ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধনী-গরিব বৈষম্য দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে ॥ বিরোধী উপনেতা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩০ জুন ২০১৯

 ধনী-গরিব বৈষম্য দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে  হবে ॥ বিরোধী উপনেতা

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ অর্থবছর পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ভরা বর্ষা মৌসুমে আমাদের অর্থবছর শুরু হওয়ায় প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয় না। এতে প্রত্যেক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এই দিকটি বিবেচনা করে অর্থবছর শীতকালে শুরু করা যায় কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। কর্মসংস্থান না হলে বিনিয়োগ হবে না, বৈষম্য কমবে না। আর ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু দুর্বলতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক ভাল দিক রয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, এবারের বাজেটের ওপর রেকর্ড সংখ্যক সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, আমরা সমৃদ্ধি সোপানের সিঁড়ি বেয়ে আরও উপরে উঠতে চাই। বাজেটে গরিব-ধনীর বৈষম্য যাতে হ্রাস পায় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। রওশন এরশাদ বলেন, রাজস্ব আদায় বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে নগদ টাকা নেই। সেখান থেকে টাকা নিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে গেলে বেসরকারী খাত বিনিয়োগের জন্য টাকা পাবে না। ফলে বিনিয়োগনির্ভর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ঋণপ্রবাহে সমস্যা হবে। ভ্যাট আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন যে ভ্যাট আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে জটিলতা দেখা দেবে। এতে রাজস্ব আদায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে তিনি বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়ার প্রস্তাব করেন। শিক্ষা খাত প্রসঙ্গে বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, বাজেটে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাতে শিক্ষার মান অর্জিত হবে না। শিক্ষার মান নিয়ে মন্ত্রীর নিজেরও অসন্তোষ আছে। জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা দেশ সম্পর্কে জানে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। শিক্ষার মান অর্জনে তিনি বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার প্রস্তাব সমর্থন করেন। তিনি বলেন, সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষার কারণে দেশে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। বিদেশী কোম্পানিতে দেশী শিক্ষিতরা কাজ পাচ্ছে না। তাই শিক্ষার মান উন্নয়নে তিনি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে তিনি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও সরকারী হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়লে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। তাই স্বাস্থ্য খাতে বেশি নজর দিতে হবে। এ খাতে দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের প্রণোদনা দিতে হবে। বড় বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। অন-লাইনে বেচা-কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রয়োগ করা হলে অনেক তরুণ-তরুণী জড়িত রয়েছে তারা নিরুৎসাহিত হবে। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান না হলে বিনিয়োগ হবে না, বৈষম্য কমবে না। বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে। বিরোধী দলের নেতা বলেন, এডিপিতে ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বন্দী, ঠিকাদারদের হাতে বন্দী থাকায় প্রকল্পে খরচ বাড়ছে। এডিপিতে গৃহীত প্রকল্পগুলো যাতে ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই অর্থবছরের সময় পরিবর্তন করা উচিত। বর্ষা মৌসুমে অর্থবছর শুরু হয়। সে কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনে অর্থবছর শীতকালে শুরু হলে উন্নয়ন আরও বাড়বে। আর টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করবে। রওশন এরশাদ বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান বিশ্বের অনেক দেশেই হয়। এই সুযোগ না দিলে কালো টাকার মালিকরা দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে অর্থ পাচার করবে। নারীদের জন্য পৃথক ব্যাংক সৃষ্টির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হবে, অন্যদের স্বাবলম্বী করবে। তিনি বলেন, কৃষক ধান উৎপাদন করে মাথায় হাত দিয়েছে। তারা উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না। ক্ষুব্ধ কৃষকরা ধান পুড়িয়ে দিচ্ছে। কৃষক যদি ধান না ফলায় তবে আমরা খাব কি? তিনি বলেন, এক টাকার কাজ এক টাকাতেই যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিবছর বড় বড় বাজেট দেয়া হয়, কিন্তু যতটুকু আয় সেভাবেই বাজেট দিতে হবে। স্বপ্ন বাস্তবায়ন সীমার মধ্যে রাখতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে এদেশের এই উত্তরণ হয়েছে সবার সহযোগিতায়।
×