ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩ উইকেটে ঘাম ঝরানো জয়

আফগানদের হারিয়ে সেমির সম্ভাবনায় পাকিরা

প্রকাশিত: ১০:১১, ৩০ জুন ২০১৯

আফগানদের হারিয়ে সেমির সম্ভাবনায় পাকিরা

রুমেল খান ॥ দলটি যেহেতু ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, সেহেতু তাদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই মুশকিল। এজন্যই হয়তো শনিবার হেডিংলির লিডসে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপের ৩৬ নম্বর ম্যাচে সহজ ম্যাচটা দারুণ ঘাম ঝরিয়েই ৩ উইকেটে জিতলো পাকিস্তান। এই জয়ে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করল পাকিস্তান। পয়েন্ট টেবিলে ছয় থেকে দুই ধাপ উন্নতিতে চারে উঠে এসেছে তারা। তাদের নিচে পড়ে গেল স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ। ৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট যথাক্রমে ৮ এবং ৭। ৮ খেলায় এটা পাস্তিানের চতুর্থ জয়। পয়েন্ট ৯। তাদের ওপরে আছে নিউজিল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। পক্ষান্তরে ৮ ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই হারের স্বাদ পেল অভাগা আফগানিস্তান। চলমান আসরের একমাত্র দল তারাই, যারা এখনও জয়হীন। হারলে টুর্নামেন্টে থেকে প্রায় ছিটকে যেতে হবে- এমন শঙ্কা নিয়েই প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শাহিন শাহ আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম ও ওয়াহাব রিয়াজের আগুন ঝড়া বোলিংয়ের মুখে দাঁড়াতেই পারেনি গুলবাদিন নাইব বাহিনী। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৭ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানরা। জবাবে ২ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩০ রান করে ৩ উইকেটের জয় কুড়িয়ে নেয় ১৯৯২ আসরের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ম্যাচসেরা হন বিজয়ী দলের ইমাদ ওয়াসিম। ২২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই হোঁচট খায় পাকিরা। ওপেনার ফখর জামানকে (০) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আফগান বোলার মুজিব উর রহমান। এ অবস্থায় অপর ওপেনার ইমাম-উল-হকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান বাবর আজম। ধীরে ইনিংস মেরামত করতে শুরু করেন তারা। ১৬ ওভারে দলের রান যখন ৭২, তখন ইমামকে (৩৬) স্ট্যাম্পিংয়ের শিকারে পরিণত করে মোহাম্মদ নবী। খানিকবাদেই বাবরও (৪৫) ইমামের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাকেও আউট করেন নবী। দলের রান তখন ১৭.২ ওভারে ৪/১২১। এরপর ৩৯ ওভারের মধ্যে আউট হন হারিস সোহেল (২৭) এবং অধিনায়ক-উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদ (১৮)। হারিসকে আউট করেন রশিদ খান। আর সরফরাজ হন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট। দলের স্কোর তখন ৬/১৫৬। রীতিমতো জয়ের গন্ধ পাচ্ছে তখন আফগানরা। আর হারের শঙ্কায় কাঁপছে পাকিস্তান। এই অবস্থা থেকে দলকে দারুণভাবে জয়ের বন্দরের কাছাকাছি নিয়ে যান ইমাদ ওয়াসিম এবং শাহাব খান। দেখে-শুনে প্রতিটি বল খেলার পাশাপাশি বাজে বলকে সুযোগ পেলেই শায়েস্তা করে মাঠের বাইরে পাঠাতে থাকেন তারা। দলের সংগ্রহশালা যখন দু’শো ছাড়িয়েছে, তখনই আবার ছন্দপতন- ডাবলস নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান শাদাব (১১)। দলের রান তখন ৭/২০৬ (৪৬.৪ ওভারে)। এই অবস্থায় জমে ওঠে খেলা। তৈরি হয় টান টান উত্তেজনা। এই প্রথম সত্যিকারের চাপ সৃষ্টি হয় পাকিস্তানের ওপর। কেননা আস্কিং রান রেট তখন ৬-এর ওপরে চলে গেছে, তার ওপর ক্রিজে ইমাদ ছাড়া স্বীকৃত কোন উইলোবাজ নেই। শেষ ১২ বলে দরকার হয় ১৬ রানের। রশিদের বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে অনেকটাই জয়ের কাছকাছি চলে যায় পাকিরা। এই ওভারে ১০ রান তুলে নেন ওয়াহাব-ইমাদ। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৬ রানের। আফগান অধিনায়ক নাইব বোলিং করেন। শেষ ৩ বলে ২ দরকার, এ অবস্থায় ইমাদ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ইমাম অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে (৫৪ বলে, ৫টি বাউন্ডারি)। আর ওয়াহাব নট আউট থাকেন ১৫ রানে। ৯ বলে ১ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান তিনি। তিন উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় পাকিস্তান। আর চোখের জলে মাঠ ছাড়ে কাবুলিওয়ালার দেশ আফগান ক্রিকেটাররা। বিফলে যায় নবী (২/২৩), মুজিব (২/৩৪) এবং রশিদের (১/৫০) বোলিং। এর আগে আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক নাইব। কিন্তু টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সূচনাটা শুভ হয়নি আফগানদের। দলীয় ২৭ রানে আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। খেলার পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে সরফরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন নাইব, ১৫ রানে। এর পরের বলেই ইমাদ ওয়াসিমের হাতে শূন্য রানে ধরা পড়েন হাশমতউল্লাহ শহিদি। এরপর দেখে-শুনেই খেলছিলেন ওপেনার রহমত শাহ ও ইকরাম আলিখিল। কিন্তু দলীয় ৫৭ রানে ইমাদ ওয়াসিমের বলে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত শাহ। তিনি করেন ৪৩ বলে ৩৫ রান। ৫৭ রানে ৩ উইকেট হারালে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন ইকরাম আলিখিল ও আসগর আফগান। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আফগানদের ইনিংস। দু’জন মিলে গড়েন ৬৪ রানের জুটি। তাদের এ জুটিতে ভাঙ্গন ধরান শাদাব খান। দলীয় ১২১ রানে তার বলে বোল্ড আউট হন আসগর আফগান। আউট হবার আগে তিনি করেন ৪২ রান। এরপর আসগর আফগানের পথেই হাঁটেন ইকরাম আলিখিল। তিনি ব্যক্তিগত ২৪ রানে ইমাদ ওয়াসিমের বলে মোহাম্মদ হাফিজের হাতে ধরা পড়েন। তখন দলের স্কোর ৫/১২৫ (২৭ ওভারে)। এরপর মোহাম্মদ নবী এবং নজিবুল্লাহ জারদান হাল ধরার চেষ্টা করেন। নবী ১৬ রান করে দ্রুত আউট হয়ে গেলেও (বোল্ড হন ওয়াহাব রিয়াজের বলে), জারদান ৫৪ বলে ৪২ রানের কার্যকর একটি ইনিংস উপহার দেন। তাকে বোল্ড করেন শাহিন আফ্রিদি। দলের রান তখন দু’শো ছাড়িয়েছে (৪৪.৪ ওভারে ৭/২০২ রান)। এরপর লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দলের ভান্ডারে ২৫ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি। পাকি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন আফ্রিদি (৪/৪৭)। এছাড়া আফগানদের রানের চাকা আটকে রাখতে ভূমিকা রাখেন ওয়াহাব রিয়াজ (২/২৯), ইমাদ ওয়াসিম (২/৪৮) এবং শাদাব খান (১/৪৮)। অপর তারকা পেসার মোহাম্মদ আমির বিস্ময়করভাবে কোন উইকেটই পাননি (০/৪১)! হুঙ্কার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল আফগানরা। কিন্তু এখন কাগুজে বাঘ হয়ে গেছে তারা। নখ-দন্তহীন বোলিং ও ব্যাটিংয়ে হতশ্রী অবস্থা তাদের। তবে এশিয়ার দলগুলোর সঙ্গে যেন তারা দুর্বার। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও লড়াই করেছে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে তেমন খারাপ খেলেনি। শেষদিকে কয়েকটি ম্যাচে কিছুটা হলেও নিজেদের ফিরে পেয়েছে তারা। টানা ৮ ম্যাচ হেরে এখন হাস্যকর দলে পরিণত হলেও শনিবার পাকিদের তারা প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাব ও ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় জয়ের মুখ দেখা হয়নি তাদের। বিশ্বকাপে দু’দলের এটাই ছিল সাক্ষাত। এর আগে এক টি২০ এবং ৩ ওয়ানডে হয়েছে দু’দলের মধ্যে। প্রতিবারই জিতেছে পাকিস্তান। সবগুলোই এশিয়া কাপে। সেমির স্বপ্নে মরিয়া পাকিদের বাগে পেয়েও হারাতে না পারাটা বহুদিন তড়পাবে আফগানদের।
×