ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রসালো আমে চাঙ্গা অর্থনীতি, লেনদেন কয়েক কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৩০ জুন ২০১৯

 রসালো আমে চাঙ্গা  অর্থনীতি, লেনদেন  কয়েক কোটি টাকা

ওয়াজেদ হীরা ॥ জ্যৈষ্ঠ শেষে আষাঢ় মাস চলছে। মধুমাসের ফলের সমাহার এখনও শহরের অলিগলিতে। চলবে আরও কিছুদিন। নানা মৌসুমি ফলে ভরপুর থাকলেও চারদিকে আমের ছড়াছড়িই বেশি। ফলের বাজার, কাঁচাবাজার এমনকি ফুটপাথে, ভ্যানে দেদার বিক্রি হচ্ছে নানান রঙের আম। রাজশাহী-চাঁপাইখ্যাত সুসাধু আমের ম-ম গন্ধ শহরের অলিগলিতে। কোথাও কোথাও ‘আমের মেলা’ বসেছে। এই রসালো ফলে অর্থনীতি এখন অনেকাংশে চাঙ্গা। প্রতিদিন পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে লেনদেন হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। শুধু শহরে নয়, ফল বাজারের অর্থনীতির চাঙ্গাভাব ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামেও। সারাদেশে এ মৌসুমের ফলবাণিজ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রোজার ঈদের পর থেকেই ‘আমের রাজধানীখ্যাত’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে পাইকারি ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। ফলের বাজারও তুঙ্গে। বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে দেশের নানা প্রান্তে প্রতিদিনই যাচ্ছে শত শত আমবহনকারী ট্রাক। লেনদেন হচ্ছে ২০-২৫ কোটি টাকা। রাজধানীর পাইকারি ফলের বাজারে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নানা রঙের নানা জাতের আমের সমাহার রয়েছেই। আষাঢ়ে বৃষ্টির দেখা নেই। হাঁসফাঁস গরমে মানুষ রসালো ফল একটু বেশিই কিনছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতোমধ্যেই রসালো ফলের আমদানি অনেকটাই কমে এসেছে, শুধু আমের সরবরাহ একটু বেশি। ক্রেতারা বলছেন, সব ফলই কমবেশি পাওয়া গেলেও তুলনামূলক আমের দাম কম। বাহারি ফল নিয়ে সম্প্রতি ফল মেলাও করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তিন দিনের ফল মেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে; যার মধ্যে আমই বেশি। গতবারের তুলনায় শুধু এ মেলায়ই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি ফল। শুধু ফল খাওয়া নয় চাষেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষক। পূর্বের চেয়ে বেশি কৃষক ঝুঁকেছেন ফল চাষে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমানে ধান, পাট ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফল চাষ অনেক বেশি লাভজনক। তাই অনেকেই ফল চাষে ঝুঁকেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সারাদেশে প্রায় সাত লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে ১ কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়, যা গত ১০ বছর আগের তুলনায় ১৮ লাখ টন বেশি। চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) সারাদেশে মোট এক লাখ ৯২ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়। আশা করা হচ্ছে, এতে আম উৎপাদন হবে ২৩ লাখ ৭২ হাজার ২১৬ টন। কাঁঠাল আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৬০৪ টন। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে দুই লাখ ২৪ হাজার ২১১ টন লিচু, ৮৭ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমিতে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টন কলা, ৩৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৪৭৮ টন পেয়ারা, ১৭ হাজার ৫৮ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৬১ টন কুল, ৪৬ হাজার ৩৮ হেক্টর জমিতে ছয় লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ টন নারিকেল, ছয় হাজার ২১ হেক্টর জমিতে ৯৯ হাজার ৬২৯ টন জাম উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া ১৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমিতে চার লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৩ টন আনারস, ৪৪ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ ৯১ হাজার ২০৪ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ফলের উৎপাদন বাড়ছে, খাওয়াও বেড়েছে। ফল রফতানি যাতে বেশি করা যায় সেজন্য আমরা রফতানিকারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিদেশের স্ট্যান্ডার্ডে আমরা রফতানি করতে পারি না। সেই মান যাতে বজায় রাখতে পারি সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে আর চাষীদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা বালাইনাশকের সঠিক ব্যবহার করতে পারেন। দেশে বর্তমানে ৭০ প্রজাতির বেশি ফল চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদিত হচ্ছে ৪৫ প্রজাতির ফল। কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত ফলের ৫৩ শতাংশ বাণিজ্যিক বাগান থেকে আসে। বাকি ৪৭ শতাংশ ফলের জোগান আসে বসতভিটা ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে। কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে এখন রফতনিতে আরও বেশি পরিমাণে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে রাজশাহী, চাঁপাই থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রংপুরের নাম না জানা অসংখ্য আমে ভরে গেছে রাজধানী। যেগুলোর অনেক নামই জানেন না ক্রেতারাও। দেখতে সুন্দর বলে কেনার সময় অনেকেই নাম জানতে চায় কোন আমের কি নাম। একেকটা নাম শুনে অনেকেই ‘অবাক’ বনে যান। অফিস শেষে কিবরিয়া হাসান আম কিনতে যান বেইলি রোডে। সুন্দর রং দেখে দেখিয়ে যেন ৫ কেজি আম দিতে। আম মিষ্টি হবে কিনা নাম কি জানতে চান। বিক্রেতা বলেন আম ভাল হবে। এটি ‘বউ সোহাগী’ আম। নামটা শুনে খটকা লাগে কিবরিয়ার এটা আবার কেমন নাম! রাজধানীসহ দেশের অনেক জায়গায় নানা নামের আম বিক্রি হচ্ছে যার মধ্যে গুটিকয়েক নাম জানেন ক্রেতারা। গুটি আম, হিমসাগর, আম রুপালি, ফজলি, হাঁড়িভাঙ্গা কিংবা ল্যাংড়ার বাইরেও যে অসংখ্য আম রয়েছে তা অনেকেই জানে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে খামারবাড়ির জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে দেখা গেছে ৭৫ জাতের আম প্রদর্শন ও বিক্রি হয়েছে। অনেকেই আমের নাম মনে রাখতে মোবাইলে ছবি তুলে নিয়েছেন। এসবের মধ্যে দেখা গেছে, হিমসাগর, চোষা, বউ সোহাগী, ল্যাংড়া, নাগ ফজলি, আলতাপেটি, রানী পছন্দ, দুধ সর, আম্রপালী, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, মিস্রিভোগ, মল্লিকা, মিছরি দানা, হাঁড়িভাঙ্গা, সূর্যপুরি, কহিতুর, বালিশ আমসহ নানা নামের আম। রাজধানীর ফলপট্টি হিসেবে খ্যাত বাদামতলীর কয়েকটি পাইকারি ফলের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিদিন কারো পাইকারি ফল বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ টাকার। রুবিনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হায়দার হাওলাদার জানান এই মুহূর্তে অন্যান্য ফল বিক্রি হচ্ছে কম, আমই বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি পাইকারি ফল বিক্রি করছেন। এরকম আশপাশের সব আড়তে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা মহানগর ফল আমদানি রফতানিকারক ও আড়ৎদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির হিসেবে ১৪শ বেশি সদস্য রয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক সিদ্দিকী জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের সমিতির সবাই আম বিক্রি করেনা। আমের বাজারটাও অনেক বড়। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বাগান গড়ে উঠেছে। রাজশাহী-চাঁপাইর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিক্রিও হচ্ছে অনেক। এখন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। চাষীদের ট্রেনিং দরকার। কেননা আমে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হয় প্রচুর। এ জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ দরকার। আর ফরমালিনের নামে একসময় আম ধ্বংসই করে দেয়া হচ্ছিল এসব থেকেও বের হওয়া প্রয়োজন। সঠিক বিষয়টা সবার জানা দরকার। বাদামতলীর একাধিক ব্যবসায়ী মনে করেন কমপক্ষে ৮-১০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে এখানে। দেশী ফলের জন্য বিখ্যাত হচ্ছে ঢাকার ওয়াইজঘাট আড়ত। এখানে সব ধরনের দেশী ফল পাইকারি বিক্রি হয়। ওয়াইজঘাট ফল ব্যবসায়ী সমিতিতে সদস্য তিনশর বেশি। ওয়াইজঘাট আড়ৎদার ও ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গড়ে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা প্রতিটি আড়তে বিক্রি আছে। এই হিসেবে প্রতি আড়তে দৈনিক ৬ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সমিতির সভাপতি মোঃ মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশী ফলে নানা অপবাদের কারণে আমরা লোকসানে পড়ি। বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে পাশর্^বর্তী দেশের ফলকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এসব অপপ্রচার বন্ধ হওয়া উচিত। আম কলায় নানা ধরনের ফরমালিন ব্যবহার করা হয় এসব পুরোটাই মিথ্যা এবং অপপ্রচার বলেন তিনি। দীর্ঘদিন ফল ব্যবসায় জড়িত আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ফলপট্টিতে সারাবছরই ফল বিক্রি হয়। এ সময় সব দোকানেই বিক্রি জমজমাট থাকে। কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে ফলের মৌসুমে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন এখানে দেশের নানা জায়গা থেকে মানুষ আসে। আর বিভিন্ন ফল বিক্রি হয়। পাইকারি ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন সকালে ফলের বাজার সড়গরম থাকে। যদিও রাত নয়টা পর্যন্তই ফলের বাজার খোলা। তবে সকালেই বেশি জমজমাট। জাহাজে করে বিভিন্ন পরিবহনে প্রতিদিনই ফল আসছে। এদিকে পাইকারি বাজারের মতো চাঙ্গা এখন খুচরা বাজারাও। খুচরা ক্রেতারা প্রতিদিনই কম বেশি ফল কিনছেন। এর মধ্যে আমই বেশি। দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকা। এক বিশ্লেষণ তথ্য থেকে জানা গেছে গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ ফল কিনছেন। কম পক্ষে ১০০ টাকা হিসাব ধরে দেখানো হয়েছে প্রতিদিন শুধু রাজধানীতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার ফল কিনেছেন সাধারণ মানুষ। যদিও এই বিশ্লেষণের কয়েকগুণ বেশি ফল কিনছেন। কেননা রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ আম কিনতে গেলে কমপক্ষে ২ কেজির নিচে আম কেনে না। আর আম ওজনে বেশি হওয়ার কারণে ৩/৪টি আমেই এক কেজি হয়ে যায় ফলে কিনতে গেলে বেশিরভাগ সময়ই ৪ থেকে ৫ কেজি করে কেনেন ক্রেতারা। আর দামও সাদ্যের মধ্যে হওয়াতে অন্যান্য ফলের চেয়ে রসালো ফলে আমে আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। এদিকে এই ভরা মৌসুমে ঢাকা শহরের স্থানে স্থানে বসেছে আমের মেলা। একেকটি আমের মেলা সেজেছে থোকা থোকা আমের ছবি সংবলিত ডিজিটাল পোস্টারে। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত জমজমাট এসব মেলা। মেলাকে আকর্ষণ করতে ‘সরাসরি বাগানের আম’ ‘রাজশাহী/চাঁপাইর বাগানের আম’ ইত্যাদি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। প্রধান সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠায় ————পথচারী মেলায় প্রবেশ করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের ফল। এসব মেলায় মিলছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রংপুর, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানান আম। জাতভেদে দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। বাজারে নতুন আসা ব্যানানা ম্যাঙ্গোর দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ধানম-ি ৮, ধানম-ি ১৫, জিগাতলা, ফার্মগেট এয়ারপোর্ট রোডের মনিপুরিপাড়া ১ নম্বর গেটসংলগ্ন, মিরপুর ৬০ ফুট রোডে, মহাখালী ডিওএইচএস, সায়েদাবাদ ও কলাবাগান মাঠসংলগ্ন আমের বাজার ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সুপার শপে ভরে গেছে বিভিন্ন আমে। রাজশাহীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের পর থেকে পুরোদমে জমে ওঠে রাজশাহীর আমের বাজার। ঈদের পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের আগমনে রাজশাহীর আম বাজার চাঙা হয়ে উঠে। এখন প্রতিদিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০-৬০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন ল্যাংড়া আম প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকায়, হিমসাগর ১৭০০ থেকে ২৩০০ টাকায়, ক্ষিরসাপাত ২৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, লখনা ও গুঠি আম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে গুটি আম, গোপালভোগ ২০ মে, রানীপছন্দ ২৫ মে, ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, লখনা ২৬ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ফজলি ১৬ জুন থেকে পাড়া শুরু করেন। আশ্বিনা ১৭ জুলাই থেকে চাষীরা গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করবেন। বাঘা উপজেলায় কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় আম বাগান রয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। উপজেলার মানুষ প্রতি বছর আম মৌসুমে আয় করেন ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকা। বাঘায় গুটি আম পাইকারি হিসেবে প্রতিমণ সাড়ে ৮শ থেকে সাড়ে ১২শ টাকা, ক্ষিরসাপাত ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা, গোপালভোগ ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা, ল্যাংড়া ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা, লখনা সাড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজশাহীর আম ঢাকা, নরসিংদী, ভৈরব, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ফেনীসহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কেনাকাটা হয়। কিন্তু এখন এ আম আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। ফলে চাষীদের মধ্যে আম রফতানির বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বাঘার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতানের মতে, বাঘা উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। এ মৌসুমে ৩৩ টন আম বিদেশে রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বিদেশে আম রফতানি করতে হলে ২৬ শর্ত মানতে হয়। ব্যাগিং হচ্ছে ২৬ শর্তের একটি। তবে ব্যাগিং করা না হলেও আমের মান ভাল হলে বাইরে রফতানি করা যায়। জানা গেছে, সব শর্ত মেনে গত বছর (’১৮ সালে) ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২৫ টন আম রফতানি করেছেন রাজশাহীর ১৪ ব্যবসায়ী। ’১৭ সালে রফতানি করেছিলেন ৩০ টন। চাঁপাইয়েও আমের বাজার জমজমাট। আমনির্ভর অর্থনীতি পাল্টে দিচ্ছে গ্রামীণ জনপদের দৃশ্যপট। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবারও প্রচুর আম উৎপাদন হয়েছে। দেশের বৃহত্তম কানসাট সদরঘাট ও ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশনের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা অনেক বেড়ছে। এসব বাজার ও জেলার বিভিন্ন আম বাগান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩শ ট্রাক আম দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানিয়েছেন, কানসাট আমবাজারে প্রতিদিন ১৫-২০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। সব বাজার মিলিয়ে চাঁপাই থেকে দিনে ২৫-৩০ কোটি টাকার আম বাণিজ্য হচ্ছে। দামও ভাল পাচ্ছেন চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা বলেন, কৃষি বিভাগের নানা উদ্যোগ এবং সরকারী নজরদারিতে আমে বালাইনাশক ব্যবহার গত কয়েক বছরে কমেছে। যদিও এ অঞ্চলের চাষীরা আম উৎপাদনে রোগবালাই ও ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বালাইনাশক ছাড়া আমে অন্য কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক (ফরমালিন, কেমিক্যাল) ব্যবহার করেন না। দেশী ফল নিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন গুটিকয়েক মানুষের অতিরিক্ত মুনাফার জন্য কিছু দিলেও দিতে পারে, অধিকাংশ ব্যবসায়ীই সঠিকপথে ব্যবসা করেন। আম জাম কলা কিংবা তরমুজে কোন ক্ষতিকর উপাদান কখনই দেয়া হয়না। সচেতন ব্যক্তিদেরও ভুল ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। দেশী ফলের কদরও করছেন এখন ক্রেতারা।
×