষেও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হওয়ায় ক্রিকেটারদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে।’ শুরুর ধাক্কাটা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাই শুরুতে ভাল করতে না পারার আক্ষেপে পুড়ছেন প্লেসিস। শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রোটিয়া অধিনায়ক বলেন, ‘যে কোন টুর্নামেন্টে ভাল শুরু খুব দরকার, আমার কাছে এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। শুরু ভাল হলে এমনিতেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, তখন পরের দিকের ম্যাচগুলো অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি, প্রথম তিন ম্যাচে আমাদের পয়েন্টের ঘর ছিল শূন্য।’ গত দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ইংল্যান্ডের বিদায় নিতে হয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। ২০০৭ বিশ্বকাপে শক্তিশালী ভারতকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল। এবার সেই আক্ষেপ তাদের উপহার দিয়েছে বাংলাদেশই। সেখান থেকে একটি স্বস্তির জয়, তবে এখন আর কিছুই বদলাবে না। বাকি থাকা আরেকটি ম্যাচ এভাবে জিতে গেলে আফসোসটা আরও হয়তো বাড়বে, কিন্তু অন্তত একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মর্যাদা কিছুটা পুনরুদ্ধার করেই বিশ্বকাপ মঞ্চ ত্যাগ করতে পারবে তারা। কিন্তু প্রথম সপ্তাহের পারফর্মেন্সকেই এখন চরম ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন প্লেসিস, ‘বিশ্বকাপে এমনিতেই কাঁধে প্রত্যাশার চাপ বেশি থাকে। শুরুতে ওই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে বোঝাটা আরও ভারি হয়ে যায়। প্রথম সপ্তাহটা আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল।’
×