ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি কি এবার সংস্কারের পথে হাঁটবেন?

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ৩০ জুন ২০১৯

মোদি কি এবার সংস্কারের পথে হাঁটবেন?

ভারতের নয়া অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীথারামন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গতানুগতিক ধারার বাইরের একজন ব্যক্তিত্ব। পঞ্চাশ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর থেকে নির্মলাই হলেন দেশটির প্রথম একজন মহিলা অর্থমন্ত্রী। তিনি নিজে অর্থনীতিবিদও বটে। তবে বিজেপির বেশিরভাগ শীর্ষ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার পার্থক্য হলে তিনি দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগত এবং তামিলনাড়ুতে বড় হয়ে উঠেছেন। বলাবাহুল্য সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজেপির প্রবল জয়যাত্রাকে যে গুটিকয়েক বড় রাজ্য প্রতিহত করেছিল তামিলনাড়ু তার অন্যতম। বলা হচ্ছে যে নির্মলা সীথারামন রাজনীতির ঐতিহ্যগত মূল কেন্দ্রগুলোর বাইরের বলয়ে ভারতীয়দের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক। কিন্তু তিনি কি তাদের সেই সব আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবেন? যেদিন তাঁকে অর্থমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল সেদিনের পরিসংখ্যানগত তথ্য হলো বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ২০১৪ সালে মোদি প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওটাই ছিল মন্থরতম প্রবৃদ্ধি। তা ছাড়া ২০১৮ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হওয়া বছরটিতে ভারতে বেকারত্ব বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অংশত নির্ভর করছে ব্যাংকগুলোর ওপর, যেগুলো ইন্দিরা গান্ধীর সময় রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়েছিল। তবে এই ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগ মন্দ ঋণের ভারে ন্যুব্জ। অবশ্য মন্দ ঋণের ভাগ হ্রাস পেতে শুরু করেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রক পদে অধিকতর উদারপন্থী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ার পর বেশকিছু সমস্যাকবলিত ব্যাংককে তাদের ঋণদান কার্যক্রম সম্প্রসারণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক গত ৬ জুন এ বছর তৃতীয়বারের মতো সুদের হার কমিয়েছে। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো বন্ড বিক্রির মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের অর্থায়ন করে গৃহ ও শিল্পে ঋণের প্রবাহ অব্যাহত রেখেছে। গভীরতর অর্থনৈতিক সংস্কারের সম্ভাবনার চেয়ে চক্রাকারে আবর্তনশীল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে পূর্বসূরি তরুণ জেটলি যে মাত্রায় ক্ষমতা ভোগ ও প্রয়োগ করেছিলেন সেই একই ক্ষমতা নির্মলা খুব সম্ভব ভোগ করতে পারবেন না। বলাবাহুল্য এই তরুণ জেটলি জাতীয় রাজনীতিতে মোদির আগমনের পথ সুগম করেছিলেন। ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে রাজনীতি থেকে তার বিদায় গ্রহণের ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্ভবত অর্থনৈতিক বিষয়ে নিবিড় আগ্রহ প্রদর্শন করবেন। এটা যে ভাল ফল বয়ে আনবে তা অবশ্য নয়। মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সে সময় বড় বড় কর্পোরেশনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ আদায় করে নিয়েছিলেন এবং সিভিল সার্ভেন্টদের নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় ঠিক তেমনটি করা অতখানি সম্ভব নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রয়োজন পরোক্ষ পদ্ধতি অনুসরণ করাÑ যেমন সঠিক উদ্যোগ সৃষ্টি করা এবং সঠিক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করা। ২০১৪ সালে মোদির প্রথম বিজয় অর্জনের পর উদারপন্থীরা আশা করেছিল যে নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন বাজারমুখী যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার কলাকৌশলের ওপর নির্ভর করে শ্রম ও ভূমি আইন উদারভিত্তিক করে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে দেখা গেল তিনি বাজারপন্থী না হয়ে শিল্প ও ব্যবসা মহলের চোখে হয়ে গেলেন দরিদ্রজনপন্থী যিনি ক্ষুদে কৃষকদের নগদ অর্থ সাহায্য দেয়ার মতো বেশ কিছু কল্যাণমুখী কর্মসূচী নিয়েছিলেন। স্কিমগুলো নেয়ার পেছনে মোদি সরকারের যত না জনকল্যাণগত মনোভাব কাজ করেছিল তার চেয়ে বেশি কাজ করেছিল এই আশঙ্কা যে কর্মসূচীগুলো না নেয়া হলে বিরোধী মহলের তরফ থেকে নানা অপবাদ শুনতে হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মোদি সরকারকে ‘স্যুট বুট কি সরকার’ অর্থাৎ অভিজাত কর্পোরেশনগুলোর সরকার আখ্যায়িত করার পর এই সরকার শিল্পের কাজে জমি হুকুমদখলের প্রক্রিয়া সহজতর করার উদ্যোগ বহুলাংশেই বাদ দিয়ে বসেছিল। সরকারী খাতের ব্যাংকগুলোকে তাদের মন্দ ঋণ খারিজের ব্যাপারে সহায়তা করতে এই সরকার মন্থরতার পরিচয় দিয়েছে যার অংশত কারণ ছিল এই যে সরকার তার অন্তরঙ্গ পুঁজিপতিদের প্রতি নমনীয় এমন কোন ভাব দেখাতে চায়নি। সরকারের এই কৌশল কাজে দিয়েছিল। দ্বিতীয়বার ভূমিধস বিজয় তারই প্রমাণ। তাই সেই কৌশল পরিত্যাগ করার তেমন কোন সঙ্গত কারণ এই সরকারে নেই। তবে এবারের বিজয় থেকে মোদি সরকারের বিরোধী দলকে ভয় পাওয়ার আর কোন কারণ থাকল না। বিরোধী শিবিরকে নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিধ্বস্ত করে দেয়ার পর মোদি সরকার এখন সংস্কারের পথে যেতে পারবে। এ ব্যাপারে আর কোন জড়তা এই সরকারের থাকার কথা নয়। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×