শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-ভারত ‘বড়’ ম্যাচ আজ। পাঁচ জয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত আজ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত। অন্যদিকে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে জয় চাই ইংল্যান্ডেরও। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে টানা দুই হারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ইয়ন মরগানদের। দু’দলই অন্যতম ফেবারিট হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল। বদলে যাওয়া ইংলিশরা ছিল আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। অন্যদিকে সুপার বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দুর্দান্ত খেলছিল ভারত। ভারত বিশ্বকাপেও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। ছয় ম্যাচের পাঁচ জয়, একটিতেও হারেনি তারা। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত এক। অন্যদিকে সাত ম্যাচে চার জয়ের বিপরীতে তিন হারে কোণঠাসা ইংলিশরা ৮ পয়েন্ট নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। শেষ ম্যাচটা তাদের আবার খেলতে হবে আরেক পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সুতরাং মরগান-বাহিনী যেমন আজ ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া, অন্যদিকে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সেমি নিশ্চিত করতে চায় কোহলি এ্যান্ড কোং। বার্মিংহ্যামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়। দু’দলের শততম ওয়ানডে এটি।
ভারতের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে। হেডিংলিতে দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ২২৭/৯-এ থামিয়ে দিয়ে ৪৮তম ওভারেই ভারত তুলে নেয় ৬ উইকেটের বড় জয়। সেঞ্চুরি হাঁকান রোহিত শর্মা (১২২)। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোহলিবাহিনী কেমন করে সেটি দেখতে মুখিয়ে ছিল সবাই। এবারের আসরে যেটিকে বলা হচ্ছিল প্রথম ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচ। কেনিংটন ওভালে সেদিন ৫ উইকেটে ৩৫২ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান শিখর ধাওয়ান (১১৭)। যদিও ইনজুরির কারণে এরপরই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন এই তারকা ওপেনার। জবাবে শেষ বলে অলআউট অস্ট্রেলিয়া থামে ৩১৬ রানে। বড় ম্যাচে ৩৬ রানের দারুণ জয়ে দাপট অব্যাহত রাখে কোহলির দল। তিনটি করে উইকেট নেন দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরা ও ভুবনেশ্বর কুমার। তবে বৃষ্টির কারণে ভারত-নিউজিল্যান্ড আরেক ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচটা পরিত্যক্ত হয়। আর বহুল আলোচিত ম্যাচে চিরশত্রু পাকিস্তানকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিজয় শঙ্কর, হারদিক পান্ডিয়া, যুবেন্দ্র চাহালরা।
ওল্ডট্র্যাফোর্ডে সেদিন রোহিতের (১৪০) টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সুবাদে ৫ উইকেটে ৩৩৬ রানের বড় স্কোর গড়ে ভারত। জবাবে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৪০ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০২ রান। সরফরাজ আহমেদদের ২১২/৬-এ থামিয়ে দিয়ে ৮৯ রানের বড় জয়ে মাঠ ছাড়ে সুপার কোহলিবাহিনী। ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে সেদিন রোহিতের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে ৫৭ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দেন লোকেশ রাহুল। তবে সমস্যা তৈরি হয় চার নম্বর পজিশন নিয়ে। কারণ ধাওয়ান-রোহিত ওপেন করায় রাহুল অথবা বিজয় শঙ্কর ওই পজিশনে বিকল্প ছিলেন। যদিও শুরুর ব্যাটসম্যানরা বড় স্কোর পাওয়ায় মাঝে দুটি ম্যাচে হারদিক পান্ডিয়াকে চারে খেলানো হয়। ফটকাটা তখন কাজেও লেগে গিয়েছিল। কিন্তু শুরুতে উইকেট পড়ে গেলে কাকে চারে খেলানো হবে? সেই প্রশ্নে দুর্বল আফগানিস্তান ম্যাচেই বড় পরীক্ষায় পড়ে ভারত! সাউদাম্পটনে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ২২৪ রান করে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অধিনায়ক বিরাট কোহলি (৬৭) ও মিডলঅর্ডারে কেদার যাদব (৫২) ছাড়া কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।
দুই ওপেনার রোহিত এবং রাহুল আউট হন ৩০ ও ১ রান করে। মিডলঅর্ডারে বিজয় শঙ্কর (২৯) আর অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনিও (২৮) ইনিংস বড় করতে পারেননি। দু’জনেই ছিলেন ভীষণ রকমের স্লো। ধাওয়ানের পরিবর্তে ঋষভ পন্থকে উড়িয়ে নেয়া হয়েছে, রিজার্ভ বেঞ্চে আছেন দীনেশ কার্তিক। সেমির পথে এগিয়ে থাকা ভারতের সামনে আরও দুটি ম্যাচ বাকি। আজ তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে পারে। তবে অল্প পুঁজি নিয়েও আফগান-বধে ভারতের জয়ের রূপকার মোহাম্মদ শামি। ভুবনেশ্বর কুমারের ইনজুরিতে বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগটাই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। হ্যাটট্রিকসহ নিয়েছেন ৪ উইকেট। ছন্দে আছেন পেস বোলিংয়ের বড় তারকা জাসপ্রিত বুমরাহ। দুই স্পিনার যুবেন্দ্র চাহাল, কুলদীপ যাদবের সঙ্গে অলরাউন্ডার হারদিক পা-িয়াও চমৎকার বোলিং করছেন। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও উড়িয়ে দেয় ভারত। ৭ উইকেটে ২৬৮ রান করার পর ক্যারিবীয়দের ১৪৩-এ অলআউট করে তুলে নেয় ১২৫ রানের বিশাল জয়। এই ম্যাচেও দুর্দান্ত বোলিং করেন শামি (৪/১৬)। ৭২ রানের গুরুত্বপূর্র্ণ ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরা হন অধিনায়ক কোহলি। ৬১ বলে অপরাজিত ৫৬ রান করে স্বরূপে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
অন্যদিকে টানা দুই হারের পর সেমির পথে এগিয়ে যেতে মরিয়া ইংল্যান্ড আজ নিশ্চয়ই নিজেদের স্টাইলে ব্যাটিং করতে চাইবে। ওপেনিংয়ে বিধ্বংসী জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ইনফর্ম জো রুট। দলের তথৈবচ অবস্থার মধ্যেও ব্যাটে-বলে দারুণ করছেন বেন স্টোকস। অধিনায়ক ইয়ন মরগানও নিজের দিনে ভয়ঙ্কর। যিনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭ ছক্কায় গড়েছেন নতুন বিশ্বরেকর্ড। ব্যাট হাতে জস বাটলার দৃশ্যপট বদলে দিতে সক্ষম। পেসার জোফরা আর্চারের ফর্ম নিশ্চয়ই ভারতকে বাড়তি দুশ্চিন্তায় রাখবে। মঈন আলী-আদিল রশীদদের নিয়ে স্পিন আক্রমণও সমৃদ্ধ। পেসার ক্রিস ওকস কখনও কখনও অলরাউন্ডার হিসেবে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ভারতকে চিন্তায় ফেলতে পারে মার্ক উডের বোলিং। বিশ্বকাপে যিনি ১৫৪ কিলোমিটার বেগে বোলিং করেছেন। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এই দলটা গড়ে ৩৫০ রানের স্কোর গড়েছে। পাওয়ার ক্রিকেটের পসরা সাজিয়ে এবার ঘরের মাঠে তারা অন্যতম ফেবারিট। কিন্তু সেই তারাই যদি টানা চার ম্যাচ হেরে সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হয়, তবে অনেকেই অবাক হবেন। রুট, মরগান, বাটলার, স্টোকস, আর্চাররা নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে আছেন।
১৯৭৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৯৯ ওয়ানডের ৫৩টিতে জিতে এগিয়ে ভারত। ইংল্যান্ডের জয় ৪১টিতে। টাই ২ ও পরিত্যক্ত ৩। আর বিশ্বকাপে সাত দেখায় সমান ২টি করে জয় দু’দলের। টাই ১টি।
